সম্পর্কের নতুন চর্চা ‘টুইন ফ্লেম’
‘টুইন ফ্লেম’ তরুণদের মধ্যে বেশ আলোচিত শব্দ। দুই প্রান্তের বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষের মধ্যে যদি নানা বিষয়ে মানসিক মিল বা সাদৃশ্য থাকে এবং তাঁরা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন, তখন এর কার্যকারিতা চোখে পড়ে। ‘টুইন ফ্লেম’ চিকিৎসাশাস্ত্র বা বিজ্ঞানস্বীকৃত কোনো বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। ইংরেজ ঔপন্যাসিক ‘মারি কোরেলি’ ১৮৮৬ সালে তাঁর উপন্যাস আ রোমান্স অব টু ওয়ার্ল্ডস বইতে প্রথমবার এই শব্দ ব্যবহার করেন। তিনি অবশ্য লিখেছিলেন ‘টুইন রেস’ পরে যা ‘টুইন ফ্লেম’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
টুইন ফ্লেম কী?
‘টুইন ফ্লেম’ মূলত একধরনের আত্মিক সম্পর্ক, যা কেবল অনুভবের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। একজন যদি আত্মার অর্ধেক হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যজন হবেন বাকি অর্ধেক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টুইন ফ্লেমের মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত অনেক মিল দেখা যায়। দুজন ভিন্ন মানুষ, কিন্তু তাঁদের মধ্যকার চিন্তাভাবনা, আচার, ব্যবহার ও কথায় অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আচরণগত ও রুচিগত সাদৃশ্যের কারণে এ জাতীয় সম্পর্কের মানুষদের মধ্যে আকর্ষণবোধ বেশি কাজ করে। তাই কখনো কখনো তাঁদের ‘মিরর সোল’ বা ‘সোলমেট’ হিসেবেও ডেকে থাকেন কেউ কেউ।
সোলমেট সব সময় ‘টুইন ফ্লেম’ নয়, তবে ‘টুইন ফ্লেম’ সোলমেট হতে পারে। সোলমেট সব সময় রোমান্টিক না–ও হতে পারেন, কিন্তু ‘টুইন ফ্লেম’ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোমান্টিক হন। সবচেয়ে আফসোসের বিষয় হচ্ছে, ‘টুইন ফ্লেম’ হয়তো আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কিন্তু আপনি সচরাচর তাঁর দেখা পাবেন না।
কেমন সেই অনুভূতি
টুইনের সঙ্গে আপনার পরিচয় হতে পারে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে এসে। মার্কিন রিলেশনশিপ কোচ ও কাপল থেরাপিস্ট অ্যাঞ্জেলা আমিয়াস বলেন, টুইন ফ্লেম সম্পর্ক স্ফুলিঙ্গের মতো। প্রাথমিকভাবে এর তীব্রতা খুব বেশি হয়। এ জাতীয় সম্পর্ক দ্রুত গভীর হয়। এটা এমন এক অনুভূতির সৃষ্টি করে যাতে মনে হবে যে তিনি আপনার খুব কাছের, খুবই আপন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগবে। তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছা করবে। তাঁকে স্পর্শ করতে মন চাইবে। তাঁর জন্য মন উচাটন হবে।
মার্কিন মনোবিদ ও স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ ড. লেইভের মতে, ‘টুইন ফ্লেম’ একটি জটিল পরিস্থিতি। এটা মোহের মতো কাজ করে, যা স্বাস্থ্যকর ও প্রশান্তিদায়ক, তবে বাস্তবসম্মত নয়। কেননা এতে ফ্যান্টাসি, প্রত্যাশা ও স্বপ্ন অনেক বেশি থাকে, যা ভবিষ্যতে অনেক সময় জটিলতার সৃষ্টি করে। টুইন ফ্লেমের ধারণাটি কিছু বিশ্বাসের সমষ্টিমাত্র। তবে এর মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেতে পারেন।
মোট কথা, তিনি হবেন আপনার আয়না। ‘টুইন ফ্লেম’ সম্পর্কে যুক্ত মানুষেরা একদিকে যেমন পরস্পরের খুব আত্মঘনিষ্ট হন, অন্যদিকে খুব অল্পেই তাঁদের মধ্যে দূরত্বেরও সৃষ্টি হয়। তবে যত কিছুই হোক না কেন, একটা সময় পর তাঁরা আবার একই জায়গায় এসে মেলেন।
নিজের মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া সবার জন্যই আনন্দের। যাঁর সঙ্গে সহজে ভাগ করে নেওয়া যায় ভালো–মন্দ, সুখ-দুঃখের কথা। মনের কোণে বহুদিন ধরে বলতে চাওয়া চাপা পড়ে থাকা কথাগুলো সহজে বলতে পারবেন তাঁর কাছে।
কীভাবে বুঝবেন আপনি এই দলের কি না
টুইন ফ্লেমের মধ্যে থাকা মানুষদের মধ্যে বেশ কিছু অন্য রকম বৈশিষ্ট্য থাকে। যেগুলো দিয়ে সহজেই তাঁকে শনাক্ত করা যায়। নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো যদি কারও মধ্যে থাকে, তাহলে বুঝবেন, আপনি ‘টুইন ফ্লেম’ সম্পর্কে আছেন।
বিপরীত লিঙ্গের বিশেষ কারও জন্য কারণে–অকারণে মন উচাটন হলে।
কারও প্রতি তীব্র শারীরিক বা মানসিক আকর্ষণ অনুভব করলে।
সংশ্লিষ্ট মানুষটির সঙ্গে যোগাযোগ না হলে অস্থিরতা বোধ করলে।
দুজনের কথায় ও চিন্তায় উল্লেখযোগ্য মিল খুঁজে পেলে।
বিশেষ কোনো সময় বা মুহূর্তে তাঁর কথা মনে পড়লে বা তাঁকে মিস করলে।
তাঁকে দেখলে বা তাঁর সঙ্গে কথা হওয়ার পর মানসিকভাবে শান্তি পেলে।
ভালো লাগার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কোনো বিষয়ে সন্দেহ কিংবা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করলে।
সম্পর্কের মধ্যে প্রায়ই মতানৈক্য, মনোমালিন্য, ঝগড়া হলে। এর মাধ্যমে ঘন ঘন রিলেশন অন-অফ হলে।
‘টুইন ফ্লেম’ সম্পর্ক সব সময় মসৃণ ও স্বাচ্ছন্দ্যের হয় না। এর মধ্যে একটা মানসিক শান্তি আছে এটা যেমন সত্যি, এর জন্য অনেক সময় প্রচুর কাঠখড়ও পোড়াতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সম্পর্ক অস্থির ও টালমাটাল থাকে। তাই নিঃসন্দেহে ‘টুইন ফ্লেম’ সম্পর্ক একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। যেহেতু এই সম্পর্কে তীব্রতা বেশি, তাই এখানে রাগ, অভিমান, ভয়, সংশয়ও বেশি কাজ করে। আপনি যখন ‘টুইন ফ্লেম’ খুঁজে পাবেন, তার মানে হলো, নিঃসন্দেহে আপনি দুর্লভ কিছু পেলেন। তবে সেটা ধরে রাখাও কম কঠিন নয়।
সূত্র: ফোর্বস ও ব্রাইডস