২৩ টাকায় আলুভর্তা, ডাল–ভাত

চট্টগ্রামের শ্রী নারায়ণ পাইস হোটেলছবি: জুয়েল শীল, চট্টগ্রাম

আলুর কেজি ৫০ টাকা। আলুভর্তা, সবজি ও ডাল দিয়ে এক বাটি ভাত এখনো ২৩ টাকা। কল্পনা করা যায়! ১৮৫ হাজারী লেনের শ্রী নারায়ণ হোটেলে এখনো এই দামে সকালে ভূরিভোজের ব্যবস্থা রয়েছে। হিন্দু পাইস হোটেল। প্রায় অর্ধশত বছরের পুরোনো এই খাবার হোটেলটি।

ছবি: জুয়েল শীল, চট্টগ্রাম

টেবিলে সাজানো স্টিলের থালা–বাটি ও গ্লাস। অতিথি আসার সঙ্গে সঙ্গে গরম পানি নিয়ে হাজির কর্মী। অতিথি নিজ হাতে থালা–বাটি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার পর খাবারের মেনু জানিয়ে দেওয়া হয়। বালতি হাতে অপরজন ভাত নিয়ে এগিয়ে আসেন। বাটিভর্তি ভাত ঢেলে দেন পাতে। এরপর চাহিদামতো মাছ, মাংস চলে আসে।

বেড়ার ঘর দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল হোটেলটির। এখন পাকা করা হয়েছে। মেঝেতে টাইলস বসানো। চাকচিক্য বাড়লেও গ্রাহক কমেছে। মূল মালিক অরুণ চক্রবর্তী। ২৩ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে কথা হয় হোটেলের ব্যবস্থাপক মিলন চক্রবর্তীর সঙ্গে।

‘হোটেলটির বয়স ৪৫ বছরের বেশি। একসময় বেড়ার ঘরে প্রায় ৪০ জন অতিথি একসঙ্গে বসতে পারতেন। পাকা করার পর ছোট হয়ে গেছে। একইভাবে তখন মানুষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুলভ দামের জন্য এখানে ছুটে আসতেন। সেই ব্যবসা আর নেই। আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক হিন্দু পাইস হোটেল,’ বললেন মিলন চক্রবর্তী।

ছবি: জুয়েল শীল, চট্টগ্রাম

হিন্দু পাইস হোটেলের এই রীতি বহু পুরোনো। চট্টগ্রামে একসময় অনেক হিন্দু পাইস হোটেল ছিল। কালক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে। রেয়াজউদ্দিন বাজারের সাবিত্রী পাইস হোটেল, হাজারী লেনের মিতালী হোটেল, কাকলী হোটেল, সত্য নারায়ণ হোটেলসহ অনেক হোটেল ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। এখনো পুরোনো পাইস হোটেলের মধ্যে হাজারী লেনের হ্যাপিলজ, রেয়াজউদ্দিন বাজারের মহামায়া হিন্দু হোটেল আর রুচিতা কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

নারায়ণ হোটেলও একইভাবে ঢিমেতালে চলছে। একসময় যখন রমরমা ছিল, তখন এই দোকানে কর্মী ছিলেন ১০ জন। এখন তা পাঁচজনে ঠেকেছে। প্রতিদিন দুপুর ও রাতের খাবারের বাইরেও সকালবেলা ডাল–ভাত ও আলুভর্তার ব্যবস্থা থাকে। পাচকের দায়িত্বে থাকা শিবু প্রসাদ দেব বললেন, ‘প্রতি বেলার রান্না আলাদাভাবে করি। কোনো কিছু বাসি থাকে না। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। যার কারণে মানুষের একটা টান থাকে।’

ছবি: জুয়েল শীল, চট্টগ্রাম

এখানকার গ্রাহক কিংবা অতিথিরা বাঁধা থাকেন। স্থানীয় ওষুধ, কাপড়, সোনাসহ বিভিন্ন দোকানে চাকরি করা লোকজন নিয়মিত এই হোটেলগুলোতে খাওয়া-দাওয়া করেন। দুপুরেই দেখা হয়ে গেল সত্তরোর্ধ্ব ঝুন্টু দের সঙ্গে। তিনি একটি কাপড়ের দোকানের ব্যবস্থাপক।

থালা–বাটি ধুতে ধুতে ঝুন্টু দে বলেন, ‘এখানে সকাল–বিকেল ভাত খাচ্ছি ৩০ বছর ধরে। দামে কম, খাবারও ভালো। তাই নিয়মিত আসি।’

শুক্রবার দুপুরের মেনুতে ছিল খাসির মাংস, মুরগি, রুই মাছ, সবজি, ডাল ইত্যাদি। রুই মাছ দিয়ে এক বাটি ভাত খেলে দাম পড়ে ৭০ টাকা। খাসির মাংস হলে তা দাঁড়ায় ১২০ টাকা। ইলিশ ভাত নিলে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এখন প্রতিদিন মাছের পাশাপাশি মাংসও রাখা হচ্ছে। দাম নির্ধারিত আগে থেকেই। বাজার চড়া হলেও আগের দামই রাখা হয়।

ছবি: জুয়েল শীল, চট্টগ্রাম

মিলন চক্রবর্তী বললেন, ‘সকালে আলুভর্তা, ডাল, সবজিসহ এক বাটি ভাত মেলে ২৩ টাকায়। এখন আলুর দাম বাড়তি। তবু আমাদের চালিয়ে নিতে হচ্ছে। হয়তো ভর্তার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সব স্থায়ী গ্রাহক। তাই চাইলেও আমরা দাম বাড়াতে পারি না।’
সুলভ মূল্যে খাবার মিললেও গ্রাহক কমে যাওয়ার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মিলন বললেন, বাড়ি কিংবা দোকানে গ্রাহকের কাছে টিফিন বক্সে খাবার সরবরাহ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া বেড়েছে অন্যান্য হোটেলও। তাই জৌলুশ হারিয়েছে পাইস হোটেল।