হঠাৎ জানলেন মেয়েটি আপনার ভাইয়ের প্রেমিকা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান (ছদ্মনাম)। তাঁর বড় ভাই ইকবাল একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। আহসান ও ইকবালের বয়স পার্থক্য পাক্কা আট বছর। কিছুটা তো বড়-ছোটর দূরত্ব আছেই। আহসানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন সাদিয়া। সাদিয়ার সঙ্গে বড় ভাই ইকবালের প্রেমের সম্পর্ক তিন বছরের। বড় ভাইয়ের প্রেমের কথা প্রথম দিকে গোপন থাকলেও এখন সবাই জানে। বড় ভাইয়ের প্রেমিকা সাদিয়ার সঙ্গে ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখা হয় আহসানের। এই সময়ে আহসান কী বলবে, কেমন আচরণ করবে, তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় থাকেন। ভাইয়ের প্রেমিকার সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন, তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকেন। এমনই কিছু দ্বিধা থেকে সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন কীভাবে, সেটাই জেনে নিন।
সব সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করুন
সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করুন প্রথম থেকেই। ভাইয়ের প্রেমিকা হোক বা ভালো বন্ধু, সব সম্পর্ককে শ্রদ্ধা করতে হবে। বড় ভাইয়ের প্রেমিকাকে প্রথমত শ্রদ্ধা করুন, তারপর সম্পর্কের খাতিরেও সম্মান দিন। আরেকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, নিজের পছন্দ–অপছন্দকে এখানে গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। আপনার বড় ভাইয়ের প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক একান্তই তাঁর। সেখানে আপনার মতামত বা ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করবেন না। আপনার পছন্দের চেয়ে আপনার ভাইয়ের পছন্দ ও তাঁর ভালো থাকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
উদার ও সম্মানের পথ তৈরি করুন
কখনো কখনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। আপনার বড় ভাইয়ের প্রেমিকাকে আপনার পছন্দ নয়। এখন কি তাঁকে আপনার অপছন্দের কথা বলবেন? বড় ভাইয়ের প্রেমিকা সম্পর্কে নেতিবাচক কথা পরিবারে আলোচনা করবেন? আপনার ভালো লাগা বা পছন্দ কি বড় ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কে খুব গুরুত্বপূর্ণ? বাস্তব অর্থে কিন্তু আপনার মতামত গুরুত্বপূর্ণ নয়। পরিবারেও প্রতিটি মানুষের জীবনাচরণ, পছন্দ–অপছন্দ আলাদা। নিজের ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে পারিবারিকভাবে চাপ তৈরি করবেন না। সম্মান ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে বড় ভাইয়ের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন। একই বিষয় খাটে ছোট ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। বড় ভাই বা বোন বলে ছড়ি ঘোরাতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। সম্পর্কসংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জন গটম্যান বলেন, ‘সম্মান যেকোনো সম্পর্কের জন্য ভীষণ মৌলিক একটি ভিত্তি। আপনার ভাইয়ের প্রেমিকার প্রতি অকৃত্রিম উদারতা ও সম্মান দেখান। তাঁকে এমনভাবে শ্রদ্ধা করুন, ঠিক যেমন আপনি আপনার বাড়ির অন্যদের শ্রদ্ধা করেন।’
সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে জোর দিন
সুযোগ থাকলে পরিচিত হন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতিতে বড় ভাইয়ের প্রেমিকার সঙ্গে আলাপের সুযোগ থাকে না। যদি আপনি সম্পর্কের কথা জানেন বা যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক, তাঁকে চেনেন, তাহলে পরিচিত হতে পারেন। দ্য ফাইভ লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ বইয়ের লেখক গ্যারি চ্যাপম্যান বলেন, সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সংযোগ তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। বড় ভাইয়ের প্রেমিকার আগ্রহ বা শখ সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকলে জানুন। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে চেষ্টা করুন। বড় ভাইয়ের প্রেমিকা বা ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে কখনই জাজমেন্টাল হওয়া যাবে না।’
অনেক সময় মানুষটি যদি আমার অল্প পরিচিত হয়, তাহলে নিজের মতো করে তাঁর সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে নিই আমরা। সেটা না করাই ভালো। একটা মানুষের সঙ্গে যখন একান্তে মেশা যায়, তখনই তাঁর সম্পর্কে একটা সঠিক ধারণা তৈরি হয়। তাই আগে ভাবা জরুরি, আপনার ভাইয়ের প্রেমিকাকে আপনি কতটা চেনেন। যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ব্রেন ব্রাউন বলেন, ‘আমরা প্রায়শই অন্যদের সত্যিকারভাবে জানার আগে তাঁদের বিচার করে ফেলি। আপনার ভাইয়ের প্রেমিকা বা বান্ধবীর সঙ্গে আগের ধারণা নিয়ে আলাপে না জড়ানোই ভালো। বড় ভাইয়ের যেকোনো সম্পর্ক বা আচরণ নিয়ে আপনার অনুভূতি থাকলে তা উন্মুক্ত মন নিয়ে প্রকাশ করুন। পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে ইতিবাচকভাবে যোগাযোগ করতে শিখুন।’
নেতিবাচকতা এড়িয়ে চলুন
আপনার ভাইয়ের পছন্দকে সমর্থন করুন। সমর্থন করতে না পারলেও নেতিবাচকতা প্রদর্শন করবেন না। মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ—আপনার ভাইয়ের পছন্দকে সমর্থন করা পারিবারিক সম্প্রীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সম্পর্কে কখনই নিজের কথা চাপিয়ে দেবেন না। পরিবারের সদস্য হিসেবে আপনার ভাইয়ের সব কিছুতে আপনার মতামত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেকোনো সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর যোগাযোগ অন্যতম চাবিকাঠি। কোনো সমস্যা বা ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হলে গসিপ তৈরি না করে আপনার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তভাবে ও সরাসরি কথা বলুন। বড় ভাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে মা–বাবা কিংবা পরিবারের অন্যদের মতামত থাকলে সেখানে অহেতুক নিজেকে জাহির করার প্রয়োজন নেই।
সূত্র: গ্ল্যামর ও রেডিট