মক্কায় বাংলাদেশি বাজার
সৌদি আরবের মক্কায় গিয়ে পাইকারি দামে বাংলাদেশি সবজি অথবা সস্তায় ফল, মাছ কিনতে চাইলে যেতে হবে নাক্কাসা এলাকায়। কেউ কেউ হালাকার (পাইকারি বাজার) কথা বলবেন। সেখানে কার্টন ধরে সব কিনতে হয়। মসজিদুল হারাম থেকে ইব্রাহিম খলিল রোড ধরে দুই কিলোমিটার দূরেই নাক্কাসা। বাংলাদেশিদের পল্লি এই নাক্কাসা। অনেকে নাকাসাও বলেন।
নাক্কাসা থেকে সবকিছু সুলভে কেনা যায়। সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে, যেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আছি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সেখানে কথা বলা যায়। রাস্তায় পানবিক্রেতাও অনেক। আশ্চর্যের কথা হলো, তাঁরা শুধু পানই বিক্রি করেন। সিগারেট বা চা নেই। ক্ষেত্রবিশেষে দুই বা তিন খিলি পানের দাম এক রিয়াল। ফিক করে পানের রস ফেলার দৃশ্যও হরহামেশা চোখে পড়বে।
নাক্কাসার রাস্তাঘাটের অবস্থা আমাদের দেশের মতোই। সবকিছুই বাংলাদেশি। ফুটপাতের দোকান, কাঁচাবাজার, হোটেল—সবই। কাঁচাবাজারে বেগুন, লতি, ধনেপাতা, ঝিঙে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র—সবকিছুই পাওয়া যায়। সেগুলো একেবারে দেশি। দোকানদার, ক্রেতা সবাই বাংলাদেশি। দেশের মাছ, মাংস, তরকারি সবই পাওয়া যায়।
বাজারে বড় মুরগি পাওয়া যায়। কেটে পরিষ্কার করে দেবে। সঙ্গী বাবরকে নিয়ে একবার মুরগি কিনতে গিয়েছিলাম। মুরগি কাটার জোগাড় দেখে মনে হলো আমাদের দেশে গরু-ছাগল কাটতেও এত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না।
খাবার হোটেলে দেশীয় পদ্ধতিতে রান্না করা কোরাল, ছুরিসহ নানা সামুদ্রিক মাছের তরকারি পাওয়া যায়। মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু আরাকানি লোক সৌদি আরবে যান। যাঁদের জন্ম হয়েছে এই নাক্কাসাতে, তাঁদের অনেকের জানা নেই, নিজের দেশ মিয়ানমারের আরাকান কেমন। রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্ম সৌদিদের মতোই অবিকল আরবিতে কথা বলেন। ভাষা, পোশাক, চালচলনও তাঁদের মতোই। বংশপরম্পরায় বসবাস করে নাক্কাসাতেই তাঁদের বেড়ে ওঠা। নাক্কাসাতেই তাঁদের বিয়ে। অনেকেই সৌদি নাগরিকের কাছে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বিবাহিত রোহিঙ্গা নারীর সন্তানদের অনেকেই সৌদি নাগরিকত্ব পেয়েছেন। রোহিঙ্গাদের অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।