গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সেদিন রাতে সে পালিয়ে আসতে পারেনি
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ছয় বছরের প্রেমের সম্পর্ক। দুই পরিবারে জানাজানিও হয়েছে। কিন্তু কোনো পক্ষই আমাদের বিয়েতে রাজি হয়নি। আমার বয়স ২৬ বছর। ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। বেতন ৩০ হাজার টাকা। মেয়ের বয়স ২০ বছর। এ অবস্থায় মেয়েটির পরিবার তাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাইছিল। তাই আমরা দুজন মিলে গোপনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। পরিকল্পনামতো মেয়েটির পালিয়ে ঢাকায় আসার কথা ছিল। সেভাবেই আমি একটা বাসাও দেখে রেখেছিলাম, বিয়ে করে যে বাসায় আমরা উঠব। কিন্তু গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেদিন রাতে সে পালিয়ে আসতে পারেনি। বাড়ি থেকে সে বেরিয়েছিল, কিন্তু গাড়ির অভাবে আসতে না পারায় বাড়ির লোকজনের হাতে ধরা পড়ে যায়। বিয়ের জন্য যে পাত্র দেখা হয়েছিল, পরদিন ভোরেই তার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। এক রাতেই সব ওলটপালট হয়ে যায়। আমি যতক্ষণে এসব জানতে পারি, ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে।
বিয়ের পর মেয়েটি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যেকোনো সময় সে আমার কাছে চলে আসতে চায়। স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে মেয়েটি এখন আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। আমার করণীয় কী? বিয়ে করলে আইনি কোনো ঝামেলা হবে কি না? দয়া করে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, প্রথম স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে সেই দ্বিতীয় বিয়ে আইনত অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে তাঁকে অবশ্যই আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে যথাযথ আইন মেনে বিবাহবিচ্ছেদ করতে হবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রথম স্বামীকে তালাকের নোটিশ প্রদান করে ৯০ দিন ইদ্দত পালন শেষে তালাক কার্যকর হয়। এই আইনগত বিধান মেনে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করা যেতে পারে।
এই বিধান লঙ্ঘন করে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন, সে ক্ষেত্রে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্ত্রী ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন, সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে।
আইনসংগত কোনো কারণে স্ত্রী যদি বিবাহবিচ্ছেদ চান, তাহলে তাঁর এ অধিকার রয়েছে। তাঁকে জোর করে সংসার করানো সম্ভব না।
কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে স্ত্রীকে যদি তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়ে থাকে, তাহলে তিনি সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কিছুটা জটিলও বটে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, তালাক দিতে চাইলে তাকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাকগ্রহীতাকে ওই নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে, তখনই/পরবর্তী সময়ে/যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডিসহ (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) পাঠালে ভালো হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে। যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক। প্রথম স্বামীর সঙ্গে যথাযথ আইন মেনে বিবাহবিচ্ছেদ করার পর আপনি তাকে বিয়ে করতে পারবেন। জটিলতা এড়াতে এ বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
চিঠি পাঠানোর ঠিকানা
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা : প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA