জিন্দাবাহার থেকে বিশ্বে আহার
পুরান ঢাকার অলিগলির বিচিত্র সব খাবার গড়ে দিয়েছে তাঁর রসনার রুচি। তারপর দুনিয়ার কত বিচিত্র খাবারই না চেখে দেখেছেন লেখক। এখানে রইল তারই কয়েকটির বিবরণ
স্মৃতিশক্তি আমার বড্ড দুর্বল। তবু পেছনে যখনই ফিরে তাকাই, বহু কিছু ভুলে গেলেও আলো–আঁধারির মধ্যে জ্বলজ্বল করতে থাকে বিচিত্র সব খাদ্যের স্মৃতি। পুরান ঢাকা মানেই যেন ঘরে, গলিতে, মোড়ে মোড়ে রঙে–গন্ধে–স্বাদে খাওয়াদাওয়ার এক মচ্ছব। স্বাদে–গন্ধে সেসব খাবারে এতটাই ঢাকাই স্বাতন্ত্র্যের ছাপ্পর মারা যে প্রায় প্রতিটি খাদ্য গ্রহণের প্রথম স্মৃতি মনে দাগ কেটে বসে আছে।
দেশ–বিদেশে এরপর কত বিচিত্র, আর যাকে বলে একজোটিক খাবার খেয়েছি। কিন্তু আমি বলি, পুরান ঢাকাই আমাকে খেতে শিখিয়েছে, জটিল প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছে আমার রসনাকে। আমার জীবনে পুরান ঢাকার অনন্য অবদান এই জিব।
আমাদের জিন্দাবাহার সেকেন্ড লেনটা পার হয়ে এক প্রান্তে গেলে নয়াবাজার। আরেক প্রান্ত গিয়ে মিশেছে পাটুয়াটুলীতে। সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেন পার হয়ে লায়ন সিনেমা হলের প্রায় কাছাকাছি ছিল আমার অল্পকালের প্রথম বিদ্যায়তন, ফকির মোহাম্মদ ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। শিল্পী হামিদুর রাহমানের বাবা ফকির মোহাম্মদের প্রতিষ্ঠা করা এবং তাঁরই নামে। সেখানে যাওয়ার পথে হাতের বাঁয়ে ইউনিভার্সাল প্রেস। কবি শামসুর রাহমানের বাবার ছাপাখানা। আমার ছেলেবেলার এই ভূগোলটুকুর পুরোটাই খাদ্যময়। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে প্রথমেই পড়ত আচার আর চাটনির পসরা। একজন বসতেন দশ–পনেরো রকমের চাটনি নিয়ে—বরই, আম, চালতা, আমড়া, তেঁতুল, আরও কত যে কিসের!
পথে পথে আরও লোভনীয় খাবারের শেষ নেই। ছিলেন এক আলুর দমওয়ালা। হলুদ–সবুজ মাখো মাখো মসলায় লুটোপুটি খাওয়া বড় বড় সেদ্ধ আলু। কেনার পর চাকু দিয়ে চার ফালি করে ফুটো–ফুটোওয়ালা কৌটা ঝাঁকিয়ে মসলা ঢেলে দিতেন। ভাজা জিরাগুঁড়ার সুগন্ধটাই মুখ্য। তার ফাঁকফোকরে অন্য মসলা স্বাদ–গন্ধে বা ঝাঁজে হঠাৎ হঠাৎ তাদের অস্তিত্ব জানায়। এ ছাড়া ঝালমুড়ি, চটপটি, ঘুগনি, মালাই চা—বিচিত্র খাদ্যের হাতছানি।
চায়ের দোকানে চা ছাড়াও ছিল রং–দুধ নামে অদ্ভুত এক দ্রব্য। কোনো এক কুট্টি তার ছেলেকে দুটো পয়সা দিয়ে হয়তো বলত, ‘যা, গিলাস ভারকে রাঙ্গ–দুধ লেকে আ।’ ঘন মালাই খাবি খেতে থাকা এক গ্লাস গাঢ় হলুদ দুধে চাওয়ালা সামান্য চায়ের লিকার ঢেলে দিতেন। তরলটা হয়ে যেত খাকি। দুধে প্রচ্ছন্ন হয়ে থেকে চা দিত তার হালকা হালকা সুবাস। একেবারে বিশুদ্ধ ঢাকাইয়া পানীয়।
কোনার এক পথরেস্তোরাঁয় ভাজা হতো মোগলাই পরোটা। এখনকার মতো শুধুই ডিম দিয়ে নয়। ছড়িয়ে দেওয়া হতো মুঠোভর্তি কিমা।
আর সকালে–বিকেলে ছিল ফেরিওয়ালার দল। একজন হাঁক দিয়ে যেত, ‘নানখাটাই, জোড়া বিস পাই।’ মানে কুড়ি পয়সা দিয়ে দুটি বিস্কুট–জাতীয় পদার্থ। মুখে পুরে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বস্তুটা উবে যেত কর্পূরের মতো, রেখে যেত শুদ্ধ মাখনের সুবাস। যিনি হজমি বিক্রি করতেন, তাঁর ছিল দেখার মতো জাদুকরি। কাগজে কালো ছাইয়ের মতো পাউডার ছড়িয়ে দিয়ে তার ওপর একটা আরক ঢেলে দিতেন। আগুন জ্বলে উঠত স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে। তীব্র ঝাঁজের সেই আগুনে পোড়া চোষ্য সেবনের পর ছাল উঠে যেত জিবের। কেউ আসতেন তোয়ালে–জড়ানো বিরাট জালা নিয়ে। বরফ–পানিতে হাত ঢুকিয়ে টিনের চোঙায় কাঠি গেঁথে বের করে আনতেন কুলপি। একজন চাকা লাগানো ভ্যান নিয়ে আসতেন। অর্ডারমতো ভেজে দিতেন মাংসের পুরভরা গরম–গরম সমুচা।
তবু এসব তো প্লিবিয়ান ফুড। গরিবের সস্তা খাদ্যবিলাস। বলার মতো মশহুর দুই দোকান ছিল আওলাদ হোসেন লেনে, একটু আগে–পরে। প্রথমে সাইনু পালোয়ানের মোরগ–পোলাও। সেটা ছাড়িয়ে সামান্য এগোলে—লায়ন সিনেমা হলের প্রায় কাছাকাছি—পাগলার প্রখ্যাত গেলাসির দোকান। ঈর্ষা করার মতো ফরসা আর পেল্লায় আকারের সাইনু ছিলেন শখের কুস্তিগির। সে জন্য এক আলাদা প্রতাপ ছিল তাঁর। সাইনু পালোয়ানের মোরগ–পোলাও কিনতে খাদ্যরসিকেরা আসতেন ঢাকার নানা অঞ্চল থেকে।
পুরান ঢাকার হালফিলের নামজাদা হোটেলগুলো আলুর টলটলে ঝোলে ভাসমান যে খাসির মাংসকে গেলাসি বলে চালায়, সেগুলো পাগলার গেলাসির নিছক প্যারোডি। পাগলার গেলাসি মানে সুগন্ধি মসলার ঘন ক্বাথে ডুবে থাকা খাসির মস্ত কোমল খণ্ড। সেদ্ধ তুলতুলে সেই মাংস মুখে দিলে মিশে যেত লহমায়। স্বাদ মুখে লেগে থাকত আঠার মতো। লায়ন সিনেমা হলের নৈশদর্শনার্থী এবং অল্প দূরের নিষিদ্ধ পল্লির অন্ধকার জগতের রসিকজন থেকে বহু বহু দূরের শুদ্ধাচারী ভোজনবিলাসীদের জন্য এ ছিল একঘেয়ে দিন উৎসবমুখর করে তোলার টোটকা।
এই পুরান ঢাকাই পেছন থেকে আজীবন সাহস দিয়ে এসেছে আমাকে, যাও বাবা, পৃথিবীর যেখানেই যাও, মন শক্ত করে সবকিছু চেখে দেখো। ব্যস, খাওয়া–খাদ্যে বাছবিচার উঠে গেল চিরকালের মতো। এই জিব কী না পরখ করে দেখেছে। দুনিয়াতে মানুষের যত বৈচিত্র্য, তার খাওয়ার বৈচিত্র্য যে তার চেয়ে কম নয়।
মনে পড়ছে, মেক্সিকোতে গিয়ে খেয়েছিলাম চকলেট দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস। আমাদের বন্ধু ভ্রমণবিদ মঈনুস সুলতানের কাছে জেনেছিলাম, বাংলাদেশের যেমন গুড়ের পাটালি, মেক্সিকোতে তেমনই চাঙারিতে করে বিক্রি হয় নানা গুল্ম দেওয়া চকলেটের পাটালি।
মনে পড়ছে, মেক্সিকোতে গিয়ে খেয়েছিলাম চকলেট দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস। আমাদের বন্ধু ভ্রমণবিদ মঈনুস সুলতানের কাছে জেনেছিলাম, বাংলাদেশের যেমন গুড়ের পাটালি, মেক্সিকোতে তেমনই চাঙারিতে করে বিক্রি হয় নানা গুল্ম দেওয়া চকলেটের পাটালি। সেই চকলেটে চিনি নেই। হরেক পদের তরকারিতে তার ব্যবহার। আমি যেটা খেলাম, তার রন্ধনশৈলী অনেকটাই কন্টিনেন্টাল। চকলেটের একটা সস তৈরি করে চিকেনের ওপর ঢেলে দেওয়া। কানে শুনে যার তৃষ্ণা জেগেছিল, জিবের সহযোগে তার তৃপ্তি মিটল।
সুইজারল্যান্ডে প্রথম যেদিন পা রেখেছিলাম, ঠান্ডা সেদিন মাইনাস পনেরো। কাঁপতে কাঁপতে জেনেভার পুরোনো শহরের এক রেস্তোরাঁয় ওদের ঐতিহ্যবাহী চিজ ফন্ডু চেখে বুঝতে পেরেছিলাম, হাড়কাঁপানো হিমে শরীর চাঙা রাখতে এই মহাখাদ্যের তুলনা নেই। খাদ্যটি অতি সরল। স্টোভের ওপর চড়ানো পাত্রভরা গাদা গাদা পনির। ব্রেড ভেঙে ভেঙে লেইয়ের মতো গলন্ত সেই পনিরে চুবিয়ে চুবিয়ে খাও। সবচেয়ে সুস্বাদু হলো অবশেষটুকু। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা পনির চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তোলো আর মুখে পোরো। আধপোড়া সেই রোস্টেড পনির একেবারে স্বর্গীয়।
দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যরুচির একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। তেল নেই বা অতি অল্প, হাজারো সস আর রং ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রেখে কাঁচা বা আধা সেদ্ধ সবজি বা উদ্ভিজ্জের পরিবেশনা। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, লাওসের মতো দেশগুলোর আলাদা আলাদা রন্ধনশৈলীর মধ্যেও সাধারণ এ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছি। জাপানিরা অদ্ভুত সব সস আর নানা রকমের পাতা বা হার্ব দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো কিছু কাঁচা খেতে পারদর্শী। কাঁচা মাছ–মাংস ভক্ষণকে তো তারা নতুন জীবনধারার অংশই করে তুলল। সুশি আর সাশিমির এখন বিশ্বজোড়া রমরমা।
টোকিওর এক পাবে আমার জাপানপ্রবাসী ছেলেবেলার বন্ধু খেতে দিয়েছিল স্থানীয় নানা পদের সঙ্গে কাঁচা অক্টোপাস। বাংলাদেশের কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় আজকাল যে স্কুইডের দেখা মিলছে, তা নয়; নির্ভেজাল অক্টোপাস। খাব কি, দেখেই পিলে চমকে গিয়েছিল। সাহসে বুক বেঁধে কী একটা পাতা দিয়ে জড়িয়ে পাতলা সসে চুবিয়ে কচকচ করে খেয়ে ফেললাম। স্বাদগন্ধহীন বিশুদ্ধ রাবার!
জাপানে আর খেয়েছিলাম নাত্তো। মজিয়ে রাখা একজাতের সয়াবিনের বীজ। ওরে বিকট গন্ধ! পেট উল্টে এসেছিল প্রায়। এ আহার্যটি একেবারেই অর্জিত রুচির মুখাপেক্ষী। লক্ষ করে দেখেছি, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এ ধরনের তীব্র গন্ধময় মজানো কোনো না কোনো খাদ্যাভ্যাস আছে। যেমন বাঙালির শুঁটকি বা পশ্চিমাদের ব্লু চিজ। ভেতরে–ভেতরে শিরার মতো সবুজ বা নীল ছত্রাক ছড়িয়ে থাকা এই পনির ইউরোপখণ্ডের মস্ত ডেলিকেসি। বাংলাদেশে এর চালান শুরু হওয়ায় মনে হচ্ছে বাঙালি বাবুরাও এটা এস্তেমাল করতে শিখছে।
আমার মতো খাদ্যলোভীর খাওয়ার অভিজ্ঞতার ফিরিস্তি দিতে গেলে আস্ত একটি বই–ই লিখে ফেলতে হবে। সেটা পুরান ঢাকারই হোক কি বিশ্বজোড়া খাদ্য–পাঠশালার। কিন্তু মাদ্রিদের একটি অভিজ্ঞতা না বলে শেষ করলে পাপ হবে।
সেবার শাওন আর আমার সঙ্গে স্পেনের ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন আমাদের চিত্রশিল্পী বন্ধু ঢালী আল মামুন আর দিলারা বেগম জলি। মনির ভাই, মানে শিল্পী মনিরুল ইসলাম সেবার মাদ্রিদে নেই। তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিলেন টিটোর। টিটো মাদ্রিদে একটা রেস্তোরাঁ চালান জার্মান স্ত্রী বেগোকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁদের আতিথেয়তার শেষ রইল না।
টিটো তাঁর আতিথ্যে এক সন্ধ্যায় আমাদের নিয়ে গেলেন একটা ফুডকোর্টে। বিরাট সেই ফুডকোর্টের এক প্রান্তে দাঁড়ালে আরেক প্রান্ত দেখা যায় না। মানুষের মাথা মানুষে খাচ্ছে। ছোট ছোট খাদ্যের স্টল। শুরু হলো অসাধারণ এক ভোজন উৎসব।
প্রথম স্টল অয়েস্টার বা ঝিনুকের। টিটো বোঝালেন, ‘এটা কিন্তু মাসেলস নয়। মাসেলস, মানে শামুক খেতে হয় রান্না করে, আর এটা কাঁচা। বিশেষ ডেলিকেসি বলে এর দামও বেশি।’ বরফের ওপর রাখা জ্যান্ত ঝিনুক। ভেতরে পুরু সাদা সরের মতো কোমল শাঁস। তার ওপর লেবু চিপে রস ঢেলে সুড়ুত করে টেনে নিলাম মুখে। প্রথমে বেশ সতর্কতার সঙ্গে। জিবের ওপরে অনুভূতিটা হলো একেবারে মোলায়েম আর মসৃণ। শুধু মুখ তো নয়, প্রাণটাই জুড়িয়ে গেল। এরপর আর রোখে কে?
পরের স্টল নানা জাতের কাঁচা মরিচের। বিশেষ এক জাতের মরিচ কিনলেন টিটো। ফুটন্ত তেলে সে মরিচ ঝটিতি ডুবিয়ে তুলে ফেলা হলো। তার ওপর লবণ ছিটিয়ে খেতে দেওয়া হলো আমাদের। ঘ্রাণ অসামান্য, ঝাল কম। এর সার্থকতা সান্ধ্য পানীয়ের সঙ্গে।
সেই মরিচভাজা খেতে খেতে আমার চোখ চলে যাচ্ছিল দূরের আরেকটা স্টলে। সেখানে দেখতে পাচ্ছি, ছোট কোনো চতুষ্পদের আস্ত আস্ত রান ঝুলিয়ে রাখা। এই মাংসপিণ্ডই তো আমার প্রাণ হরণ করেছিল লুইস বুনুয়েলের মিল্কি ওয়ে ছবিতে, সেই কবে ছবিটি দেখার সময়েই। টাটকা মাংসের আর্দ্রতা তাতে নেই। জিনিসটা নিছক কাঁচা নয়। আবার রান্না করা বলেও মনে হয়নি। একবার কি চেখে দেখতে পারব না ইহজনমে?
আমার চাপে সবাইকে এগোতে হলো সেই স্টলে। সত্যি সত্যিই রান্না করা মাংস সেগুলো নয়। তবে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে প্রসেস করা। এখানে যে রাশি রাশি রান ঝোলানো, সবই এক জাতের বা দামের নয়। জন্মের পর থেকে প্রাণীটিকে কী খাওয়ানো হয়েছে, তার বিচারে এদের মূল্য। আমরা যে চতুষ্পদটির মাংস নিলাম, জন্মের পর থেকে সেই মহাশয়কে নাকি আখরোট ছাড়া আর কিছু খাওয়ানোই হয়নি। অতএব তিনিই এখানে মহামূল্যবান। সেই মাংস পরিবেশনারও রীতি আছে। বিশেষ ধরনের ছুরি দিয়ে পাকা হাতে সেটিকে কাগজের মতো পাতলা পাতলা করে কাটা হলো। এ–ও নাকি পানীয়ের সঙ্গে ভোজ্য। মুখের গভীরে সে মাংস পনিরের মতো ভঙ্গুর। জিব দিয়ে চাপ দিতেই মিশে গেল গুঁড়া গুঁড়া হয়ে। সামান্য নোনতায়, নমনীয় টেক্সচারে আর চর্বির হালকা সুরভিতে ওজনদার একটা স্বাদ। সার্থক জনম আমার!
খাওয়ার গল্পের শুরু থাকলেও শেষ নেই। কেবলই চিবিয়ে গিলে ফেলার বিবরণে খাওয়ার গল্প নিঃশেষও হয়ে যায় না। এর শিকড়–বাকড় নানা জনপদের সংস্কৃতির গভীরে ছড়ানো। সেসব না জানলে আস্বাদন অপূর্ণ থাকে। খাদ্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে মানুষ আর পরিপার্শ্ব। এ কারণেই মালাগায় ভূমধ্যসাগরের নোনা হাওয়ায় আন্দোলিত তীরে, আরবদের গড়ে তোলা পুয়েবলোস ব্লাঙ্কোস বা ধবল গ্রামের পাশে স্যামনের যে স্বাদ খোলে, সেটা অন্য কোথাও মেলে না। হনুলুলুর সৈকত–রেস্তোরাঁয় মাকাডামিয়া নাট দেওয়া চিকেন গ্রিলকে যে অনন্য করে তোলে, তার নাম প্রশান্ত মহাসাগর। আরবের সিরকা–সিক্ত পনির, আগ্রার পথে ট্রাকচালকদের ধাবার তরকা–রুটি, ইস্তাম্বুলের সংযত মসলার কোফতা, সিলেটের সাতকড়ার সাইট্রাসগন্ধী গোমাংস, রোমের রিসোতো বা গাঢ় পনিরে মাখানো ভাত, বিক্রমপুর–মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় বেকিং–বিস্ময় বিবিখানা পিঠা কিংবা ফ্লোরেন্সের নামজাদা ডার্ক আইসক্রিম—প্রতিটিরই আলাদা আলাদা গল্প আছে। প্রতিটি গল্প সারা রাত জেগে জেগে শোনার মতো।