গভীর বন্ধুত্বেও সীমারেখা টেনে রাখবেন কেন?
মনের কথা উজাড় করে যাকে বলা যায়, বিপদে যাকে কাছে পাওয়া যায়, সেই তো পরম বন্ধু। এমন বন্ধু গোটা জীবনেরই এক অনন্য সম্পদ। তবে এমন দারুণ সম্পর্কের মধ্যেও কিছু বিষয়ে সীমারেখা থাকাটা জরুরি। বন্ধুত্বকে প্রাণবন্ত রাখার জন্যই প্রয়োজন এই সীমারেখা। আনন্দময় আড্ডায় মনপ্রাণ উজাড় করে কথা বলার অর্থ কিন্তু এই নয় যে মুখে যা আসবে, তা–ই বলে দেওয়া যাবে। বন্ধুর সঙ্গেও কথাবার্তা ও আচরণে নির্দিষ্ট সীমা কখনোই অতিক্রম করা উচিত নয়। সীমা অতিক্রমে বন্ধুত্ব যেমন কলুষিত হয়, তেমনি ব্যক্তির নিজস্বতাও নষ্ট হতে পারে।
কেমন হবে বন্ধুত্বের আলাপের সীমা
বন্ধুর ব্যক্তিজীবনে অনুপ্রবেশ অবশ্যই বন্ধুত্বের সীমালঙ্ঘন। বন্ধুর পরিবার, ধর্মবিশ্বাস, বৈবাহিক অবস্থা, জীবনদর্শন, রাজনৈতিক মতাদর্শ—আলাপের মধ্যে এই বিষয়গুলো এলে অবশ্যই ভদ্রোচিত সীমা বজায় রাখা উচিত। ঠাট্টাচ্ছলেও বন্ধুর মনে আঘাত দেওয়া যাবে না। বন্ধুর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা যাবে না। আপনি নিজে যেমন এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন, তেমনি আপনার বন্ধু সীমা অতিক্রম করলে তাঁকেও বুঝিয়ে দিন, এতে আপনি পীড়িত হচ্ছেন। ব্যক্তিভেদে বন্ধুত্বের সীমারেখায় খানিক ভিন্নতা থাকতেই পারে। বন্ধুর কিসে স্বস্তি, কিসে অস্বস্তি, তা খেয়াল রাখাও আরেক বন্ধুর কর্তব্য।
কীভাবে বন্ধুকে বোঝাবেন আপনার সীমারেখা
বন্ধুত্বের সীমারেখা নিয়ে আলাপ করাটা আপাতদৃষ্টে অস্বস্তিকর বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আপনার বন্ধু যদি সীমা অতিক্রম করে ফেলে আর আপনি চুপ করে থাকেন, তাহলে কিন্তু বন্ধুত্বে তারুণ্য কমে যেতে থাকবে। তাই বিষয়টি নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন অকপটে। অস্বস্তির কিছু নেই। তিনি তো আপনার বন্ধুই। নিজের ভালো লাগা, মন্দ লাগার কথা তাঁর কাছে বলতে দ্বিধা রাখবেন কেন! বরং সুন্দরভাবে বিষয়টা তাঁকে বুঝিয়ে দিন। এ প্রসঙ্গে কথা শুরু করার আগে আপনি তাঁকে মনে করিয়ে দিন, তিনি আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বন্ধুর কোন আচরণে আপনি বিচলিত হয়ে পড়েন বা কষ্ট পান, সহজ ভাষায় স্পষ্ট করে তা বলুন। বন্ধু হিসেবে তাঁর কাছে আপনি কী চান, সেটিও বলুন। নিজের সীমাবদ্ধতা থাকলে তা স্বীকার করে নিন। তবে এ জন্য কিন্তু বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাইবেন না। কোনো অজুহাতও দেখাবেন না। বরং মন খুলে নিজের কথা বলুন। কথা বলার সময় বন্ধুর প্রতি সহমর্মী আচরণ করুন। তিনি যে আপনার কল্যাণ চান এবং আপনি সেটি উপলব্ধি করেন, তা উল্লেখ করুন সীমারেখাবিষয়ক আলাপের সময়। আপনি যে তাঁর অনুভূতিকে সম্মান করেন, সেটিও বলুন। মোটকথা, আপনাকে বন্ধুত্বের সুরেই আপনার নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে হবে।
অতিরিক্ত প্রত্যাশাও ঠিক নয়
অতিরিক্ত প্রত্যাশা করাও কিন্তু একধরনের সীমা অতিক্রম। কাজের চাপে চিড়েচ্যাপটা হচ্ছেন একজন মানুষ, কিন্তু তাঁর বন্ধু বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য তাঁকে রীতিমতো জবরদস্তি করছেন—এমনটা কিন্তু ভালো বন্ধুত্বের পরিচয় দেয় না। ঠিক তেমনি এক বন্ধু মানসিক যন্ত্রণায় সারা রাত জেগে থাকছেন বলে অন্যজনও তাঁর জন্য পুরোটা রাত জেগে থাকবেন, এমনটা প্রত্যাশা করাটাও কিন্তু বোকামি।
বন্ধু যদি সীমা না মানেন
সীমারেখা বুঝিয়ে দেওয়ার পরও যদি আপনার বন্ধু তা না মানেন, তাহলে কিন্তু সেই সীমারেখার কথা আবারও তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হবে। তবে বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার পরও যদি তিনি সীমা অতিক্রম করেন, আপনার ভাবনাকে সম্মান না করেন, তাহলে কিন্তু বন্ধুত্বটা নিয়েই নতুন করে আপনাকে ভাবতে হবে।
সূত্র: ভেরিওয়েলমাইন্ড