পুরান ও নতুন ঢাকার যেখানে মিলবে সকালের বিশেষ নাশতা
পুরান ও নতুন ঢাকা—দুই অঞ্চলেই ছুটির দিনের সকালে রেস্তোরাঁগুলো বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। যে কারণে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সকালে বাইরে নাশতা খাওয়ার এই সংস্কৃতি।
মাস দুয়েক আগের কথা। এক ছুটির দিনের সকালে নাশতা করতে পরিবারের সবাই মিলে মিরপুর থেকে ধানমন্ডি ২৭–এর ‘বেঙ্গল বই’য়ে গিয়েছি। বাজে সকাল ৯টা। ভেতরে ঢুকতেই কাউন্টার থেকে জানানো হলো, অতিরিক্ত লোকসমাগমের কারণে আজ নাশতা শেষ হয়ে গেছে। বোঝা গেল, শহরে ছুটির দিনগুলোয় সকালে বাইরে নাশতা করার সংস্কৃতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ছুটির দিনটা এখন আর কেউ বাসায় কাটাতে চায় না। একটু সুযোগ মিললেই ঘুরে আসে বাইরে থেকে। অনেক পরিবারেই এই ঘুরে আসার শুরুটা হয় সকালে বাইরে নাশতা করার মধ্য দিয়ে। যে কারণে দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাইরে খাওয়ার এই সংস্কৃতি। পুরান ও নতুন ঢাকা—দুই অঞ্চলেই ছুটির দিনের সকালে রেস্তোরাঁগুলো বেশ জমজমাট হয়ে ওঠে। শুধু দেশীয় ঐতিহ্যবাহী নাশতাই নয়, নানা রকম বিদেশি খাবারের আয়োজন থাকে।
এমনি এক ছুটির সকালে পুরান ঢাকার লালবাগের রয়েল রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা গেল, হরেক রকম নাশতা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগরেরা। নান, পরোটা, স্যুপ, নিহারি, পায়া, হালুয়া, ডাল আরও কত কি! কথা বলে জানা গেল, সকালের নাশতার মেনুতে পায়া ও নিহারি বেশ বিখ্যাত। এই দুটি খাবার তাঁদের নিজস্ব রেসিপিতে তৈরি হয়। খাবার টেবিলগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিতেই কথার সত্যতা মিলল। যদিও তাঁদের পায়া ও নিহারিই বিখ্যাত, তবে বুটের ডালের স্বাদটাই যেন বেশি ভালো লাগল।
পুরান ঢাকার খাবারের ভক্ত, অথচ টিকাটুলির ইত্তেফাক মোড়ের দেশবন্ধুর নাশতা একবারও খেয়ে দেখেননি, এমনটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই দোকানের পরোটা ও সবজি চার যুগ ধরে ভোজনরসিকদের রসনাতৃপ্ত করে আসছে। দোকানের সাজসজ্জা খুবই সাদামাটা। এরপরও খাবারের স্বাদ ও দোকানের ঐতিহ্যের টানেই এখানে হাজির হন ক্রেতারা। শুধু ছুটির দিনেই নয়, দেশবন্ধুতে সপ্তাহের সাত দিনই সকালের নাশতা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল রোডের চৌরঙ্গী, বংশালের আল রাজ্জাক, চান খাঁরপুলের নীরব হোটেল, মতিঝিলের হীরাঝিল সকালের নাশতার জন্য বেশ বিখ্যাত।
সকালে নাশতায় নতুন ঢাকার আয়োজনও কিন্তু কম নয়। কোনো কোনো জায়গা তো শুধু ছুটির দিনের সকালের খাবারের জন্য বিশেষ আয়োজন করে থাকে। সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষের কাছে পছন্দের জায়গা বেঙ্গল বই। ছুটির দিনের সকালবেলায় এখানে প্রচুর লোকের ভিড় হয়। কখনো বন্ধুদের নিয়ে, কখনো–বা পরিবার–পরিজনের সঙ্গে আড্ডায় মুখর থাকে টেবিলগুলো।
প্রতি শুক্র ও শনিবার লুচি ও খিচুড়ির ২টি প্ল্যাটারের আয়োজন থাকে। খিচুড়ির সঙ্গে থাকে ১টি করে বেগুনভাজা, ১টি ডিম, ১টি রসগোল্লা, আমের আচার ও ১ কাপ চা। লুচির সঙ্গে কখনো থাকে লাবড়া, কখনো বা ডাল খাসি। এখানে প্রতিটি প্ল্যাটারের দাম পড়বে ৩০০ টাকা, জানালেন বেঙ্গল বইয়ের ফুড ডিপার্টমেন্টের সুপারভাইজার ইসহাক হোসেন। এ ছাড়া ধানমন্ডি, বনানী বা কারওয়ান বাজারে স্টার কাবাবের যেকোনো শাখায় বেশ সুলভ মূল্যেই মিলবে সকালের নাশতা।
এদিকে যাঁরা মিরপুরবাসী, তাঁরা রাব্বানী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ নামটার সঙ্গে বেশ পরিচিত। এই রেস্তোরাঁর অন্যান্য বেলার খাবারের মতো সকালের নাশতা ভোজনরসিকদের কাছে বেশ প্রিয়। রুমালি রুটির সঙ্গে কলিজা ভুনা কিংবা খাসির মাথা—এমনি সব মজার মজার খাবার। তবে এখানে এসব বিশেষ মেন্যু খেতে চাইলে সকাল আটটার মধ্যে পৌঁছাতে হবে।
নাশতায় যাঁদের বুফে পছন্দ, তাঁরা চলে যেতে পারেন মাচানে। এখানকার ম্যানেজার শামীর তালুকদার জানালেন, ব্রেকফাস্টে বুফের আয়োজন শুধু শুক্রবারেই হয়ে থাকে। এখানকার খাবারের নামগুলোও বেশ মজার। প্যাঁচানো পরোটা, দমাদাম আলুর দম, সুরৎ চিকেন কিংবা নানে মাখানের মতো মজাদার ২০ পদের খাবার মিলবে। দাম পড়বে মাত্র ৪৯৫ টাকা। শাহজাদপুরের লেক ড্রাইভ রোডের এই রেস্তোরাঁটিতে শুক্রবার সকালে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে সকালের নাশতার আয়োজন।
ছুটির দিনে যাঁদের একটু দেরিতে ঘুম ভাঙে, তাঁরা চলে যেতে পারেন গুলশান লিংক রোডের টেরাকোটা টেলসে। কারণ, এখানে নাশতার আয়োজনটা একটু দেরিতেই শুরু হয়। ‘আসলে আড়ংয়ের ওপেনিংয়ের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের রেস্তোরাঁ ওপেন করা হয়। শুক্র ও শনিবার—ছুটির এই দুই দিন তাই সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এখানে থাকে স্পেশাল ব্রেকফাস্টের আয়োজন,’ বলছিলেন টেরাকোটা টেলসের ম্যানেজার আহসান হাবীব।
ছুটির দিনে যাঁরা নাশতা করার পাশাপাশি একটু ঘুরে বেড়াতে চান, তাঁরা চলে আসতে পারেন মাদানি রোডের শেফ টেবিল কোর্ট সাইডে। শুক্র ও শনিবার ট্রেডিশনাল ব্রেকফাস্টের পাশাপাশি শেফ টেবিলে থাকছে ইংলিশ ব্রেকফাস্টের আয়োজন। এখানকার ফুড কোর্টের গ্রিন অ্যান্ড সিডস দোকানটিতে ইংলিশ ব্রেকফাস্টের পাশাপাশি পাবেন স্টাফড অমলেট, এগ বেনেডিক্ট ও শাকশুকা। দাম ৩৩৪ থেকে ৩৮০ টাকার মধ্যে। শেফ টেবিল কোর্ট সাইডের ডিউটি ম্যানেজার খান হোসেইন আহমেদ জানালেন, বিদেশি নাশতার পাশাপাশি বাঙালি খাবারের আয়োজনও থাকে শেফ টেবিল কোর্ট সাইডে। বাংলার হটপট ও উৎসব—এই দুটি খাবারের দোকানে মিলবে সকালের ঐতিহ্যবাহী নাশতা। এ ছাড়া সকালে শেফ টেবিলে নানা রকম ফল থেকে বানানো শরবতের আয়োজন থাকে বলে জানালেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিটি ব্রেকফাস্ট মেনুর সঙ্গেই স্পেশাল চা সরবরাহ করা হয় এই ফুড কোর্টে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতেই গড়ে উঠেছে নতুন নতুন রেস্তোরাঁ। এসব দোকানে গেলে কফির সঙ্গে বিদেশি নাশতার আয়োজন দেখতে পাওয়া যায়। ক্রিমসন কাপ, নর্থ অ্যান্ড, ক্যাফে সাও পালো, গ্লরিয়া জিনস, কফি বিন অ্যান্ড টি লিফ, বাটলারস চকলেট ক্যাফে, দ্য হোয়াইট ক্যানারি ক্যাফে, হলি আর্টিজেন বেকারি ইত্যাদি। এ ছাড়া ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতেও সকালের নাশতার আয়োজন থাকে।