আপনি কেন টক্সিক সঙ্গীকে আকর্ষণ করেন, জানেন?

আপনার সঙ্গী যদি টক্সিক হয়, আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জীবনে সুখী হওয়া। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘কেন আমার কপালেই এসব মানুষ এসে জোটে? আমার ভাগ্যটাই খারাপ!’ তবে বিহ্যাভিয়ারাল সাইকোলজি বলে, আপনার ভেতর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা কেবল টক্সিক সঙ্গীকেই টানে। টক্সিক মানুষকে আপনি যদি জীবনে না চান, তাহলে সবার আগে জানতে হবে, আপনার ভেতরে সেই বৈশিষ্ট্যগুলো কি না।

আপনার সঙ্গী যদি টক্সিক হয়, আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জীবনে সুখী হওয়ামডেল: সাদিয়া, তারেক ও আরিয়ান। ছবি: প্রথম আলো

টক্সিক সঙ্গী কী করে

টক্সিক সঙ্গী হলো সেই সঙ্গী, যে শারীরিক, মানসিক বা আবেগপ্রবণভাবে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি আপনার আত্মবিশ্বাসহীনতা বা হীনম্মন্যতার কারণ। একনজরে টক্সিক সঙ্গীর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—

  • যে আপনাকে মূল্যায়ন করে না

  • প্রতিনিয়ত আপনার সমালোচনা করে বা ভুল বের করে

  • আপনার ওপর কর্তৃত্ব ফলায়

  • অপমান করে

  • আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে

  • আপনার মতামতের মূল্য দেয় না  

  • আপনাকে আপনার সাপোর্ট সিস্টেম থেকে দূরে রাখে

  • নিজের ভুল বা খারাপ অবস্থার জন্য আপনাকে দোষারোপ করে

  • আপনার প্রতি সৎ থাকে না

  • আপনার চাহিদা বা ইচ্ছার মূল্যায়ন করে না  

  • আপনাকে ক্রমাগত মানসিক চাপে রাখে ইত্যাদি 

আপনার কোন বৈশিষ্ট্যগুলো এ রকম নেতিবাচক বা টক্সিক সঙ্গীকে টানে

১. নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবা
আপনি নিজেই যদি নিজেকে মূল্যায়ন না করেন, সেটা সঙ্গীর কাছ থেকে কীভাবে আশা করেন? যাঁরা নিজেরা নিজেদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নন, নিজের মূল্যায়ন করেন না, নিজেকে আশপাশের মানুষদের চেয়ে ‘ছোট’ ভাবেন, নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, তাঁরা এ ধরনের মানুষকে নিজেদের জীবনে আমন্ত্রণ জানান, জায়গা দেন।

২. নিজের আবেগ, অনুভূতির ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা
আপনি তখনই অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন, যখন আপনার নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আপনি সহজেই নেতিবাচক বা টক্সিক মানুষের প্রেমে পড়বেন।

৩. অতীতের ট্রমা কাটিয়ে না ওঠা
ছোটবেলার নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, পুরোনো সম্পর্কের তিক্ততা, অফিসের টক্সিক আবহাওয়া বা জীবনের যেকোনো সময়ে অ্যাবিউজিভ সম্পর্কের ট্রমা আপনি যদি কাটিয়ে না ওঠেন, তাহলে সমূহ সম্ভাবনা আছে, আপনি এই চক্র থেকে বেরোতে পারবেন না। আপনি আবারও সেই চক্রের ফাঁদে পা দেবেন। একাধিক গবেষণায় এই ফলাফল দেখা গেছে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ভয়ে ভয়ে থাকা, নেতিবাচক চিন্তা করা মানুষেরা নেতিবাচক সঙ্গীকে আকর্ষণ করেন। এ জন্য থেরাপি, কাউন্সেলিং, শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন ও বন্ধুত্ব খুবই জরুরি।

আরও পড়ুন

৪. সম্পর্কে দেয়াল না তোলা  
আপনি কোন ধরনের মানুষকে জীবনে ঠাঁই দেবেন, কাদের সঙ্গে কেবল পেশাদার বা প্রয়োজনের সম্পর্ক আর কাদের সঙ্গে তার চেয়ে একটু বেশি, কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন আর কী ধরনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াবেন, এই সম্বন্ধে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কিছু মানুষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা অত্যন্ত জরুরি। টক্সিক সম্পর্কে দেয়াল তোলা বা সম্পর্কে সুরক্ষিত থাকা আপনার নিজের মানসিক ও আবেগপ্রবণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

৫. ভাবছেন, আপনি ভালোবাসা দিয়ে সারিয়ে তুলবেন?
সম্পর্কে সঙ্গীর নেতিবাচক ও টক্সিক ব্যবহার, কর্মকাণ্ড থেকে অনেকেই ভাবেন, তিনি ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে বদলে দেবেন। সাধারণত ‘কেয়ারগিভার’ বা মমতাময়ী নারীদের ভেতর এই ‘ফ্যান্টাসি’ বা মোহ কাজ করে। সেই চক্রে আটকা পড়ে একসময় তাঁদের জীবনী শক্তিই ফুরিয়ে যায়। আর অপর পক্ষ একই রকম থাকে বা তাদের টক্সিক আচরণ আরও বাড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একই রকম বাস্তবতা দেখা যায়। তাই রেড ফ্ল্যাগকে রেড ফ্ল্যাগ হিসেবেই নিন। আগেই সতর্ক হোন।

৬. সঙ্গীর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা
আপনি যদি অর্থনৈতিক ও আবেগপ্রবণ যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্গীর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হন, তবে সঙ্গী আপনাকে ‘ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে নেবে। ফলাফল, টক্সিক আচরণ!

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন