ভাঙা বন্ধুত্ব জোড়া লাগাবেন কীভাবে

বন্ধু ছাড়া কি আর জীবন চলে?
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

আর সব সম্পর্কের মতো বন্ধুত্বেও আছে উত্থান-পতন। কখনো গলায়-গলায় বন্ধুত্ব, কখনো আবার যোগাযোগের অভাবে সম্পর্কের তার আলগা হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সম্পর্ক হয়ে পড়ে শীতল। ভালো-মন্দ মিলিয়েই বন্ধুত্ব। কখনো কখনো ছোট্ট একটি কারণে ভেঙে যেতে পারে বহু বছরের সম্পর্ক। আস্তে আস্তে তৈরি হওয়া দূরত্ব থেকে কখন যে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটে, অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। মতের অমিল, কথা-কাটাকাটি, দূরত্ব থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্কে অগোচরেই পড়ে যায় ‘দাঁড়ি’। এমন আষাঢ়ের এক মন খারাপের দিনে হুট করেই হয়তো পুরোনো বন্ধুর কথা মনে পড়ে, মনটা হু হু করে। বন্ধুহীন জীবনের কথা ভেবে ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মেসেজ করতে গিয়েও তাই অনেক সময়ই চাপতে হয় ব্যাক স্পেস। ফোন করতে গিয়েও অনেক সংশয়, ‘কী মনে করবে’—এমনটা মনে করে নিজেকে থামান। তবে একবার সম্পর্কে টান পড়েছে বলেই যে আর নতুন করে জোড়া লাগবে না, তেমন কিন্তু নয়। বাকি সম্পর্কের মতো ভাঙা বন্ধুত্বও ঝালিয়ে নেওয়া, জোড়া দেওয়া সম্ভব।

বন্ধুত্ব জোড়া লাগানোর উদ্যোগটা না হয় আপনি–ই নিলেন!
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

বন্ধুত্ব জোড়া লাগানোর আগে

বন্ধুত্ব জোড়া লাগানোর আগে এটা জানা জরুরি, এই বন্ধুত্ব জোড়া দেওয়াটা কি আপনার জন্য খুব প্রয়োজন? নিজের কাছে নিজেই এই উত্তর খুঁজুন। আপনি কি নিজের ভালো কিংবা খারাপ সময়ে তার অভাব বোধ করছেন? যে কারণে বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছিল, সেটি ভুলে কি নতুন করে শুরু করা সম্ভব? প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবেই সব ভুলে নতুন করে শুরু করুন।

শুরুটা হোক আপনার থেকেই

নিজের মনে যেহেতু বন্ধুর অভাব বোধ করছেন, সেহেতু নতুন করে সম্পর্কের সূচনাটাও আপনিই করুন। পুরোনো বন্ধুত্বের রেশ ধরে নতুন করে কথা বলা শুরু করুন। শুরুটা হতে পারে ছোট্ট একটা টেক্সট কিংবা কল দিয়ে। পুরোনো বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলোকেই ঝালাই করুন। ভালো সময়গুলোর ওপর জোর দিন। বাসায় ডাকুন বা কফিশপে দেখা করুন। মন খুলে কথা বলুন। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বের হন।

অনলাইনের সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ

বন্ধুর অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গী হন। বন্ধুর ছবিতে এঁকে দিন ভালোবাসা চিহ্ন। মন্তব্য করুন। রিলস বা ভিডিও শেয়ার করুন বন্ধুকে। ইমোজি পাঠাতে পারেন। যে গান আপনার শুনতে ভালো লাগল, ভিডিওটা ভালো লাগল, পাঠিয়ে রাখুন। সংশ্লিষ্ট পোস্টের নিচে বন্ধুকে ‘মেনশন’ করুন। এমন ছোট ছোট উদ্যোগ থেকেও নতুন করে শুরু হতে পারে বন্ধুত্ব।

‘সরি’ বলতে বাধা কোথায়

কিছু সময় নিঃসংকোচে ক্ষমা চাইলেই ঘুচে যেতে পারে সব টানাপোড়েন। যে ঘটনা নিয়ে শীতল হয়েছে সম্পর্ক, দেখা যাবে দুই পক্ষই সেই ঘটনা বেমালুম ভুলে বসে আছেন। আপনার যেটুকু দায়, সেটুকুর উল্লেখ করে ‘সরি’ বলতে দোষ কোথায়? নিঃসংকোচে ক্ষমা চাইতে পারলে সহজেই বোঝা যাবে পুরোনো ঘটনা পেছনে ফেলে নতুন করে সামনে এগোতে রাজি আপনি। ফলে বন্ধুত্বের বাঁধন আরও বেশি জোরালো হবে।

সময় দিন

আপনি কথা শুরু করলেই যে অপর পক্ষ একই রকম ব্যবহার করবে, তেমন কিন্তু নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে, আপনার শীতলতা তার মনে আরও বড় প্রভাব ফেলেছে। যে কারণে সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো আপনার বন্ধুত্বের ডাকে তিনি সাড়া দেননি। এত দিনের শীতল সম্পর্কে মুহূর্তেই উষ্ণ হয়ে যাবে, এমনটা ভাবা বোকামি। সুতরাং অস্থিরতা সামলে সময় দিন। তাকেও ভাবতে দিন, কথা চালিয়ে যান।

যেসব কথা মনে রাখা জরুরি

যেকোনো ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক, নতুন করে জোড়া লাগানো সহজ কোনো বিষয় নয়। যে কারণে পুরো সময়ে হতে হবে ধৈর্যশীল। অপর পক্ষের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া, নিয়মিত কথা বলা, তাকে সময় দেওয়া; সব মিলিয়ে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে সময় ও শ্রম, দুটিই জরুরি। মনে রাখবেন, বন্ধুত্বে দুই পক্ষেরই সমান আন্তরিকতা প্রয়োজন। আপনার নেওয়া প্রয়াস, উদ্যম, অপেক্ষার পরও অপর পক্ষ থেকে যদি সেভাবে সাড়া না পান, তবে সেই বন্ধুত্ব জোড়া না লাগানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ!


তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে