বেগুন রান্না খুব সহজ নয়

ভর্তা আর দেশি স্টাইলে ভাজি বা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে মিশেল দিয়ে বেগুন খেয়েই কেউ যদি ভাবেন, বেগুন রান্না করা খুব সহজ তাহলে ভুল হবে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে তো বটেই, আমাদের দেশেও বেগুনের কিছু রেসিপি আছে যেগুলো রান্না করা বেশ কঠিন আর সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সেগুলো খেতে সুস্বাদু। দেখে নিন ‘নকশার’ কিছু রেসিপি। ভালো লাগলে রাতের রান্নায় রেঁধে ফেলুন।

মোসাকা

উপকরণ

গরুর মাংসের কিমা ১ কেজি, রসুন কুচি ১ টেবিল-চামচ, টমেটো (কিউব করে কাটা) ২টি, পাপরিকা ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, মাখন ৪ টেবিল-চামচ, পনির ঝুরি করা ১ কাপ, লবণ ২ চা-চামচ+১ টেবিল-চামচ+১ টেবিল-চামচ, তেল আধা কাপ, টমেটো পিউরি ১ কাপ, পার্সলে ১ চা-চামচ, জায়ফল গুঁড়া আধা চা-চামচ, পুদিনা পাতা কুচি ১ টেবিল-চামচ, বেগুন (আধা ইঞ্চি পুরু) গোল করে কাটা দেড় কেজি, ময়দা ২ টেবিল-চামচ, স্লাইস চিজ প্রয়োজনমতো।

মোসাকা
ছবি: প্রথম আলো

প্রণালি

বেগুন সামান্য পানিতে ১ টেবিল-চামচ লবণ দিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। কষ বের হয়ে গেলে পানি ছেঁকে নিন। বেগুন ধুয়ে ১ টেবিল-চামচ লবণ মেখে ১ ঘণ্টা রেখে দিন।

ফ্রাইপ্যানে অল্প তেল দিন। আঁচ কমিয়ে সামান্য তেলে বেগুনগুলো ভেজে তুলে রাখুন। ঢেকে ভাজতে হবে যেন বেগুন সেদ্ধ হয়। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, বেগুন যেন সোনালি রং না হয়।

এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে রসুন কুচি দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন। কিমা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। মাংস সোনালি রং হয়ে এলে টমেটো পিউরি, টমেটো কুচি, পার্সলে, জায়ফল গুঁড়া, পাপরিকা, পুদিনা পাতা কুচি, ২ চা-চামচ লবণ এবং গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে রান্না করুন। আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। ১ কাপ গরম পানি দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। কিমা সেদ্ধ হয়ে পানি টেনে গেলে নামিয়ে রাখুন। ২ টেবিল-চামচ মাখন দিয়ে ঢেকে রাখুন।

মোসাকা
ছবি: প্রথম আলো

পাত্রে মাখন গলিয়ে ময়দা ভেজে তাতে দুধ দিয়ে চুলা বন্ধ করে দিন। ভালো করে নেড়ে মসৃণভাবে ব্লেন্ড করুন। এবারে এই মিশ্রণ চুলায় দিয়ে একটু লবণ, গোলমরিচের গুঁড়া ও রসুন বাটা দিয়ে মিশিয়ে রাখুন। ফুটে ওঠার পর সস ঘন হলে নামিয়ে রাখুন।

এখন বেকিং ট্রেতে মাখন ব্রাশ করে প্রথম স্তরে ভাজা বেগুনগুলো সাজিয়ে বিছিয়ে দিন। তার ওপর আধা কাপ ঝুরি করা পনির দিয়ে তার ওপর কিছু কিমা বিছিয়ে দিন। কিমার ওপরে স্লাইস চিজ দিয়ে ঢেকে একইভাবে আরেকটি স্তরে সাজান। এভাবে কয়েকটি স্তরে সাজিয়ে ওপরে সাদা সস দিয়ে ঢেকে দিন। শেষে প্রি-হিটেড ওভেনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ২০ মিনিট বেক করুন। নামিয়ে পোলাও, নান, পরোটা বা লুচির সঙ্গে গরম-গরম পরিবেশন করুন।

বেকড বেগুন

উপকরণ

বেগুন আধা কেজি, নরম পাউরুটি কুচি আধা কাপ, মাখন ২ টেবিল-চামচ, পনির (ঝুরি করা) পৌনে ১ কাপ, লেবুর রস ২ চা-চামচ, রেড চিলি ফ্লেকস ১ চা-চামচ, লেমন রাইন্ড দেড় চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ১ টেবিল-চামচ, অরিগানো সিকি চা-চামচ, হালকা ফেটানো ডিম ১টি, লবণ স্বাদমতো, চিনি ১ চা-চামচ, পানি দেড় কাপ, পটেটো চিপস ১ থেকে দেড় কাপ।

বেকড বেগুন
ছবি: প্রথম আলো

প্রণালি

দেড় কাপ ফুটানো গরম পানিতে লবণ দিয়ে বেগুন সেদ্ধ করুন। খোসা ছাড়িয়ে আঁশ বাদ দিয়ে ভালো করে চটকে নিন। রেড চিলি ফ্লেকস এবং অরিগানো বাদে অন্য সব উপকরণ একত্রে বেগুনের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। বেকিং ট্রেতে মাখন ব্রাশ করে বেগুনের মিশ্রণ ঢেলে উপরিভাগ সমান করে দিন। এবারে তাতে অরিগানো, রেড চিলি ফ্লেকস ছিটিয়ে তার সঙ্গে চামচ লেমন রাইন্ড দিয়ে প্রিহিডেড ওভেনে দিন। ১৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপে ৩০ মিনিট বেক করুন। নামিয়ে ইচ্ছে করলে পটেটো চিপস দিয়ে সাজিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করুন।

বেগুন মাসালা ফ্রাই

উপকরণ

কচি ছোট বা মাঝারি আকারের বেগুন (লম্বালম্বি করে কাটা) ১ কেজি, লবণ আধা চা-চামচ+দেড় চা-চামচ, টমেটো কুচি ছোট ৪টি, কাঁচা মরিচ ফালি ৬টি, লাল মরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, মেথি গুঁড়া আধা চা-চামচ, নারকেল বাটা আধা কাপ, ধনেপাতা কুচি ১ টেবিল-চামচ, চিনি ১ টেবিল-চামচ, ঘন তেঁতুলের ক্বাথ ২ টেবিল-চামচ, সরষের তেল ১ কাপ+২ টেবিল-চামচ, হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ+ আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ (মিহি কুচি) ১ কাপ, গোটা শুকনা মরিচ ৮টি, জিরা গুঁড়া (ভাজা) ১ চা-চামচ, এলাচি গুঁড়া আধা চা-চামচ, রসুন বাটা ১ চা-চামচ, শাহি গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, রোস্টেড চিনাবাদাম গুঁড়া ২ টেবিল-চামচ, সাদা তিল (ভেজে বেটে নেওয়া) দেড় টেবিল-চামচ, সাদা তিল (ভাজা) ১ টেবিল-চামচ।

বেগুন মাসালা ফ্রাই
ছবি: প্রথম আলো

প্রণালি

বেগুনের বোঁটাসহ লম্বালম্বি করে কেটে নিয়ে সিকি চামচ হলুদগুঁড়া ও আধা চা-চামচ লবণ মেখে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর বেগুন থেকে বের হওয়া কালো পানিগুলো ফেলে দিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এবার একটি বাটিতে বেগুনগুলো আধা চা-চামচ হলুদ ও আধা চা-চামচ লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ মেখে রেখে দিন। কড়াই বা প্যানে আধা কাপ তেল গরম করে বেগুনগুলো ভাজি করে তেল ছেঁকে উঠিয়ে রাখুন। একই তেলে গোটা শুকনো মরিচের ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজকুচি হালকা বাদামি করে ভেজে টমেটো কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে নিন। কাঁচা মরিচ ফালি, লাল মরিচের গুঁড়া এবং চিনি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন।

একটি বাটিতে ১ কাপ কুসুম গরম পানিতে ধনে, জিরা, এলাচি ও মেথি ইত্যাদি গুঁড়া মসলা, রসুন, নারকেল এবং তিল বাটা একত্রে ভালো করে মিশিয়ে কড়াই বা প্যানে ঢেলে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। এরপর খানিকটা গরম পানি দিয়ে ও বাকি লবণ দিয়ে আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিয়ে তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে মিশিয়ে নেড়ে ভেজে রাখা বেগুনগুলো দিয়ে দিন। ওপরে গরমমসলার ফাকি ছিটিয়ে দিয়ে হালকা নেড়ে নিন। বেগুনগুলো যেন না ভেঙে যায়। এবার ১ টেবিল-চামচ সরষের তেল ও ধনেপাতা কুচি ছিটিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন।

সবশেষে পাত্রে বেড়ে কিছু রোস্টেড সাদা তিল, ধনেপাতা কুচি ও রোস্টেড চিনাবাদাম গুঁড়া ছিটিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

নারকেল-বেগুনের ভর্তা

উপকরণ

বেগুন আধা কেজি, সাদা তিল (ভাজা) ১ টেবিল-চামচ, টমেটো ৫টি, রসুন কুচি দেড় চা-চামচ, পেঁয়াজ (মিহি কুচি) ১ কাপ, শুকনা মরিচ (চেরা) ২টি, লবণ স্বাদমতো, সরষের তেল আধা কাপ+দেড় টেবিল-চামচ, পোস্তদানা আধা টেবিল-চামচ, কোরানো নারকেল আধা কাপ, রসুনের কোয়া ৬টি, আদা বাটা আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ফালি ৪টি, ঘন তেঁতুলের ক্বাথ ২ চা-চামচ, চিনি আধা টেবিল-চামচ।

নারকেল-বেগুনের ভর্তা
ছবি: প্রথম আলো

প্রণালি

পোস্তদানা ভালো করে ঝেড়ে ধুয়ে পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। তিল ঝেড়ে বেছে শুকনো তাওয়ায় টেলে নিয়ে একটি পাত্রে ছড়িয়ে দিয়ে চুলার নিচে রাখুন। তিল, নারকেল এবং পোস্তদানা একত্রে মিহি করে বেটে নিন। টমেটো ধুয়ে ফুটানো গরম পানিতে দিয়ে মাঝারি আঁচে ২/৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। এবার পানি ঝরিয়ে খোসা ছাড়িয়ে একটি আলাদা পাত্রে রেখে চটকে নিন। বেগুন ধুয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে কেচে নিয়ে তেল মেখে নিন।

প্রতিটি বেগুনের মধ্যে ২/৩টি করে রসুনের কোয়া গেঁথে নিয়ে ফ্রাইপ্যানে সামান্য তেল গরম করে তাতে বেগুনগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাঝারি আঁচে ঝলসে নিন। খোসা ছাড়িয়ে চটকে নিন। এবার বেগুন ও টমেটো একত্রে ব্লেন্ড করুন। প্যানে আধা কাপ তেল গরম করে শুকনা মরিচ এবং রসুন কুচির ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। তারপর লবণ, আদা বাটা, তিল, পোস্তদানা ও নারকেল বাটা দিয়ে কয়েক মিনিট ভালো করে ভেজে নিয়ে কাঁচা মরিচকুচি এবং বেগুন ও টমেটোর মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে রান্না করুন। বেশ খানিকটা ভাজা ভাজা হয়ে এলে চিনি ও তেঁতুলের ক্বাথ দিয়ে মিশিয়ে নাড়ুন। চিনি গলে আরও খানিকটা ভাজা ভাজা হলে নামানোর আগে বাকি সরষের তেল চারপাশ থেকে দিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন।