আতাফলের এই ৮ গুণের কথা জানা আছে কি
শুধু স্বাদ–গন্ধের জন্যই না, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অসাধারণ এক ফল আতা। আতাফলে রয়েছে প্রোটিন, শর্করা, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, কারোটিনয়েড।
চলুন আতাফলের উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক—
১. আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
আতাফলে থাকা কারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য যৌগ শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অতিরিক্ত ফ্রি র্যাডিক্যাল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে, যা ক্যানসার ও হৃদ্রোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য দায়ী। আতাফলের লুটেইন নামক কারোটিনয়েড বিশেষভাবে কার্যকর, যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, কমায় হৃদ্রোগ ও কোনো কোনো ক্যানসারের ঝুঁকি।
২. মুড ভালো করে
আতাফল ভিটামিন বি৬-এর ভালো উৎস। এক কাপ (১৬০ গ্রাম) আতাফল থেকে দৈনিক প্রয়োজনীয়তার ২৪ শতাংশ পর্যন্ত ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায়। ভিটামিন বি৬ সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মুড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। যাঁদের শরীরে ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে বিষণ্নতার ঝুঁকি বেশি থাকে। আতাফল মুড ভালো করতে এবং বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
৩. ভালো রাখে চোখ
চোখের প্রধান অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলোর একটি লুটেইন। আর আতাফল লুটেইনে ভরপুর। এটি ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। লুটেইন বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা বেশি লুটেইন গ্রহণ করেন, তাঁদের চোখে ছানি পড়ার ঝুঁকি ২৭ শতাংশ কম।
৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
আতাফল পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পটাশিয়াম রক্তনালিকে শিথিল করে রক্তচাপ কমায়। একইভাবে ম্যাগনেশিয়ামও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ৫ শতাংশ।
৫. হজমে সহায়তা করে
প্রতি কাপ (১৬০ গ্রাম) আতাফলে প্রায় ৫ গ্রাম ফাইবার থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের ১৭ শতাংশ পূরণ করে। ফাইবার খাবার হজমে সহায়তা করে, অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। এতে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, যা অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৬. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আতাফলে ক্যাটেচিন, এপিকেটেচিন এবং এপিগালোকাটেচিনসহ ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি থামাতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাটেচিন স্তন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বন্ধ করতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
৭. প্রদাহ কমায়
আতাফলে থাকা কাউরেনোইক অ্যাসিড এবং অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রদাহজনিত প্রোটিন হ্রাস করতে সহায়তা করে। শরীরে প্রদাহ মানেই রোগের উৎপাত। প্রদাহজনিত রোগ, যেমন হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর আতাফল।
৮. বাড়ায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা
আসছে শীত। এ সময় সর্দিকাশি হয় বেশি। আতাফলের সমৃদ্ধ ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এটি নিয়মিত খেলে তা সর্দি বা ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে আতাফল খেতে পারেন।
সূত্র: হেলথ লাইন