নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিয়ে যেসব বিপদ আমরা ডেকে আনি
সন্তানের ভালো সব মা–বাবাই চান। তবে অনেক ক্ষেত্রে মা–বাবা তাঁদের পছন্দ–অপছন্দ অবলীলায় চাপিয়ে দেন সন্তানের ওপর। এতে সন্তানের মধ্যে তৈরি হতে পারে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ। মা–বাবার ওপর চাপা ক্ষোভ তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তাই জেনে রাখুন নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার পরিণাম কী হতে পারে। পাশাপাশি জেনে রাখুন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্তানকে সহযোগিতা করার কিছু পরামর্শ।
নিজেদের পছন্দ–অপছন্দ চাপিয়ে দেওয়ার বদভ্যাস তো আছেই, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা–বাবা তাঁদের সন্তানের সঙ্গে কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করেন না। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্তান ভবিষ্যতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ, তারা যে সব সময় মা–বাবার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের সিদ্ধান্ত আরেকজন নেওয়াতে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে পারছে না। এসব ক্ষেত্রে তারা খুব সহজেই অন্যের কথায় প্রভাবিত হতে পারে। সংকট দেখা দেয় আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদারও। কোনো কিছুই নিজের চাহিদামাফিক না হওয়ার ফলে তৈরি হতে পারে হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ। আর আগেই বলেছি, এর ফলে মা–বাবার ওপর চাপা ক্ষোভ তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কী করবেন
ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলো সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই নিতে শেখান। যেমন সে কী পড়বে বা কী খাবে—এসব তাকেই ভাবতে দিন। সন্তানের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করা হলে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠবে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অল্প কিছু বিকল্প পছন্দ রাখুন সন্তানের সামনে। যেমন বেড়াতে বের হওয়ার আগে তাকে কয়েকটা পোশাক ঠিক করে দিন। বেছে নিতে বলুন। শিশুদের সামনে খুব বেশি ‘অপশন’ থাকলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সন্তানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ব্যাখ্যা দিন। ভালোমন্দ দিকগুলো তুলে ধরুন। আপনার ব্যাখ্যা তাকে পরবর্তী সময়ে কোন বিষয়কে কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়, তা ভাবতে শেখাবে।
সন্তানের সিদ্ধান্তের ভালোমন্দের দায়িত্ব তাকেই নিতে দিন। অনেক সময় তার ভুল সিদ্ধান্তকে আমরা ঠিক করে দিই অথবা উপেক্ষা করে যাই। যেমন, সন্তান হয়তো নীল রঙের জামা কিনতে চাইল, তাকে তা কিনেও দেওয়া হলো। কিন্তু কেনার পর যদি সে তা পরতে না চায় অথবা ভালো না লাগে, তাহলে স্নেহের বশবর্তী হয়ে আমরা তাকে আরেকটি কিনে দিই। তা না করে যদি তাকে বলা হয় এটি তার নিজেরই পছন্দ এবং যদি বলা হয় পরবর্তী সময়ে সে যখন কিছু করবে, তখন যেন আরও ভেবেচিন্তে করে। সে ক্ষেত্রেও কিন্তু সে একটু একটু করে সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। এমনকি ভুল হলে তার দায়ভারও নিতে শিখবে।
একই সঙ্গে তার সিদ্ধান্ত যদি সঠিক হয়, তবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তার প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা তাকে উদ্দীপ্ত করবে এবং নিজের মতামত দিতে তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
আপনি যখন নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখনো কিন্তু তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। সেটিও তাকে ভাবতে সাহায্য করবে। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে সাহায্য করবে।
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার সন্তানকে আত্মপ্রত্যয়ী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আপনার এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো সন্তানকে বড় হতে সহায়তা করবে, যার ভিত রচনা করতে হবে শৈশব থেকেই।
সূত্র: ব্রাইট সাইড