সেঁজুতির অন্য ল্যাব

অণুজীবের সঙ্গে অফিসের ল্যাবে কাটে অনেকটা সময়। বাড়ি ফিরে ঢোকেন আরেক ল্যাবে। অফিসের ল্যাবের মতো এই ল্যাবও তাঁর অতি প্রিয়। সেখানে মাছের সঙ্গে শাক বা ডালের সঙ্গে মুড়ো মিশিয়ে করেন আরেক রকম পরীক্ষা। জিবে জল আনা সেই পরীক্ষার গল্প শুনিয়েছেন অনুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা

ঠাকুমার হাতে রান্নার হাতেখড়ি হয়েছিল সেঁজুতি সাহার
ছবি: কবির হোসেন

চাঁদপুরে ঠাকুমার কাছে কেটেছে সেঁজুতি সাহার ছোটবেলা। দুপুরে বাড়ির সবাই যখন ভাতঘুম দিত, সেঁজুতি দেখতেন পত্রিকা থেকে রেসিপি কেটে রান্নাঘরে নিয়ে রাখছেন ঠাকুমা। সময়–সুযোগমতো ঠাকুমা দুলালী প্রভা সাহার ল্যাবে (রান্নাঘরে) সেগুলো নিয়ে চলত পরীক্ষা–নিরীক্ষা। তারপর একদিন টেবিলে পরিবেশিত হতো সেই পরীক্ষার ফল। বেশির ভাগ সময়ই ফল খেয়ে সবাই তৃপ্ত হতেন।

ঠাকুমার ল্যাবে তখন সহকারী ছিলেন ছোট্ট সেঁজুতি। এই সময়ে নাতনিকে রান্নাবান্নার নানা খুঁটিনাটি শিখিয়েছেন দুলালী প্রভা সাহা। রান্নার প্রতি ভালোবাসাটাও সেখান থেকেই পাওয়া। মা–বাবাও উৎসাহ দিতেন। তাই বাসায় কোনো নিমন্ত্রণ থাকলে সেঁজুতির ভাগেও থাকত একটি খাবার তৈরির দায়িত্ব। সেঁজুতি বলেন, ‘শুরুতে আপেল সালাদ টাইপের ছোট ছোট আইটেম করতে দিত। বড় হয়েছি আর রান্নাঘরের দায়িত্ব পেয়েছি আরও বেশি।’ বিদেশে থাকতে ব্লগ তৈরি করেও নিয়মিত দেশি–বিদেশি রান্না শেয়ার করতেন সেঁজুতি।

আরও পড়ুন

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পরিচালক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার দিন এখন যতই ল্যাবে ভাইরাস আর জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাটুক, বাড়ি ফিরে রান্নাঘরে যাবেনই। কখনো নিজে রাঁধেন, কখনো তদারক করেন। নানা দেশ ঘুরে নানা রকম রান্না খেয়েছেন। নিজেও রাঁধতে পারেন দেশি–বিদেশি নানা খাবার। তবে সেরার তালিকা করতে গেলে দেশেই ফিরতে হবে বলে মনে করেন সেঁজুতি সাহা। বলেন, ‘ঘুরেফিরে তিন বেলার খাবারে মা আর ঠাকুমার রেসিপিগুলোই সেরা। আসলে বাঙালি খাবারের তুলনা হয় না। শাক–পাতা বা ভর্তা–ভাতেও যে এতটা তৃপ্তি মেলে, সেটা একবার দেশের বাইরে যাওয়া যে কেউ স্বীকার করবেন।’

‘বাঙালি খাবারের তুলনা হয় না,’ বললেন সেঁজুতি সাহা
ছবি: কবির হোসেন

বর্ণিল খাবারদাবার-এর জন্য যেসব রান্না তিনি করেছেন, সেসব তাঁদের বাড়ির নিয়মিত খাবার। শেষ পাতের রেসিপিটা বিষয়ে সেঁজুতি। জানালেন, ‘এটা অন্য কোথাও খাইনি। মায়ের নিজের মতো করে তৈরি করা এই খাবার যে খায়, সে–ই পছন্দ করে।’ ঠাকুমার কাছে শেখা ভাপে চিংড়িটা সেঁজুতির হাতে সবাই পছন্দ করেন। তবে সেঁজুতি মনে করেন, ‘এই রান্নাটা ঠাকুমার হাতেই বেস্ট।’

২০২০ সালে মারা গেছেন ঠাকুমা। তবে সেঁজুতি সাহা এখনো ঠাকুমাকেই মিস করেন বেশি। বিশেষ করে রান্নার সময়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত হুইলচেয়ারে বসেও যিনি তদারক করেছেন বাড়ির হেঁশেল, সেই বাড়িতে রান্না করতে গেলে তো দুলালী প্রভাকে মনে পড়বেই।

কাঁচা কলার কাবাব

কাঁচা কলার কাবাব
ছবি: কবির হোসেন

উপকরণ: বড় আকারের কাঁচা কলা ২টি, পেঁয়াজ ১ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ২টি, লবণ স্বাদমতো, শর্ষের তেল ১ চা–চামচ, ডিম ১টি ও বিস্কুটের গুঁড়া ১ কাপ।

প্রণালি: কলার খোসাসহ ভালো করে ধুয়ে পানিতে ১০ মিনিট সেদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে কাঁচা কলার সঙ্গে কুচি কুচি করে কাটা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ কুচি, লবণ ও শর্ষের তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মাখানো কলা ছোট ছোট করে কাবাবের আকারে গড়ে ভালো করে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ায় মেখে হালকা তেলে ভেজে নিন।

মুড়িঘন্ট

মুড়িঘন্ট
ছবি: কবির হোসেন

উপকরণ: বড় রুই অথবা কাতলা মাছের মাথা ১টি, মাঝারি আলু ৩টি, হলুদগুঁড়া ১ চা–চামচ, মরিচের গুঁড়া আধা চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, লবণ ১ চা–চামচ, আধা কাপ (চায়ের কাপ) পোলাওর চাল, তেজপাতা ২টি, হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা–চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা–চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা–চামচ, আদাবাটা আধা টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ চা–চামচ, গরমমসলা আধা চা–চামচ ও তেল আধা কাপ।

প্রণালি: মাছের মাথা ৩-৪ টুকরা করে নিন। আলুগুলো প্রতিটি ৪ টুকরা করে কেটে তেলে ভেজে তুলে রাখুন। আলু যেন ভাজিতেই আধা সেদ্ধ হয়ে যায়। এবার মাথার টুকরাগুলোতে হলুদগুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, আদাবাটা ও লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর মাখা মাছের মাথা ভালো করে তেলে ভেজে কড়াই থেকে উঠিয়ে নিন। মাথা ভাজির তেলে পোলাওর চাল, তেজপাতা, আধা চা–চামচ হলুদগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, আদাবাটা ও লবণ দিয়ে দুই মিনিটের মতো ভেজে আধা কাপ পানি দিয়ে মসলা আর চাল ভালো করে কষে নিন। কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে ভেজে রাখা মাছের মাথা, আলু দিয়ে নেড়ে দুই চায়ের কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে নিন। নামানোর আগে মাথার টুকরাগুলো চামচ দিয়ে হালকা ভেঙে দিন। কয়েকটি আস্ত কাঁচা মরিচ দিয়ে মাখা মাখা ঝোল রেখে, চিনি ও গরমমসলা দিয়ে নামিয়ে নিন। আলু যেন ভেঙে না যায়।

লাউ ডাল

লাউ ডাল
ছবি: কবির হোসেন

উপকরণ: মুগ ডাল ১ কাপ, মসুর ডাল আধা কাপ, লাউয়ের টুকরা ২ কাপ, তেজপাতা ২টি, হলুদ ১ চা–চামচ, আদাবাটা ১ চা–চামচ, জিরাবাটা ১ চা–চামচ, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: মুগ ডাল শুকনা তাওয়ায় হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। মসুর ডাল ও মুগ ডাল একসঙ্গে ৩ কাপ পানি দিয়ে চুলায় স্বাভাবিক তাপে বসাতে হবে। ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে মাঝারি আকারে কাটা লাউ সেদ্ধ ডালে ঢেলে সেদ্ধ করে নিন। সঙ্গে দিন তেজপাতা, হলুদ, আদাবাটা, জিরাবাটা ও লবণ।

লাউ সেদ্ধ হয়ে গেলে আলাদা একটা কড়াই গরম করে ১ টেবিল চামচ তেল দিন। তার মধ্যে আধা চা–চামচ পাঁচফোড়ন দিন। এবার সেদ্ধ লাউ আর ডাল ঢেলে দিয়ে নামিয়ে ফেললেই হবে।

নামানোর আগে আধা চা–চামচ চিনি দিন।