বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর যেভাবে নতুন করে পথচলা শুরু করবেন
দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব হয়তো সামান্য কথা–কাটাকাটি বা ঝগড়া মনোমালিন্যে নষ্ট হয়ে গেল। গল্প-আড্ডা সব বন্ধ। মনে মনে কষ্ট পাচ্ছেন। অবসরে, অফিসে, ক্লাসে, আড্ডায় বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার উপস্থিতি আপনাকে অস্বস্তি ও দোটানায় ফেলছে। তবে আবার যোগাযোগ করতেও চাইছেন না। জীবনের এই খারাপ সময় কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছেন।
এমন পরিস্থিতিতে যেসব কাজ করতে পারেন—
মনঃকষ্ট কমাতে কিছুটা সময় দিন
বন্ধুর সঙ্গে হয়তো সুখে-দুঃখে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন; কিন্তু কোনো এক অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে দীর্ঘদিন মনোমালিন্য চলছে। প্রথমত, ঘটনাটি বুঝতে ও উপলব্ধি করতে কিছু সময় নেওয়া উচিত। সেই মুহূর্তের অবস্থা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা থাকা জরুরি। পরিস্থিতি বোঝার জন্য হলেও নিজের একান্ত কিছু সময়ের প্রয়োজন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নিন
অনেক সময়ই স্কুল-কলেজজীবনের বন্ধুত্বকে আমরা চিরস্থায়ী ভেবে নিই। দিনের পর দিন বন্ধু বা তার পরিবারের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়া, খেতে যাওয়ার মতো আরও কত কিছু করা হয়। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কারণে সেই বন্ধুত্ব আর স্থায়ী না হতেই পারে। অনেক সময় হয়তো এক শহরে থাকা হয় না, থাকলেও কাজের চাপে সময় মেলে না। অবস্থা যা-ই হোক না কেন, বিষণ্ন মনে আক্ষেপ না করে পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত। জীবনের পথ পাল্টায়; সঙ্গে আশপাশের মানুষজন। প্রকৃতির এই নিয়ম মেনে নিয়ে সামনে পথ চলতে হবে। বন্ধুত্বের সেই সময়কে মনে করে বসে না থেকে, নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। যে কাজে আনন্দ খুঁজে পান, মনটা সেই কাজের দিকে এগিয়ে নিন।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন
আপনার আশপাশের সাহায্যকারী অন্য সব মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শিখুন। হয়তো এর মধ্যে আপনার একটি দিন খুব বাজে কেটেছে, সেই ঘটনাগুলো শেয়ার করার জন্য হয়তো মনে মনে আপনার বন্ধুকেই খুঁজবেন। মন খুলে কথা বলার জন্য বন্ধুর অবর্তমানে বাড়ির অন্য মানুষজনকে বেছে নিন। আপনার সঙ্গী বা কোনো সহকর্মীর সঙ্গেও শেয়ার করতে পারেন। বড় হওয়ার পর আমাদের সবার ব্যস্ততা আর কর্মজগৎ পাল্টে যায়। চাইলে আড্ডা দেওয়ার জন্য বন্ধুদের সব সময় কাছে পাওয়া যায় না, তাই আপনার আশপাশে আপনাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন।
পরনিন্দা–পরচর্চা কমান
দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব মানুষের জীবনের একটা অভ্যাসের মতো। হুট করে কোনো ঘটনার কারণে এর ইতি ঘটলে অবশ্যই কষ্ট লাগবে। বন্ধুত্বের ইতি ঘটলে, সে বিষয়ে অবশ্যই দুই পক্ষের হাত থাকবে। হয়তো কেউ বেশি দোষী, কেউ কম। সে ক্ষেত্রে আপনার যদি কম দোষও থেকে থাকে; আপনি নিজের দোষ স্বীকার করে নিজেকে ক্ষমা করে দিন। এর মাধ্যমেই আপনি অতীত ভুলে, এগিয়ে যেতে পারবেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বন্ধুত্বের সমাপ্তি ঘটলেও আপনার বন্ধুর ব্যাপারে ইনিয়ে-বিনিয়ে বন্ধুমহলে বাজে বা মিথ্যা মন্তব্য করে বেড়াবেন না।
সমাপ্তির চেয়ে সমাধান ভালো
বন্ধুদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই মনোমালিন্য হয়, এটা সাধারণ বিষয়। তবে পরিস্থিতি যদি খুবই গুরুতর হয়, সে ক্ষেত্রে আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি কি আপনার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে আরেকবার সুযোগ দিতে চান; নাকি সম্পর্কটি আপনার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে? কিছুদিন নিজেকে একান্তে সময় দিন। আত্মোপলব্ধি করে নিজেই এর সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যদি মনে করেন, উপরের সব উপায় আপনাকে মানসিকভাবে বন্ধুত্বের বন্ধন ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে না, তাহলে সম্পর্ক ঠিক করতে আপনি উদ্যোগী হোন। যদি মনে করেন, আপনি আসলেই তাকে সবকিছুতে মিস করছেন, তাহলে তাকে আরেকটিবার সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন। অনেক দিনের বিরতির পর হয়তো দুজনেরই নতুন উপলব্ধি হবে।
সূত্র: ফেমিনা