রাগী মানুষের মন কি আসলেই ভালো?
রাগী মানুষের মন ভালো হয় বলে একটা কথা আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে অফিসের বস পর্যন্ত নিজেদের মাথা গরমের সবচেয়ে বেশি যে কৈফিয়তটা দেওয়ার চেষ্টা করে, সেটা হলো রাগী মানুষের মনে নাকি ‘দোষ’ থাকে না। এই মানুষগুলোর মন ভালো হয়। কথাটা কতটুকু সত্য?
উত্তর হলো, পুরোপুরি মিথ্যা।
রাগ জিনিসটা আমাদের মন ও সম্পর্ক বা অন্যের মানসিক সুস্থতা নষ্ট করে। তেমনি ক্ষতি করে নিজের শরীর ও স্বাস্থ্যেরও। কাজেই রাগকে কোনোভাবেই ইতিবাচক দেখার সুযোগ নেই।
একটা মানুষ যখন তীব্র রাগে থরথর করে কাঁপতে থাকে, তখন তার পুরো শরীরই ‘যুদ্ধাবস্থা’য় চলে যায়। রক্তে বইতে থাকে হরমোনের স্রোত, বেড়ে যায় হৃৎপিণ্ডের গতি। এমনকি শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায় অনেকখানি। পুরো শরীরই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায়।
রাগ কি কোনো অসুখের নাম?
বলার চেষ্টা করা হয়, রাগ বেরিয়ে গেলে মানুষ নাকি হালকা হয়ে যায়। অথচ বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা। রাগ করার সময় আপনি মোটেও হালকা হন না, বরং রাগের সঙ্গে সঙ্গে মাথাব্যথা, ইনসমনিয়া, অবসাদ, হার্ট অ্যাটাক এমনকি স্ট্রোকের মতো রোগগুলোকেও আপনি আপনার শরীরে প্রবেশের পথ করে দেন। স্বাস্থ্যকে যদি আমরা সব সুখের মূল বলি, তবে রাগকে বলতে হবে সব অসুখের মূল।
রাগ যেভাবে আপনার সম্পর্ক ভেঙে ফেলে
রাগকে আর দশটা সাধারণ আবেগের সঙ্গে মেলানো যাবে না। কারণ, রাগ শুধু সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না; বরং রাগ থেকে মানুষ খুন করার মতো ঘটনাও ঘটে। কাজেই রাগের সময় মাথা ঠিক রাখতে না পারাটা কোনোভাবেই মন ভালো হওয়ার লক্ষণ নয়; বরং এটা আপনাকে সঙ্গীর কাছে অনিরাপদ করে তোলে।
একটা সম্পর্কের প্রাণ হলো যোগাযোগ। রাগের মাথায় খারাপ আচরণ করার মানেই হলো, এই যোগাযোগের রাস্তাটা বন্ধ করে দেওয়া। ফলাফল? সম্পর্কে সমস্যার শুরু হয়। যোগাযোগও আরও কমতে থাকে। সেই সঙ্গে রাগের মাথায় বারবার খারাপ আচরণ করতে থাকার ফলে একটা সম্পর্কে বিশ্বাসেরও ঘাটতি শুরু হয়। যে মানুষ মুহূর্তের রাগে অন্য মানুষ হয়ে যেতে পারে, যা–তা আচরণ করতে পারে, তাকে কীভাবে যথেষ্ট বিশ্বাস বা ভরসা করা সম্ভব?
অবিশ্বাসের শুরু যে রাগ থেকে হয়, সেই অবিশ্বাস শেষ হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের মধ্য দিয়ে। বেশির ভাগ শারীরিক নির্যাতনের ঘটনার পেছনের কারণ হলো রাগ। অথচ একজন ভালো মনের মানুষের পক্ষে কি কাউকে নির্যাতন করা সম্ভব? তাহলে রাগী মানুষের মন কীভাবে ভালো হলো?
রাগ কমাব কীভাবে?
আশা করি, রাগের প্রতি থাকা আপনার সব অনুরাগ এতক্ষণে চলে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাগ কমাবেন কীভাবে? প্রথমেই রাগের ‘জাস্টিফিকেশন’ বন্ধ করুন। রাগকে বংশগত রোগ বা সমাধানের অযোগ্য কিছু ভাবা বন্ধ করে ছোট ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন:
১. সব সময়ই হাতের কাছে একটা ডায়েরি রাখুন। ডায়েরিতে নিজের সব রাগ লিখে ফেলুন। মানুষের বদলে রাগ বরং আপনার ডায়েরির ওপর দিয়েই যাক।
২. মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শিখুন।
৩. রাগের মাথায় যদি সহিংস হয়ে ওঠার কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, তবে অবশ্যই আপনার উচিত কোনো মনোবিদের সাহায্য নেওয়া। লজ্জা নয়, বরং সচেতনতাই আপনাকে এই রাগের অসুস্থ চক্র থেকে বাঁচাতে পারে।
৪. ব্যায়াম ও শারীরিক অনুশীলনও রাগ নিয়ন্ত্রণে বেশ সহায়ক। খুব রাগ হলে বা খারাপ লাগলে ট্রাউজার আর জুতা পরে বের হয়ে দৌড় শুরু করুন বা কাছাকাছি কোনো জিমে যান। এতে একদিকে যেমন আপনার শরীর থেকে বাড়তি মেদ ঝরে যাবে, তেমনি ঝরে যাবে মনে জমে থাকা রাগের পাহাড়ও।
মানুষমাত্রই রাগ থাকবে, আবেগ থাকবে, ভালো লাগা থাকবে, খারাপ লাগাও থাকবে। তবে সেই আবেগের প্রকাশটা হওয়া চাই সুস্থভাবে। আপনার আবেগের প্রকাশ যদি অন্য লোকজনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেই আবেগের প্রকাশে সাবধান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
রাগের মতো খুব ভয়ংকর একটা আবেগকে কোনোভাবেই মন ভালোর দোহাই দিয়ে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না!
সূত্র: বেটার হেলথ