সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস কীভাবে এক দিনের ফ্লাইটের জন্য ৫০ হাজার মানুষের খাবার তৈরি করে
দিনে ৫০ হাজার মানুষের খাবার! তা-ও আবার একটি পদ নয়, অনেক পদের বিশেষ মিল। সেসব খাবারের কোয়ালিটিও পাঁচ তারকা মানের। এই ধরুন ছয় থেকে সাত হাজার অমলেট নিয়মিত তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। অথবা মাছ-মাংসের বিশেষ বিশেষ পদ। ডিমের অমলেটের জন্য বিশাল এক গোল টেবিল আকারের যন্ত্রচালিত চুলায় বসানো থাকে অনেকগুলো প্যান। প্রতিটি প্যান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেই এগিয়ে আসছে আর ওপর থেকে ফেটানো ডিমের গোলা পড়ছে একটা নির্দিষ্ট মাপে। শেফরা সেটা নাড়ছেন, ওলটাচ্ছেন, সুন্দর করে সাজিয়ে নামাচ্ছেন। এ যেন নাচের ছন্দে ছন্দে কাজ! বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রীর জন্য প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টা বিরামহীন এই খাবার তৈরি করছেন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের দক্ষ একদল শেফ।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের গ্লোবাল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের পরিচালক অ্যান্টনি বলেন, বছরব্যাপী এই ভোজের জন্য তাঁর বাজেট ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি, যার একটা বড় অংশই চলে যায় ১০ লাখ পাউন্ড চাল আর ১ লাখ ৬৮ হাজার চিংড়ির পেছনে।
দিনে ৫০ হাজার মিল তৈরি করা এক মহাযজ্ঞই বটে। প্লেনের যাত্রীদের মতোই ক্যাটারিং বিভাগের স্টাফদেরও সারাক্ষণ চিন্তা থাকে যাত্রীদের খাবার যেন ফ্লাইট মিস না করে। আর সেই চেষ্টাই এখানকার কর্মীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের সবচেয়ে বড় এই ক্যাটারিং বিভাগটি সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে অবস্থিত। আর এই এয়ারলাইনসের সবচেয়ে বড় ক্যাটারিং পার্টনার এসএটিএস, যারা বছরে শত শত নতুন খাবারের মেনু তৈরি করার চেষ্টায় থাকে। খাবারের স্বাদ নিখুঁত করতে কখনো কখনো একটি পদের রেসিপি চূড়ান্ত করতে ৯ মাস থেকে ১ বছর লেগে যায়।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের বিমানে চাইনিজ, জাপানিজ, সিঙ্গাপুরিয়ান, ওয়েস্টার্নসহ বিভিন্ন ধরনের মেনু পাওয়া যায়। তবে কখন কী মেনু হবে, সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে প্লেনটি কোন শহর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে, তার ওপর। যেমন সিঙ্গাপুর সিটি থেকে বিমানটি ছেড়ে গেলে মেনুতে থাকবে ভাত, মুরগি, হকার স্যুপ ইত্যাদি। আবার নিউইয়র্ক থেকে ছেড়ে গেলে পদ বদলে হয়ে যাবে হয়তো স্মোক ট্রাউট সালাদ।
আসন অনুসারেও এয়ারলাইনসের খাবার আলাদা হয়ে থাকে। প্রথম শ্রেণির যাত্রীরা প্লেনের খাবারে সবচেয়ে বেশি বিকল্প পেয়ে থাকেন। লবস্টার থার্মিডর, বিফ টেন্ডারলিওন থেকে শুরু করে ক্যাভিয়ার পর্যন্ত। ইকোনমি শ্রেণিতে ভ্রমণ করা যাত্রীদের মেনুতে সাধারণত থাকে স্পাইসি ফিশ ও রাইস। তবে যে আসনেই টিকিট কাটুন না কেন, শেফদের চেষ্টা থাকে আমিষ, সবজি, শর্করা আর সসের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ একটি মিল উপহার দেওয়ার।
সূত্র: ইনসাইডার বিজনেস