কিছু স্বামী–স্ত্রী বা প্রেমিক–প্রেমিকাকে দেখতে কেন ‘ভাই–বোনে’র মতো লাগে?
অনেক দিন ধরে প্রেম করা আপনার পরিচিত বন্ধু বা বান্ধবীকে কি দেখতে আজকাল তাঁর বান্ধবী বা বন্ধুর মতো একই রকম চেহারার মনে হচ্ছে? বা বিয়ের কয়েক বছর পর কোনো দম্পতিকে দেখে কখনো চমকে উঠে ভেবেছেন, তাঁদের চেহারায় এত মিল হলো কীভাবে? অথচ বিয়ের দিনও যে তাঁদের চেহারা পুরোপুরি আলাদা ছিল, এ কথা আপনার দিব্যি মনে আছে!
না, আপনি একাই শুধু এই ‘ভুতুড়ে’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি। পৃথিবীজুড়েই এই বিষয় নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা চলে। এমনকি ইনস্টাগ্রামে একটা অ্যাকাউন্টও আছে ‘সিবলিংস অর ডেটিং’ নামে। ১২ লাখ অনুসারী এই অ্যাকাউন্টের।
সারা দুনিয়ার প্রচুর যুগলের ছবি পোস্ট করা হয় এখান থেকে। আর জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা কাপল নাকি ভাই–বোন? এই বিষয় নিয়ে চলে ভোটাভুটি। ভোট গননা শেষে জানিয়ে দেওয়া হয় সঠিক উত্তর। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভাই–বোনে বেশি ভোট পড়লেও তাঁরা আসলে জুটি!
ইনস্টাগ্রামের এই পেজটিতে গেলে অবাক হয়ে দেখবেন, শুধু আপনার বন্ধু বা বান্ধবী নন, বরং হাজার হাজার যুগলের চেহারায় এক অদ্ভুত মিল। কেউ বলে না দিলে হয়তো আপনি তাঁদের ভাই–বোন ভেবেই ভুল করে বসতেন। তবে এ ঘটনাকে নিছক কাকতালীয় ভেবে ভুল করবেন। বরং চেহারা এক হওয়ার পেছনেও আছে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। তবে এককথায় এ ঘটনার ব্যখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। বরং বেশ কিছু কারণের সমন্বয়েই এই অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে থাকে।
আমরা সবকিছুর মধ্যেই আসলে নিজেকে খুঁজি
যদিও আমাদের সমাজে বিপরীতের প্রতি আকর্ষণ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমিল নয়, বরং মিলের প্রতিই আমরা বেশি আকর্ষিত হই। যেমন এক গবেষণায় বেশ কিছু মানুষকে আকর্ষণীয় চেহারা বেছে নিতে বলা হয়েছিল এবং তাঁরা বেশির ভাগই শেষমেশ নিজেদের চেহারার অন্য ভার্সনকেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় হিসেবে ভোট দেন। কাজেই চেহারার সাদৃশ্যের প্রেমে পড়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি!
এমপ্যাথেটিক মিমিক্রি বা ভালোবাসাময় অনুকরণ
ওপরের কারণের বাইরেও অনেক যুগল থাকেন, যাঁরা বিয়ের সময় দেখতে পুরোপুরি আলাদা হলেও বেশ কিছু বছর একসঙ্গে থাকার পর চেহারায় একটা মিল চলে আসে। এ ব্যাপারটাকেই বলা হয় এমপ্যাথেটিক মিমিক্রি বা ভালোবাসার অনুকরণ। গভীর ভালোবাসা আর তীব্র মায়া থেকেই মানুষ সঙ্গীর অনেক কিছুই অনুকরণ করতে শুরু করে। এমনকি মুখের অঙ্গভঙ্গি পর্যন্ত। ফলাফল? নির্দিষ্ট একটা সময় পর চেহারায় মিল চলে আসে।
অন্য মুখে খুঁজে ফিরি সেই প্রিয় মুখ
জেমসের গানের লাইনটা মনে আছে তো? সত্যি সত্যিই বহু মানুষ সঙ্গী পছন্দ করার সময় নিজের বাবা বা মায়ের মতো দেখতে, এমন মানুষ বেশি পছন্দ করেন। ফলাফল? স্বামী বা স্ত্রী খুঁজতে যেয়ে ভাই-বোন খুঁজে বের করা!
আর্থসামাজিক অবস্থা এক হওয়া
সাধারণত কারও সঙ্গে প্রেম বা বিয়ে করার সময় আমরা নিজেকে আয়না হিসেবে দাঁড় করিয়েই আরেকজনকে খুঁজে বেড়াই। নিজের পরিচিত সামাজিক বলয় থেকেই আমরা আমাদের সঙ্গী বাছাই করি। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চলাফেরা, জীবনাচরণসহ অনেক কিছুতেই অনেক মিল আগে থেকেই থেকে যায়।
অনলাইনে প্রেম
নিজের পছন্দের এবং নিজের মতো মানুষজন পাওয়া আগে কঠিন হলেও এখন অনলাইনের যুগে ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে খুবই সহজ। এখন তো রীতিমতো বিভিন্ন মাপকাঠিতে মেপে মেপে তারপর আমরা সঙ্গী পছন্দ করি। কাজেই আমাদের সঙ্গে মিলও অনেক বেশি থাকে।
খাওয়াদাওয়া ও আবেগীয় সামঞ্জস্য
এটাও দীর্ঘদিন একসঙ্গে সংসার করা লোকজনের জন্য প্রযোজ্য। সাধারণত আপনার ও আপনার সঙ্গীর খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা, ঘুমানো—সবকিছু একই রুটিন অনুযায়ী চলে। এর ফলে শুধু চেহারা নয়, বরং শারীরিক গঠনেও যুগলদের মধ্যে একটা মিল চলেই আসে।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা কথা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, তিন বছরের বেশি প্রেম করলে মানুষ ভাই-বোন হয়ে যায়। মজা করে বলা হলেও কথাটা যে অনেকাংশেই সত্য, এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তবে ঠিক কতটা সময় একসঙ্গে থাকলে এই প্রভাব কাজ করে, সেটা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত নেই।
আবার যাঁরা দেখতে তাঁদের সঙ্গীদের মতো নন, তাঁরা যে নিজেদের ভালোবাসেন না, এটাও সত্যি নয়। বরং সঙ্গী দেখতে আপনার মতো হোক বা না হোক, তাঁকে ভালোবাসা চলমান রাখা এবং দুজনে একসঙ্গে ভালো থাকাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনের মিল একবার হয়ে গেলে চেহারার মিল–অমিলে কী আসে–যায়?
তথ্যসূত্র: টাইম ম্যাগাজিন