মূল সড়ক থেকে নেমে গেছে একটি গলিপথ। কয়েক কদম এগোলে সীমানাপ্রাচীর দেওয়া একটি বাড়ি। সাজানো ফটক। ভেতরে ঢুকে প্রথম দর্শনেই যেন মুগ্ধতা! নিরিবিলি পরিবেশ, বড় উঠোন, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজানো। এরপর নিরিবিলি পরিবেশে ঘর।
খাবারদাবারে এমন ঘরোয়া পরিবেশের নতুন রেস্তোরাঁ এটি। নাম ‘টেস্ট অব অ্যাডোরা’। সিলেট নগরের উত্তর–পশ্চিম প্রান্তসীমার আখালিয়া এলাকার এ রেস্তোরাঁটি প্রায় তিন মাস হলো চালু হয়েছে।
রেস্তোরাঁর মূল অবকাঠামো একটি পুরোনো বাড়ি। আধা পাকা চৌচালা টিন ছাওয়া বাড়ি, সঙ্গে বড় উঠোন। সিলেটের আদি-অবকাঠামোর এমন বাড়ির ঘরগুলো ‘কেবিন’। বসার টেবিল-চেয়ারেও রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। নানা রঙের বেতের চেয়ার–টেবিল। প্রধান ফটক পেরোলেই পাথরের স্তূপ দিয়ে কৃত্রিম ঝরনা। আলোয় আলোয় সাজানো ঝরনা থেকে কলকল শব্দ যেন স্বাগত জানায়।
রেস্তোরাঁর বাইরে ও ভেতরে মিলিয়ে একসঙ্গে প্রায় ২৫০ জন বসে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক সহিদুল ইসলাম জানান, এ রেস্তোরাঁয় অপরাজিতা নামে নারীদের জন্য আলাদা কক্ষ রয়েছে। আসনসংখ্যা ৩৫টি। রয়েছে ‘মল্লিকা’ নামের ৩০ আসনের একটি সাধারণ কক্ষ। ‘সন্ধ্যামালতি’ নামে দুটি ও ‘রজনীগন্ধা’ নামের আলাদা ঘর, যেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে খাবারদাবারের সুযোগ।
চাহিদা অনুযায়ী সব খাবারই মেলে টেস্ট অব অ্যাডোরায়। অন্দরের ব্যবস্থাপকেরা জানান, ভাত, মাছ, মাংসসহ বাঙালি খাবারের সবই মেলে। সঙ্গে আছে থাই, চীনাসহ নানা পদের খাবার। এগুলোতেও বাঙালিয়ানার ছাপ। ভোজন-রুচির দিকটি মাথায় রেখে পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলির বিশেষ আয়োজনও রয়েছে। শীতের পিঠা তো আছে, বছরব্যাপী যেসব পিঠাপুলির চাহিদা থাকে, সেগুলোর ব্যবস্থাও রয়েছে। সেই সঙ্গে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী ‘প্যাকেজ’ হিসেবে রয়েছে খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা। ভাত, ডাল, ভর্তা দিয়ে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে শুরু খাবার সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত মেলে।
খাবারদাবারের মান দেখা যাক এবার। সেখানকার পরিবেশও বাইরের মতো পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে সাজানো। রন্ধনশালার পরিবেশ, খাবার সরবরাহকর্মীদের পোশাকে পরিচ্ছন্ন। প্রধান শেফ মুজিবুর রহমান। তিনি যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০ বছর শেফের দায়িত্ব পালন করেছেন। রেস্তোরাঁয় তৈরি মুখরোচক নানা পদের খাবারের মধ্যে তান্দুরি চিকেন, কাশ্মীরি নান, ভেজিটেবল পাকোড়া, চিকেন পাকোড়া, ছোলা বাটুরার চাহিদা বেশি। সিলেটের ঐতিহ্য সাতকরা দিয়ে বিভিন্ন পদের মাছ-মাংসও মেলে। ডেজার্টের মধ্যে রয়েছে নারকেলের ডেজার্ট, রেইনবো পুডিং, টার্কিস কুলফা, দউ পুডিং, যেগুলো আগেই অর্ডারের ভিত্তিতে সরবরাহ করা হয়। সেই সঙ্গে নিয়মিত ডেজার্টে কুরমা মোরব্বা, পায়েশ, ফিরনি, পুডিংসহ নানা পদ।
স্বাদ আস্বাদনে আরও একটি সংযোজন হতে যাচ্ছে এ রেস্তোরাঁয়। ‘হাসনাহেনা’ নামে একটি বিভাগ খোলা হবে। তাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আঞ্চলিক মুখরোচক খাবারের চাহিদার কথা জানালে পাতে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে ‘টেস্ট অব এডোরা’। ব্যবস্থাপক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘টেস্ট শুধু আমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। অন্যদের টেস্ট আমাদের মধ্য থেকেও ছড়িয়ে দিতে চাই।’