ফাস্টফুড খেলে শরীরের যা হয়
মাঝেমধ্যে ফাস্টফুড খেয়ে অনেকেই মজা পান। কিন্তু এই ফাস্টফুড খাওয়াটা যদি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহলে উচ্চমাত্রার তেলচর্বির দীর্ঘ মেয়াদি ঝুঁকির বিষয়টি এড়ানো যাবে না।
পশ্চিমা দুনিয়ার মতো আমাদের দেশেও দিন দিন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফাস্টফুড। কিন্তু খোদ পশ্চিমেই ফাস্টফুড নিয়ে সমালোচনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে যেসব শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা জানতে পড়ুন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-এ প্রকাশিত নিক নাইটের এই প্রতিবেদন।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানোর এই দুনিয়ায় খুব শক্ত করেই শিকড় গেড়েছে ফাস্টফুড। আধুনিক জীবনযাপনে ফাস্টফুডের কদরের প্রধান তিন কারণ হলো, এটা দ্রুত, সহজ ও সস্তা। কিন্তু আমাদের শরীরে এর প্রতিক্রিয়াগুলো অতটা সহজ-সরল নয়।
এখন প্রায় সবাই-ই জানেন, ফাস্টফুড খেতে সুস্বাদু, কারণ এসব খাবার প্রচুর সুগার আর ফ্যাটে (শর্করা ও চর্বিজাতীয়) ঠাসা থাকে। বিশেষত বেশি পরিমাণ শর্করার ক্ষতি নিয়ে অনেকেই এখন উদ্বিগ্ন। শর্করার মাত্রা কমানোর প্রশ্নে এখন পশ্চিমা দুনিয়ায় বেশ হইচইও হচ্ছে। সেখানকার বিভিন্ন অধিকার আন্দোলনের কর্মীরা এবং গণমাধ্যমও এ নিয়ে ভালোই উচ্চকণ্ঠ। অনেকেই পারলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ‘চিনির টুকরোর’ কুশপুতুল পোড়ান! অনেকে যত দ্রুত সম্ভব ‘সুগার ট্যাক্স’ বসানোরও দাবি তুলছেন। ফলে এই প্রতিবেদনে শর্করার চেয়ে ‘স্যাচুরেটেড ফ্যাট’ ও ‘ট্রান্স ফ্যাট’ নিয়েই আলোচনা করা হবে।
চর্বিজাতীয় উপাদান, বিশেষত ‘আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট’ স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী। তেলযুক্ত মাছ থেকে প্রচুর মাত্রায় এমন পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি আমরা। খাবারদাবারের প্রয়োজনীয় ভারসাম্য বজায় রাখা এবং শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে এমন ‘চর্বি’ খুবই দরকারি। আমাদের শরীর এসব চর্বি থেকে নিজেকে সুরক্ষা করে, শারীরিক কর্মকাণ্ডের জ্বালানি জোগায় এবং দেহকে প্রয়োজনীয় অন্তরণ দিয়ে রাখে।
চর্বি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক বালিশ! দেহের অভ্যন্তরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেয় এবং আরামদায়কভাবে আগলে রাখে চর্বি। একবার ভেবে দেখুন, নিতম্বটা মাংস-চর্বিহীন হলে হাড়ের ওপর বসতে আমাদের কেমন লাগত! আর শরীরে একটুও চর্বি না থাকলে শীত-ঠান্ডায় কতটা কাবু হয়ে যেতাম আমরা। শরীরের প্রয়োজনীয় জ্বালানির উত্স এই চর্বি। প্রয়োজনে পোড়ানোর জন্য আমাদের শরীরে প্রায় এক লাখ ক্যালরির চর্বি থাকে! চর্বির দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী বলা যেতে পারে কার্বোহাইড্রেটকে। একদিনে আপনি বড়জোর এক হাজার ৯০০ ক্যালরির সঞ্চিত কার্বোহাইড্রেট পেতে পারেন।
মানবদেহে চর্বির নিয়মিত দুটো ইতিবাচক ভূমিকা—খাবারদাবার হজমে সহায়তা করা ও শক্তি সঞ্চয়ে রাখা। শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে চর্বিতে মিশ্রিত হয়ে থাকতে পারে এবং ক্ষুধা জাগানিয়া হরমোনের নিঃসরণসহ নানা প্রাত্যহিক কাজগুলো এই চর্বির উপস্থিতি ছাড়া চলে না। চর্বির গুণকীর্তন অনেক হলো। এখন সরাসরি কাজের কথায় আসা যাক।
নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে শরীরে স্বল্পমেয়াদি এবং আরও ভয়ংকর দীর্ঘমেয়াদি নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের পরামর্শপত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে দিনে ৩০ গ্রামের চেয়ে কম এবং নারীকে ২০ গ্রামের চেয়ে কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর ট্রান্স-ফ্যাটের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ৫ গ্রামের চেয়ে কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একটা গড়পড়তা বার্গারেই স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ ১০ গ্রামের মতো! একই পরামর্শপত্র অনুযায়ী এক দিনে প্রয়োজনীয় ক্যালরির চারভাগের এক ভাগ একটা বার্গারেই! ফলে সাধু সাবধান, প্রতিটা কামড় দেওয়ার সময়ই হিসাব করুন। আর এই হিসাবটা তো কেবল বার্গারের, আনুষঙ্গিক ভাজাপোড়া আর তথাকথিত কোমল-পানীয়(!) ছাড়াই।
আসুন, আমরা কিছুক্ষণ (চর্বির কথা বাদ দিয়ে) মগজের কথা শুনি। আমাদের পুরো শরীরের মাত্র ২ শতাংশ আমাদের মস্তিষ্ক। কিন্তু সে তুলনায় মগজের খাবারের চাহিদাটা একটু বেশিই বৈকি! শরীরে জমা হওয়া শক্তির প্রায় ২৫ শতাংশই খেয়ে ফেলে আমাদের মগজ। হবেই না বা কেন? চমকপ্রদ সব ব্যবসায়িক চিন্তা আর মজার মজার সব ফেসবুক স্ট্যাটাস তো ওই মগজ থেকেই আসে। কিন্তু আমাদের শরীরটাই এমন যে, রক্তপ্রবাহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে মগজে চর্বি ঢোকার প্রায় কোনো সুযোগই নেই! অবশ্য কারণটাও খুব সোজা, মগজের জ্বালানি কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট বা চর্বি নয়। তাই ফাস্টফুড খাবেন কি খাবেন না, সে বিষয়ে আপনি আপনার মগজটাই খাটান।