যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনেক বাঙালি আর ভারতীয়ই শখ করে বাসায় রান্না করে শুঁটকির তরকারি। মূলত খাবারে রুচির পরিবর্তন করতে শুঁটকি খান তাঁরা। বাংলাদেশি হোটেলগুলোতে বেশ জনপ্রিয় শুঁটকি। তবে শোভা তালুকদারের রান্না করা শুঁটকিতে আমি পাই খাঁটি ঘ্রাণ। শোভা তালুকদারের বাড়ি বাংলাদেশের হবিগঞ্জ। উনি এখানে (নিউইয়র্কে) একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন। তাঁর বাসায় দাওয়াত খেতে গেলে শুধু শুঁটকি দিয়েই খেয়ে ওঠার চেষ্টা করি। তাই শোভাকে বললাম, ‘রান্নাটা তুমি আমাকে শিখিয়ে দাও।’ সে বলল, ‘ভাই, এটা তো একদম সহজ। চলেন আপনাকে হাতে-কলমে শিখিয়ে দিই। কম তেলে কয়েক প্রকার সবজি আর চিংড়ি মাছ দিয়ে দিয়ে আজকে আমরা রান্না করব শোল মাছের শুঁটকি।’ ব্যাস, শুরু হয়ে গেল।
রান্নার প্রয়োজন ক্রমানুসারে উপকরণ:
আড়াই চামচ তেল। লবণ। মাঝারি সাইজের একটা পেঁয়াজকুচি। হাফ চামচ হলুদের গুঁড়া, দেড় চামচ লাল মরিচের গুঁড়া, আধা চামচ ধনেগুঁড়া ও আধা চামচ রসুনবাটা। ১৫০ গ্রাম শোল মাছের শুঁটকি, দুটি চেপা শুঁটকি ও ৬টি মাঝারি আকৃতির চিংড়ি মাছ।
২০০ গ্রাম পরিমাণ দুটো লাল আলু। একই পরিমাণ লম্বা আকৃতির বেগুন, সিম ও কচুর মুখি। ছয়টি লম্বা করে কাটা কাঁচা মরিচ। সবগুলো ধুয়ে শুঁটকির সমান আকৃতির করে কাটতে হবে।
শোভা যেভাবে বলেছে, আমি সেভাবেই লিখছি।
‘ভাই, প্রথমে তেলটা কড়াইয়ে দিয়ে লবণ দিয়ে দিতে হবে। গরম হওয়ার পর পেঁয়াজ আর রসুনবাটা দিতে হবে। শুঁটকির তরকারিতে সব সময় যত কম তেল দেওয়া হয়, তত স্বাদ হয়। তারপর একে একে সব মসলা দিয়ে অল্প আঁচে কষাতে হবে। যদি কড়াইয়ের তলায় মসলা লেগে যাওয়ার উপক্রম দেখেন, তাহলে একটু জল দেবেন। মসলা কষানো হতে হতে আলাদা একটি তাওয়াতে শুঁটকি ও চেপা শুঁটকি হালকা করে ভেজে নেবেন। মসলা কষানো হলে প্রথমে দুটি চেপা শুঁটকি আর সামান্য জল দিয়ে নাড়তে হবে। চেপা শুঁটকিকে অনেকে সিদল বলে। চেপা শুঁটকি এটি দেওয়া হচ্ছে মূলত ঘ্রাণের জন্য।’
বললাম, এই তাহলে তোমার রহস্য। এই জন্যই তোমার এই রান্নাটা আমি খুব পছন্দ করি। শোভা বলে, ‘এখন তো হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছি, আপনি নিজেই রান্না করতে পারবেন।’ এরপর শোভা আবার ফিরে গেল রেসিপিতে, ‘চেপা শুঁটকির পর দিয়ে দেবেন শোল মাছের শুঁটকি আর চিংড়ি।’
‘কম আগুনে কিছু সময় মসলা ও শুঁটকি জ্বাল দেওয়ার পর দিয়ে দেবেন লাল আলু। খানেক পর অন্যান্য সবজি দিয়ে আরেকটু সময় কষাবেন। এখন দেখবেন সবকিছু একটু মাখা মাখা হয়ে আসছে। তখন জল ঢেলে দেবেন। ১৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। তারপর কাঁচা মরিচগুলো ছেড়ে দিন। আবার ঢাকনা দিয়ে দিন। যাতে কাঁচা মরিচসহ সব ঘ্রাণ রান্নার ভেতর থাকে। আরও ১০ মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলতে পারেন।’ ‘এ তো দেখি একদম সহজ।’ বললাম আমি।
‘জি ভাই, রান্নার প্রক্রিয়া সহজ। মনোযোগ দিয়ে আমি যেভাবে বলছি, সেভাবে করলে মজার হবে। রান্নাটা আসলে রেসিপি আর মসলার সঙ্গে আপনি কতটা মন দিয়ে করছেন, সেটির ওপরও স্বাদ নির্ভর করে। ভাই, গরম ভাত দিয়ে খেলে খুব মজা পাবেন। শুঁটকির তরকারি আমি লেবু আর কাঁচা মরিচ দিয়ে খাই। আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন।’