যেভাবে মায়ের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক খারাপ হয়
রান্না, ঘরদোর সামলানো, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা, নিজের চাকরি—সবমিলিয়ে কর্মজীবী একজন মায়ের হাতে সময় কমই থাকে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুকে শাসন করতে বাধ্য হন মায়েরা।
সন্তানের কল্যাণে স্নেহময়ী মা কখনো কখনো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। মায়ের এমন রূপ শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে মায়ের সঙ্গে সন্তানের দূরত্বও সৃষ্টি হয়। শিশুর আচরণে মায়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবও প্রকাশ পায়।
রান্না, ঘরদোর সামলানো, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের সেবা, নিজের চাকরি—সবমিলিয়ে কর্মজীবী একজন মায়ের হাতে সময় কমই থাকে। মা যখন শিশুকে গোসল করানোর সময় পেলেন, সে হয়তো তখন খেলায় মত্ত। কিংবা পড়তে বসার সময় সে কার্টুন নিয়ে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে শিশুকে শাসন করতে বাধ্য হন মায়েরা। এতে শিশুর মন খারাপ হতে পারে, হতে পারে মায়ের ওপর অভিমান। কেউ কাঁদে, কেউ ভয় পায়, কেউ আবার মাকে ‘ভিলেন’ও মনে করে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েই বলছিলেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রশিদুল হক।
বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন
পৃথিবীতে সন্তানের সব থেকে বড় আস্থার জায়গা ‘মা’। স্বাভাবিকভাবেই সারা দিনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার কথা মাকে বলতে চায় শিশু। শিশুর কথা শুনুন। তাকে সময় দিন। গল্প করুন। উৎসাহ দিন। তার ভালো লাগার কাজগুলো করার সুযোগ দিন। আপনি যখন কাজে ব্যস্ত, তখন কিন্তু সে আপনার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। আপনাকে কাছে পেলেই যদি সে ‘এখনই পড়তে বসো’, কিংবা ‘এত বেলা হয়ে গেল, এখনো গোসল করোনি কেন?’ জাতীয় বাক্য শোনে, তাহলে আপনি তার কাছে ‘ভিলেন’ বা শত্রুর প্রতিরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। একরোখা এবং জেদি হয়ে উঠতে পারে আপনার শিশু। বরং সম্পর্কের ভিত এমন হতে হবে, যাতে আপনাকে খুশি করার জন্য হলেও সে সময়ের কাজ সময়ে করে নেয়। যা-ই ঘটুক, সে যেন অনুভব করে, তার প্রতি আপনার ভালোবাসার কমতি নেই। সে যাতে বুঝতে পারে, আপনার কথাগুলো তার ভালোর জন্যই বলা।
বলার ধরন
শিশুর ভুল ধরা বা সমালোচনা করা উচিত নয়। শাসন হোক আদরমাখা। চাপ দেবেন না, বুঝিয়ে বলুন। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। রাগ করবেন না। ধমক দেবেন না। মারধর করবেন না। তার দৈনন্দিন কোনো কাজের সময় হয়ে গেলে সুন্দরভাবে বলুন। নিয়মানুবর্তিতা তৈরি করতে হবে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে। দু-এক সময় শিশুর ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়মের ব্যত্যয়ও ঘটাতে হবে।
মান-অভিমান এবং অনুরাগ
শিশু কথা না শুনলে তাকে বুঝিয়ে দিন যে তার প্রতি আপনার অভিমান হয়েছে। সেই সময় সে কাছে এলেও তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখতে পারেন। তবে এটা সাময়িক। কেবল শিশুকে বুঝিয়ে দিন, সে কথা না শোনায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন। কথা শুনে নিলে তার পছন্দের টুকিটাকি উপহারও দিতে পারেন। এতে সে আপনার কথা মেনে চলার আগ্রহ পাবে।