খাবার টেবিল সাজাতে যেসব বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে
খাবার টেবিলে সুস্বাদু খাবার ছাড়াও মনোযোগ দিতে হয় বাসনকোসনে। কোন খাবার কিসে পরিবেশন করছেন, সেটা বুঝতে পারাও জরুরি
উত্সব হোক কি ঘরোয়া দাওয়াত—বাড়িতে অতিথি এলেই খাবার টেবিলে বসবে। তাই খাবার টেবিল গুছিয়ে রাখা জরুরি। গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত বললেন, ‘খাবারঘরের আকার-আকৃতি এবং সেখানকার আসবাব কেমন, সেদিকে খেয়াল রেখে খাবারঘরের জন্য টেবিল বাছতে হবে। টেবিলের ধরন অনুযায়ী রানার, ম্যাট, চামচ হোল্ডার, ন্যাপকিন বা টিস্যু হোল্ডার, লবণদানি, ফুলদানি নিতে হবে। একই সঙ্গে খাবার পরিবেশনের পাত্র কেমন হবে, সেটাও জরুরি।’
ছোট বা মাঝারি আকারের খাবারঘরে গোল বা ডিম্বাকৃতির টেবিল মানানসই। অনেক সময় ছোট্ট জায়গার মধ্যে চারকোনা টেবিলের একদিকে চেয়ার, আরেক দিকে বেঞ্চ রাখলে জায়গা বাঁচে, দেখতেও ভালো লাগে। বর্গাকার ঘরে গোলটেবিল আর আয়তাকার ঘরে ডিম্বাকৃতি টেবিল রাখলে ভালো দেখাবে। আবার ঘর বড় হলে বর্গাকার ঘরে বর্গাকার টেবিল এবং আয়তাকার ঘরে আয়তাকার টেবিল মানাবে।
টেবিলের ওপরের অংশ কাচ, কাঠ নাকি মার্বেল পাথরের হবে, তা নির্ভর করবে অন্য আসবাবের ওপর। থালা-বাটি রাখার তাকের ওপরটা যদি মার্বেলের হয়, সে ক্ষেত্রে খাবার টেবিলের ওপরের অংশটা মার্বেল পাথরের হলে ভালো। শেলফ, চেয়ার, এমনকি দেয়ালে লাগিয়ে রাখা ছবিটার ফ্রেমের সঙ্গেও খাবার টেবিলের মিল রাখলে ঘরটা সুন্দর দেখাবে। ওপরে কোনো ধরনের কাচ বা পাথর না দিয়ে টেবিলটা বোহেমিয়ান স্টাইলে খালি রাখতে পারেন। সেটারও আলাদা সৌন্দর্য আছে।
কাঠের টেবিল
কাঠের টেবিলে চাপা সাদা কিংবা সাদা রঙের রানার বা ম্যাট রাখুন। রানারের ওপর চামচ হোল্ডার, টিস্যু হোল্ডার, লবণদানি বা ফুলদানি রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে রানারের ওপর রাখা এই সামগ্রী কাঠের তৈরি হলে ভালো দেখাবে। এগুলো কাঠের রঙের কাছাকাছি রঙের হলেও মানিয়ে যায়। কাঠের মতো দেখতে তন্তু দিয়ে তৈরি ফুলদানিও রাখতে পারেন। বোতল ধাঁচের ফুলদানিও রাখতে পারেন।
কাচের টেবিল
এ ধরনের টেবিলে যেকোনো রঙের ম্যাট বা রানার মানানসই। তবে তা খাবার ঘরের জানালার পর্দার সঙ্গে মিল রেখে বেছে নেওয়াই ভালো। একই ধরনের রঙের কভার ব্যবহার করতে পারেন চেয়ারে। কাচের টেবিলের রানারের ওপর রাখার জন্য চামচ হোল্ডারসহ অন্যান্য জিনিস ক্রিস্টালের হলে ভালো।
মানানসই বাসনপত্র
খাবার টেবিলে অতিথি আপ্যায়নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ঘরের সিরামিকের পাত্রগুলো। একেক ধরনের খাবার পরিবেশনের জন্য একেক ধরনের জিনিস ব্যবহারের চল। তাই কেমন মেনু হবে, সেটা ভেবেই বাসনকোসন বেছে নিতে পারেন। দুপুরের প্রাকৃতিক আলোয় হালকা নীল বা হলুদ, কমলা রঙের বাসন ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে রাতের দাওয়াতে জমকালো ভাব আনতে লাল বা কালো রঙের ক্রোকারিজ ভালো। আজকাল আরেকটা ট্রেন্ড চলছে, একেকটা একেক রঙের প্লেট। হয়তো টেবিলে চারটি প্লেট রাখলেন, চারটির রংই আলাদা।
আকিজ সিরামিকসের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘গত এক বছরে সিরামিকের বাসনপত্রে নতুন নতুন ট্রেন্ড দেখা গেছে। খাবারের প্লেট, বাটি ও মগে উঠে এসেছে জামদানির নকশা। থালা, বাটি, গ্লাস বা কাপে দেখা গেছে জ্যামিতিক নকশাও।’ গতানুগতিক গোল থালার জায়গা এখন আরও অনেকের দখলে। চায়ের কাপও রূপ বদলেছে। গোলাকৃতির ভেতরের দিকে দাবানো রাইস বোলগুলোর চল থাকলেও বর্তমানে খানিকটা চিড়ার মতো চ্যাপটা ছড়ানো ডিশের চল বেশি। এ ধরনের ডিশগুলোতে সবকিছুই পরিবেশন করা যায়। একের মধ্যে অনেক কাজ করে বলেই হয়তো বাজারে এই ডিশের চাহিদা ভালো। চিরায়ত সাদা বা চাপা সাদার বদলে এখন অনেকে পছন্দ করছেন উজ্জ্বল রঙের প্লেট ও বাটি। মার্বেলের নকশা করা বাসনপত্রও চলছে এখন। সাদার মধ্যে আরও কয়েকটি রঙের প্রলেপ পড়ে, যেন শিল্পীর আঁকা ছবি হয়ে উঠেছে।
কোন পাত্রে কেমন খাবার
রান্নাবিদ আফরোজা নাজনীন বলেন, ‘খাবারের ধরন অনুযায়ী পাল্টে যাবে টেবিল সাজানোর নিয়মকানুন। বন্ধু-আত্মীয়দের ক্ষেত্রে সাধারণত ফরমালিটি প্রাধান্য পায় না। আবার যদি অফিসের কলিগ, সিনিয়র বস কিংবা কোনো বিশেষ অতিথিকে ডাকেন লাঞ্চ কিংবা ডিনারে, সে ক্ষেত্রে টেবিল সাজাতে হবে নিয়ম মেনে।’
ফরমাল ডিনার বা লাঞ্চের ক্ষেত্রে খাবার পরিবেশনে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করুন। টেবিল সাজানো শুরু করুন একটা পরিষ্কার সাদা টেবিল ক্লথ পেতে। সালাদ, স্যুপ মেনুতে থাকলে সালাদ প্লেট এবং সুপ বোল প্রথমেই রাখতে হবে। ন্যাপকিনসমেত রাখা ডিনার প্লেটে ছুরি, কাঁটা চামচ রাখুন কায়দা করে। ডেজার্ট স্পুন কিংবা কেক ফর্ক রাখতে হয় প্লেটের অনুভূমিক বিন্যাসে। অন্যান্য পানীয়র গ্লাস থাকবে ওপরের ডান দিকের অংশে।
আয়োজন যদি হয় বন্ধুবান্ধবের জন্য, তবে নিয়মকানুনের বদলে মাথা ঘামান টেবিলের সৌন্দর্য নিয়ে। সাধারণ কাটলারি সেট, সল্ট অ্যান্ড পেপার সেট, সুগার বোল, ন্যাপকিন হোল্ডার, পানীয় দিয়েই ডাইনিং টেবিলের শোভা বাড়ানো যায় কয়েক গুণ। ডিনার টেবিল মোহনীয় করে তুলতে মোমবাতির সঙ্গে ছোট ফুলদানি রাখুন। কিছু ক্ষেত্রে ছোট শোপিসও রাখতে পারেন। সাদামাটাভাবে সাজানো পরিষ্কার ঝকঝকে খাবার টেবিলেই খেতে আরাম পাওয়া যায়। আড্ডাটাও জমে পুরোপুরি।
বাঙালি ভূরিভোজের আমন্ত্রণে সাধারণত ভাত ও তার সহযোগী পদই পরিবেশিত হয় বেশি। সে ক্ষেত্রে কাঁটা-ছুরি-চামচ ইত্যাদির বালাই নেই। কারণ, কবজি ডুবিয়ে না খেলে রসনা তৃপ্ত হয় না। আর খাবার বেড়ে দেওয়া বাঙালি আপ্যায়নের চিরাচরিত চল। তাই টেবিলে বিছিয়ে রাখা রানারের ওপরে খাবারের পাত্রগুলো রেখে দিন। অতিথির সংখ্যা কম হলে একেবারে থালা এবং চার পাশে থরে থরে বাটি সাজিয়েও পরিবেশন করতে পারেন।
খাবার টেবিলে ছোট ছোট জিনিসের যোগ বিয়োগ বদলে দিতে পারে টেবিলের সৌন্দর্য। তাই টেবিল সাজানোর পেছনেও কিছুটা মাথা খাটানো জরুরি। এতে অতিথিও নিজেকে বিশেষ ভাববেন।