নতুন বউ যেভাবে চলবেন শ্বশুরবাড়িতে
বিয়ের পরপরই ছোটখাটো বা সাধারণ পরিবর্তনগুলো মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধায় পড়েন নারীরা। ঘর, আলমারি, খাবার টেবিল, খাবারের ধরন—সবকিছুতেই ভিন্নতা। একেক বাড়ির একেক নিয়ম। এমনকি দুজন মানুষের মনের মিল থেকে সম্পর্কের সূচনা হলেও সংসারজীবনে এসে অনেক ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয় জীবনযাত্রার নানা অমিল। পরিচিত পরিসর ছেড়ে নতুনত্বে মানিয়ে নিতে নিজেকে যেমন একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন, তেমন এই সময়ে নতুন পরিবারের কারও সঙ্গে খুটখাট লেগে গেলে, তা সহজভাবে সামলে নেওয়াও আবশ্যক। না হলে প্রথম জীবনের এই তিক্ততা রয়ে যেতে পারে পরবর্তী সময়েও।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজের মনের ভেতর কাউকে তুলনামূলক অবস্থানে বসানো যাবে না। নিজের মা-বাবা-ভাই-বোনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমিল থাকবেই। বিষয়টাকে সহজভাবে নিন, নিজের নতুন পরিবার হিসেবে গ্রহণ করুন তাঁদের। নিজের জীবনের আবশ্যকতাগুলো নিজের মতো করেই পূরণ করে নেওয়ার মানসিক জোর থাকতে হবে। নিজস্ব জায়গাটুকুয় কাউকে অনধিকারচর্চা করার সুযোগ দেবেন না। আবার নিজস্বতা ধরে রাখতে গিয়ে কঠোর মনোভাবও প্রকাশ করবেন না।
জানিয়ে রাখুন, আপনি আসলে কেমন
প্রথম অবস্থায় ‘আদর্শ বউ’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টাতেই যাবেন না। পরবর্তী সময় এটি ঝামেলা বাড়াবে। তাই আপনি যেমন, তেমনই থাকুন একেবারে প্রথম দিন থেকে। ধরা যাক, শ্বশুরবাড়িতে প্রথম সন্ধ্যায় আপনাকে চা বানাতে বলা হলো, কিন্তু আপনি হয়তো রোজ চা বানাতে অভ্যস্ত নন, কিংবা আপনার অফিস শেষে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়, তাই ভবিষ্যতে তাঁরা চাইলেও আপনি রোজ সন্ধ্যায় তাঁদের চা করে দিতে পারবেন না। এমন ক্ষেত্রে সেদিন আপনি তাঁদের কথা রাখলেও হাসিমুখে বলে দিতে পারেন, আপনার হাতের ‘বিশেষ’ চা কেবল ‘বিশেষ’ দিনেই পাওয়া যায়; আর আজ তেমনই ‘বিশেষ’ একটা দিন।
নিজের জায়গা ঠিক থাকুন
কে কোন ধরনের রান্না খেয়ে অভ্যস্ত কিংবা কে কতটা ঝাল সইতে পারেন, এগুলো নিয়ে খাবার টেবিলে ছোটখাটো ঝামেলা হতেই থাকে। নতুন বউ হিসেবে চুপ করে থাকবেন না। সমস্যা হলে অবশ্যই তাঁদের সে সম্পর্কে জানান। তাঁরা সমাধান না করতে পারলে, তা নিয়ে অভিমান করবেন না। নিজের খাবারের ব্যবস্থা নিজেই করে নিন। যদি অনুভব করেন, ছোটখাটো স্বাভাবিকতা কিংবা অভ্যস্ততা জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, নিজের জন্য অবশ্যই ভাবুন। নিজস্বতা বজায় রাখতে নিজেই সচেষ্ট হোন।
বাবার বাড়িতে হয়তো আপনি নিজের সব কাপড় ছাদে মেলে দিতেন। শ্বশুরবাড়িতে হয়তো সব কাপড় ছাদে দেওয়ার চল নেই। এমন অবস্থায় আপনি একটু অসুবিধায় পড়তে পারেন। কী করবেন তখন? শ্বশুরবাড়ির দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা গুরুজনদের কাছে নম্রভাবে নিজের সমস্যার কথা বলুন। আবার আপনার হয়তো ঝুম বৃষ্টির দিনে ছাদে গিয়ে বৃষ্টির পরশ নিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু ‘বউ মানুষ’ এভাবে ভিজলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা হয়তো তা সহজভাবে নেন না। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন। দুর্বল হয়ে পড়া যাবে না। আবার মারমার কাটকাট ভঙ্গিতে অভিযোগও করা যাবে না। তর্কবিতর্কে মোটেই যাবেন না। কেউ রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে বসলেও চুপ করে থাকুন। মনে রাখবেন, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। নিজের শিক্ষাদীক্ষা ও পারিবারিক মর্যাদা বজায় রাখুন। রাগের মুহূর্তে চুপ থেকে বরং পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষা করুন। এরপর নিজের কথা বুঝিয়ে বলুন। একদিনেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়।
সময় দিন, সময় নিন
বিয়ের কদিন যেতে না যেতেই পরিবারের সবার খাবার, সংসারের বাজার কিংবা অন্য কোনো পারিবারিক বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কথা না বলাই ভালো। আপনি হয়তো সংসার করার আনন্দটা প্রথম সময় থেকেই উপভোগ করতে চাইছেন। কিন্তু এমনও হতে পারে, যিনি ওই সংসারের সবকিছু এত দিন সামলেছেন, তিনি এ মুহূর্তে সব দায়িত্ব আপনার হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত নন। এ রকম অবস্থায় কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিরোধে যাওয়া যাবে না। তাঁকেও আপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হতে সময় দিন। বরং এই সময়টুকু উপভোগ করুন।
এমনও হতে পারে, আপনি আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আলাদাভাবে সময় কাটানোর সুযোগই পাচ্ছেন না। বাড়িভর্তি লোকজন বা শিশুদের উপস্থিতি আপনাকে ক্লান্ত করে তুলছে। এমন ক্ষেত্রে পরিবারের গুরুজনেদের বুঝিয়ে বলে জীবনসঙ্গীকে নিয়ে বাইরে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।
বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ছোটোখাটো মতের অমিল থেকে শুরু করে বড়সড় অশান্তি, যেকোনো কিছুরই সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। তবে নিজস্বতা বজায় রেখে সবটা সামলে নিতে চেষ্টা করুন। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের আচরণে কষ্ট পেলে সেখানে জীবনসঙ্গীকে কটু কথা বলবেন না বা কারও কাছে কোনো অভিযোগ করবেন না। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা থাকবে অবশ্যই। তবে শুরু থেকেই তাঁদের সব ‘হ্যাঁ’-তে ‘হ্যাঁ’ বলবেন না, সব ‘না’-তে ‘না’ বলবেন না। আর নিজের ব্যক্তিগত সীমানায় অন্য কাউকে ঢুকতে না দেওয়াই ভালো।
সূত্র: ফেমিনা