আমার বাচ্চা ভাত খেতে চায় না
ভাতের প্লেট হাতে শিশুর পেছন পেছন ছুটছেন মা। আদর, ধমক, মারধর—দুই লোকমা ভাত মুখে দেওয়ার জন্য কত–কী! ভাত খাওয়ার সময় হলেই যে শিশুর যত বায়নাক্কা। আচ্ছা মুশকিল তো! খেতে দিন চিপস, চকলেট, পিৎজা, পাস্তা, বার্গার; খেয়ে নেবে ঝটপট। কিন্তু যত আদর করেই ভাত খেতে ডাকুন না কেন, ‘খাব না’ বলে দেবে ছুট। হামেশা এমন চিত্র দেখা যায়। অনেক মা-বাবাকেই বলতে শোনা যায়, ‘আমার বাচ্চা তো ভাত খেতেই চায় না।’
একটা শিশুর এই জগতে খাওয়ার মতো কত কী–ই না আছে বলুন! শৈশবে মুখরোচক খাবারের হাতছানি উপেক্ষা করা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। বাসা থেকে নামলেই হয়তো ছোটখাটো একটা দোকান। শিশুকে আদর করে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন চিপসের প্যাকেট। এ ছাড়া সহজ নাশতা হিসেবে প্যাকেটজাত খাবার বা ফাস্ট ফুডের অভ্যাস করে ফেললেন। দেখা যায়, আত্মীয়স্বজন প্রায়ই নিয়ে আসছেন ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। শিশুর পছন্দ হবে, সেই ভেবে আনা। কিন্তু এসব খেতে খেতে শিশুর স্বাদ বদলে যায়। রোজকার ভাত-মাছ-তরকারিতে সে স্বাদ পায় না। চটকদার বিজ্ঞাপনও শিশুমনকে টানে। তাই মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার শুরু করার সময় থেকেই শিশুর খাবার বেছে নিতে হয় সতর্কতার সঙ্গে, এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট তাসনুভা খান।
একটু বড় হতে হতে শিশু পরিবারের খাবারের বাইরে অন্য কিছু খাওয়ার জন্য বায়না ধরতেই পারে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে একেবারে কড়াকড়িভাবে বঞ্চিত না করে বরং দুই সপ্তাহে এক দিন নির্দিষ্ট করে ওর পছন্দের খাবার দিতে পারেন। কেউ প্যাকেটজাত খাবার নিয়ে এলেও শিশুকে বলুন, এটা ওই বিশেষ দিনটির জন্যই আনা হয়েছে। আত্মীয়স্বজন এসব খাবার নিয়ে এলে তাঁকেও বুঝিয়ে বলুন যে এতে ওর ক্ষতি হচ্ছে। আর যখন শিশুকে এসব খাবার খেতে দেবেন, তখন শর্ত জুড়ে দিন, যাতে সে আগে ভাত খায়। অর্থাৎ মুখরোচক অন্য খাবার খেতে দিন ভাত খাওয়ার পর।
ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ আব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান বলছিলেন, শিশুকে জোরাজুরি করে ভাত খেতে দেওয়া হলে তার মধ্যে অনীহা সৃষ্টি হয়। মুঠোফোন বা টেলিভিশন দেখিয়ে খাওয়ানো আরেকটি বড় ভুল। ভিডিও দেখতে দেখতে সে খাবারের স্বাদটাই অনুভব করতে পারে না। তাই খাবারে আগ্রহই হয় না। আগ্রহ সৃষ্টি করতে সবার সঙ্গে বসে নিজে নিজে খাবার ছড়িয়ে–ছিটিয়ে খাওয়ার স্বাধীনতা দিন ওকে।
ভাতের সঙ্গে থাকা অন্য খাবারগুলোতেও বৈচিত্র্য রাখুন, বাড়িতেই তৈরি করুন মুখরোচক পদ। অনেক মা–ই শিশুর পুষ্টির কথা ভেবে নিয়মিত খিচুড়ি বা পিশপাশ খাওয়ান। এই কাজ করা যাবে না। কারণ, এতে করে শিশুর খাওয়ার প্রতি একঘেয়েমি চলে আসে। পরিবারের অন্যরা যা খাচ্ছে, সেই খাবারই শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। ভাত খাওয়ানোর জন্য কিছুটা কৌশলী হতে পারেন। এই যেমন একেক দিন একেকভাবে তরকারি রান্না করুন। কিছু খাবারের আকৃতিতে বৈচিত্র্য আনুন। আর ঝাল, মসলা রাখুন পরিমিত। ১০ মাস বা ১ বছরের শিশুও অনায়াসেই হাতে গাজর বা শসার লম্বা টুকরা, মুরগির হাড় কিংবা এমন লম্বাটে যেকোনো কিছু ধরে খেতে পারে। তাই ভাতের সঙ্গে এগুলো রাখুন। এতে করে তার স্বাদের ধারণা তৈরি হবে।