গরমে মেজাজ গরম, নাকি অন্য কিছু
দুপুরের রোদে কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় তেতে পুড়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। মুঠোফোনটা বেজে উঠল। ওপাশ থেকে এমন কিছু শুনলেন, যাতে হয়তো তাঁর বিরক্ত হওয়ারই কথা। কিন্তু তিনি কেবল বিরক্তই নন, হয়ে উঠলেন রীতিমতো ক্ষিপ্ত। ঘটনাটা ঘটেছে গতকাল। চট করে এমন মেজাজ হারানোর ঘটনা আমাদের চোখের সামনে হরহামেশাই ঘটছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি, ঝগড়া, এমনকি মারপিট পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে কি এমন ঘটনা বেশি ঘটছে? আসলেই কি মেজাজ হারানোর জন্য তীব্র গরমকে দায়ী করা যায়?
তীব্র গরমে অবসন্ন হয়ে পড়ে প্রাণ। অনেকেই পানিশূন্যতায় ভোগেন। কারও কারও খাবারের রুচিও কমে যায়। সব মিলিয়ে শরীরটা যেন ঠিক ‘ভালো’ বোধ হয় না। তাই অল্পেই বিগড়ে যেতে পারে মনমেজাজ। গরমের ‘দোষ’ খানিকটা আছে বৈকি! তারপরও পরিবেশের গরমকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও নিজের মেজাজের নিয়ন্ত্রণ কিন্তু নিজের কাছেই। মেজাজ ঠান্ডা রাখতে হলে শরীরকে স্বস্তিও দেওয়া চাই। এমনটাই বললেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন।
গরমেও ঠান্ডা থাকুন
নিজের সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। একটু পরপরই গলা ভিজিয়ে নিন। আরামদায়ক পোশাক পরুন। ছাতা ব্যবহার করুন। শরীর কিংবা মনমেজাজ খারাপ বোধ করলে চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে নিন। আপনার কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা থেকে থাকলে চিকিৎসা নিন। মোটকথা, নিজেকে স্বস্তিতে রাখুন। মেজাজ গরম করে যে কাউকে যা খুশি তা–ই বলে ফেলা ঠিক নয়। চেনা-অচেনা কাউকেই মেজাজ দেখাবেন না। মনে রাখবেন, আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তিই একজন মানুষের বড় শক্তি।
মনের ব্যাপার-স্যাপার
মানসিক চাপ ও হতাশার কারণেও অনেকে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। সেটি কিন্তু বছরের যেকোনো সময়েই হতে পারে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরও মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে পড়তে পারে হুটহাট। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জোবায়ের মিয়া জানান, কেউ কেউ স্বভাবতই একটু রগচটা গোছের হন। অর্থাৎ তাঁদের মেজাজ তিরিক্ষি হয় বছরের যেকোনো সময়েই। এটা ব্যক্তিত্বেরই একটা ধরন। কেউ বদমেজাজি হয়ে থাকলেও যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর মেজাজ তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনকে বিপর্যস্ত না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি কোনো রোগ না। তাই আপনার ব্যক্তিত্ব এ ধরনের হয়ে থাকলেও কিন্তু মেজাজ নিয়ন্ত্রণের চর্চা করতে পারেন। তাতে জীবন হয়ে উঠবে আরও সুন্দর। আর রোগের পর্যায়ে চলে গেলে তো চিকিৎসা নিতেই হবে।
মেজাজ নিয়ন্ত্রণ
মেজাজ যে কারণেই গরম হোক না কেন, তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকুন। মনে রাখবেন, বাইরে থেকে কাউকে যত সুখীই মনে হোক, তিনিও হয়তো না পাওয়ার বেদনায় ব্যথিত। তাই নিজেকে কখনো ‘বঞ্চিত’ বা ‘দুর্ভাগা’ ভাববেন না। মেজাজ গরম হয়ে উঠতে শুরু করলে গভীরভাবে শ্বাস নিন। নিচু স্বরে বা মনে মনে নিজেকে নিজেই শান্ত থাকতে বলুন। ক্ষমা করতে শিখুন।
মেজাজ গরম থাকা অবস্থায় কথা না বলাই ভালো। বলতে হলেও আগে ভেবে নিন কী বলবেন। ধরা যাক, কারও ভুলের কারণে আপনার দামি জিনিসের ক্ষতি হয়েছে। এখন আপনি কি তাঁকে ধমকাবেন কিংবা মারবেন? ভেবে দেখুন, আপনার জিনিসটা সারানো সম্ভব কি না। কিংবা সেটি অকেজো হয়ে পড়লে নতুন একটা জিনিস কিনতে কত খরচ হবে, কত ঝক্কি পোহাতে হবে। হয়তো অ-নে-ক। কিন্তু এভাবেও ভাবুন, আপনি কাউকে ধমকালে বা মারলে তিনি মনে যে আঘাতটা পাবেন, তা কিন্তু অর্থের বিনিময়ে সারিয়ে তোলা যাবে না। তার চেয়ে বরং তাঁকে ক্ষমা করে দিন। আর সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন, এই ভুলের কারণে আপনার কী মুশকিলে পড়তে হলো। মেজাজ গরম হলে কেউ কেউ হাতের কাছে থাকা জিনিস ছুড়ে মারেন। এটিও খুব খারাপ অভ্যাস। এসব না করে বরং নিজেকে একটু সময় দিন। যাঁর ওপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে কথা বলার আগে নিজেকে শান্ত করুন।