যে খাবারগুলো কখনোই ব্লেন্ডারে দেবেন না
বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে ফলফলাদি থেকে শুরু করে নানা ধরনের মসলা চূর্ণ করার কাজে আমরা প্রতিনিয়ত ব্লেন্ডার ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এমন কিছু খাদ্যদ্রব্য আছে, যেগুলো কখনোই ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা উচিত না। কী সেগুলো? আর কেন–ই বা সেগুলো ব্লেন্ডারে দেওয়া যাবে না? জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার
উচ্চ আঁশযুক্ত সবজি যেমন ব্রকলি, গাজর, ফুলকপি ব্লেন্ডারে দেওয়া উচিত নয়। উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ার কারণে এই খাবারগুলোকে ব্লেন্ড করতে বর্তমান বাজারের সবচেয়ে আধুনিক সুপার ব্লেন্ডারও হিমশিম খেতে পারে! এগুলো ব্লেন্ডারে দেওয়াতে আপনার ব্লেন্ডার সহজেই ‘ফিটনেস’ হারাবে।
বরফ-জমা ফলমূল
আম, পেঁপে, তরমুজ, আনারসের মতো ফল ব্লেন্ডারে পিষে অনেকেই জুস বানিয়ে খান। এসব ফলমূল আমরা সাধারণত ফ্রিজে সংরক্ষণ করে থাকি। তবে বরফ–জমা ফল কখনোই ব্লেন্ডারে দেওয়া উচিত নয়, এতে ব্লেন্ডারটাই হয়ে যেতে পারে বিকল।
বাদামজাতীয় খাবার
বর্তমানে বাদামজাতীয় বিভিন্ন খাবার যেমন কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, শিমের বিচি, কোকোয়ার বিচি চূর্ণ করে সংরক্ষণ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। এভাবে শক্ত খাবার ব্লেন্ডারে চূর্ণ করলে ব্লেন্ডারের মোটর তৎক্ষণাৎ হার মানতে পারে।
কড়া গন্ধযুক্ত রান্নার উপকরণ
রসুন, পেঁয়াজ অথবা মরিচের মতো কিছু রান্নার উপকরণ ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করলে তা রাবার সিলকে গন্ধযুক্ত করে ফেলে। পরে যেকোনো কিছু ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করতে দিলে তা থেকে আপনি হয়তো রসুন কিংবা পেঁয়াজের গন্ধ পেতে পারেন। ভালোভাবে পরিষ্কার করার পরেও এই কড়া গন্ধ থেকেই যায়।
হাড়জাতীয় খাবার
অনভিজ্ঞতাবশত এই ভুলটা আমরা সবাই কম–বেশি করে থাকি। হাড়জাতীয় খাবার কখনোই ব্লেন্ডারে দেওয়া উচিত না। বর্তমান সময়ের মুখরোচক কিছু খাবার যেমন মিটবল, মাছের চপ, কেক বানাতে আমাদের মাংস বা মাছ ব্লেন্ড করতে হয়। হাড়সহ মাংস বা কাঁটাসহ মাছ, কোনোটাই ব্লেন্ডারে দেওয়া উচিত নয়।
মাংস
বিশেষজ্ঞদের মতে মাংস ব্লেন্ড করলে তা মাংসের গঠনগত গুণাগুণ পাল্টে ফেলে। ফলে পুষ্টি উপাদান অনেকটাই কমে যায়। এ জন্য মাংস ব্লেন্ড করে না খাওয়াই উত্তম।
রোদে শুকানো টমেটো
টমেটো রোদে শুকানোর ফলে অনেক শক্ত হয়ে যায়। ফলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করা জটিল হয়ে পড়ে। হাই-পারফরম্যান্স ব্লেন্ডার ছাড়া এ রকম খাদ্যদ্রব্য একদমই ব্লেন্ড করা উচিত না।
টমেটো সস
অনেকেই প্যাকেটজাত টমেটো সস এড়াতে ব্লেন্ডার ব্যবহার করে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলেন। কিন্তু টমেটো ব্লেন্ড করার কাজে ব্লেন্ডার এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আলু
আলু এবং আলুর মতো যেসব শর্করাজাতীয় সবজি আছে, তা সাধারণ উপায়ে চূর্ণ করাই উত্তম। ব্লেন্ডার ব্যবহার করলে সবজিগুলো অতিরিক্ত চূর্ণ হয়ে যায়, যা এদের গঠনকে পরিবর্তন করে পুষ্টিমান কমিয়ে দেবার পাশাপাশি স্বাদও নষ্ট করে ফেলে।
অতিরিক্ত গরম কোনো খাবার
অতিরিক্ত গরম খাবার ভুলেও ব্লেন্ডারে দেবেন না। এটি করলে আপনার ব্লেন্ডার অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি ব্লেন্ডার বিস্ফোরিতও হতে পারে। এ জন্য খাবার এবং পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ব্লেন্ডারে প্রবেশ করাতে চেষ্টা করুন।
মাখা ময়দার তাল
ময়দা মেখে পরে ব্লেন্ডারে দেওয়া উচিত নয়, ব্লেন্ডারের পাখা আটকে বিকল হয়ে যেতে পারে।
আদা
আদার অতিরিক্ত আঁশ ব্লেন্ডারকে ঠিকমতো কাজ করতে দেয় না। আদা সরাসরি ব্লেন্ডারে না দিয়ে কেটে ছোট টুকরা করে দেওয়া উচিত।
পাউডার
আটা, ময়দা, সুগার পাউডার জাতীয় জিনিস ব্লেন্ডারে দিলে তা মিক্স হওয়ার বদলে ব্লেন্ডারময় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যেতে থাকে। এ জন্য একাধিক পাউডার একত্রে মিক্স করার ক্ষেত্রে হালকা পানি মিশিয়ে নেওয়া সুবিধাজনক।
শাক
স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা শাক ব্লেন্ডারে পিষতে গেলে তা বাদামি রং ধারণ করতে পারে। তাছাড়া শাকের ফাইবার নষ্ট হয়ে পুষ্টিমানও কমে যায়। তাই শাকের সতেজতা ধরে রাখতে, শাকপাতাগুলো মিনিট পাঁচেক বরফে ভিজিয়ে রেখে তারপর ব্লেন্ডারে দিন। তাহলে অন্তত রং নষ্ট হবে না।
অতি সামান্য বা অতিরিক্ত পানি মেশানো
কিছু ব্লেন্ড করার সময় অবশ্যই তাতে পানির অনুপাতটা সঠিক রাখতে হবে। প্রয়োজনে খাবার ব্লেন্ডারে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে পানি মেশানো যেতে পারে, যাতে করে সঠিক অনুপাতটা বোঝা যায়। একদিকে পানির পরিমাণ কমে গেলে খাদ্যদ্রব্যটি ঠিকমতো ব্লেন্ড হবে না। অন্যদিকে অতিরিক্ত পানি দিয়ে ফেললে খাবার ব্লেডের সংস্পর্শে আসে না। ফলে ব্লেন্ড হয় না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট