বিয়ে করতে আসলে কত টাকা লাগে
বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পরও যে প্রশ্নটা থেকে যায়, সেটা হলো খরচ। এমনকি পাত্র কে বা পাত্রী কে প্রশ্ন করার আগেই আত্মীয়স্বজনের প্রশ্ন থাকে, বিয়ে যে করতে চাও, টাকা আছে তো? শুনে মনে হতেই পারে, অনেক টাকা ছাড়া বোধ হয় বিয়ে করা সম্ভব নয়। আর সেই সময় যদি সদ্য হয়ে যাওয়া মুকেশ আম্বানির ছেলের প্রাক্-বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ে, তাহলে অনেকের বিয়ের ইচ্ছাটাই জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। তাই প্রশ্নটা খুবই প্রাসঙ্গিক, বিয়ে করতে আসলে কত টাকা লাগে? অনেক বেশি টাকাপয়সা ছাড়া কি বিয়ে করা সম্ভব না?
ঘটক ও কাজির খরচ: বিয়ের দুটি বাধ্যতামূলক খরচ। এই খরচ আপনার করতেই হবে। সাধারণত পাত্র বা পাত্রী খুঁজে দেওয়ার জন্য ঘটকেরা কিছু টাকা নেন। সেটা সাধারণত পাঁচ হাজার টাকা থেকে শুরু। তবে প্রেমিক বা প্রেমিকা থাকলে আপনাকে অভিনন্দন। শুরুতেই আপনি বেশ কিছু টাকা বাঁচিয়ে ফেলেছেন! আর কাজির খরচটা নির্ভর করে দেনমোহরের ওপর। চার লাখ টাকা পর্যন্ত ফি এক হাজার টাকা। এরপর প্রতি লাখে এক হাজার করে যোগ হতে থাকে।
ভেন্যু ও কমিউনিটি সেন্টার: বিয়ের ব্যয়ের বড় একটা অংশ এখানে চলে যাবে। সাধারণত পাঁচ তারকা মানের বা জনপ্রিয় ভেন্যু ভাড়া নেওয়ার জন্য আপনার খরচ হয়ে যাবে ১০ লাখ টাকার কাছাকাছি। আর সাধারণ কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিলে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকাতেই হয়ে যাবে। সরকারি কিছু কমিউনিটি সেন্টার আছে। এগুলো পাওয়া কষ্টকর, তবে পেয়ে গেলে অনুষ্ঠান সেরে ফেলতে পারবেন আরও কম খরচে।
খাওয়ার খরচ: এটাও নির্ভর করবে আপনি কতজন মানুষকে খাওয়াবেন। আর কী খাওয়াবেন। স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতি আপনাকে খরচ করতে হবে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে বাবুর্চির খরচ।
অলংকার: বিয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো অলংকার। অলংকার বলতে সাধারণত বিয়েতে সোনার গয়নাই দেওয়া হয়। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। কাজেই বিয়েকে যদি সোনায় সোহাগাময় করতে চান, তবে আপনাকে শক্ত প্রস্তুতি নিয়েই নামতে হবে।
অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা ও আলোকচিত্রী: একটা সময় বিলাসিতা হলেও এখন সব বিয়েতেই ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট আর ওয়েডিং ফটোগ্রাফি’ অনেকটা আবশ্যক হয়ে গেছে। এমন আনন্দের একটা উপলক্ষকে ক্যামেরায় ধরে রাখতে কে না চায়? তবে সে জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে ৩০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
অন্যান্য খরচ: এ ছাড়া শপিং, গায়েহলুদের জন্যও আপনাকে কিছু কেনাকাটা করতে হবে। আবার কখনো গেট ধরা বা জুতা লুকিয়ে রাখা শালা-শালিদের আবদারও পূরণ করতে হবে। কাজেই বাজেট থেকে এগুলোও যেন বাদ না পড়ে!
মোটামুটি এগুলো মাথায় রাখলেই একটা বিয়েতে কত খরচ হয়, সেটা বের করে ফেলা যায়।
‘প্রায়’ জিরো বাজেটের বিয়ে
তবে সব বিয়েতেই কি এত হিসাব-নিকাশ থাকতে হবে? জিরো বাজেটের কোনো বিয়ে কি হতে পারে না?
উত্তর হলো, পারে। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, খুব কম বাজেট নিয়েও চাইলে আপনি বিয়ে সেরে ফেলতে পারেন। পছন্দের পাত্র বা পাত্রী থাকলে ঘটকের খরচ আগেই বাদ। দেনমোহর কমিয়ে কমাতে পারেন রেজিস্ট্রেশন ফিও। কমিউনিটি সেন্টার না খুঁজে নিজের বাসাতেই সাজিয়ে-গুছিয়ে বিয়ে করে ফেলতে পারেন। বাসায় রান্না করা খাবার দিয়েই হতে পারে অতিথি আপ্যায়ন। একসঙ্গে অনেকগুলো খরচ কমে গেল। আর ছবি? স্মার্টফোন আর আইফোনের এই যুগে ধৈর্য থাকলে ভালো ছবি তোলা খুব কঠিন না। ডিএসএলআরওয়ালা বন্ধুকে দাওয়াত দিলে এক প্লেট কাচ্চির বিনিময়েই সে হাসিমুখে করে দেবে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি। যে ডিভাইস দিয়েই তোলেন না কেন, সুখী মানুষের ছবি কি কখনো খারাপ আসে? গয়না, আংটি, শাড়ি এসব অবশ্যই একটা বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রেম, ভালোবাসা আর পারস্পরিক বোঝাপড়া। বোঝাপড়ার জায়গা ঠিক থাকলে বাকি সব কম কম হলেও সেটা পূরণ করে ফেলা যায় খুব সহজেই।