যে দোকানে মিলবে ১০০ টাকায় মিটবক্স, ২০০ টাকায় ডোনার কাবাব
দামের হিসাবে বেশ ছোট অঙ্ক। ২০০ টাকার কমে মিটবক্স পাওয়া ঢাকায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে ২০০ টাকাও খুব বেশি নয়। তার ওপর আছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির খরচ, জায়গার ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন। আর একটি বিষয় আলিশকান পরিবেশবান্ধব কাগজের বাক্সে খাবার সরবরাহ করে।
মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব যে ক্যাম্পাস, তার পাশে আলিশকান টেক অ্যাওয়ে রেস্তোরাঁ। কয়েক মাস হলো নতুন ক্যাম্পাসে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আসবে শোনার পর থেকেই ঢাকার বেশ কিছু নামী রেস্তোরাঁ তাদের শাখা খোলে এখানে। আলিশকান অবশ্য চেইন রেস্টুরেন্ট নয়, সবে যাত্রা শুরু করেছে। ডোনার কাবাব তার সিগনেচার আইটেম।
কাবাবের রাজ্য বলে আনাতোলিয়ার পরিচিতি সুপ্রাচীনকাল থেকে। ধারণা করা হয়, আনাতোলিয়ার এক বড় শহর বুরসায় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তুর্কির কাবাব (ডোনার কাবাব) প্রথম তৈরি হয়। এমনিতে ডোনার (ঘূর্ণমান) বলা হলেও তুর্কিতে এর নাম দোনের। তুর্কি ‘আলিশকান’ শব্দের অর্থ ‘অভ্যাস’। শব্দটির সেই দেশে বেশ চল রয়েছে।
বুরসায় এক ভোজনরসিক লোক ছিলেন, নাম ইস্কান্দার আফেন্দি। ইস্কান্দার একদিন পোড়া মাংসের এক চমৎকার রেসিপি আবিষ্কার করে নিজেই অবাক বনে যান। ওই পদ্ধতিতে কচি ভেড়া, গরু বা মুরগির মাংসে কিছু মসলা মিশিয়ে মেরিনেট করে লম্বা একটি কাঠির ভেতর প্রবেশ করিয়ে খাড়াভাবে স্থাপিত একটি কয়লার চুলায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পোড়ানো হতো। পোড়া মাংসগুলো পাশ থেকে কেটে ফেলার পর পাওয়া যেত ভেতরের নরম ও সুস্বাদু মাংস। এর কিছু টুকরাকে রুটির ভেতর দিয়ে সালাদ, লেটুস, টমেটো, পেঁয়াজ, সসসহ আরও কিছু উপাদানসহযোগে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।
শুরুর দিকে এটি ইস্কান্দার কাবাব বলে পরিচিতি পেলেও পরে হয় ডোনার কাবাব বা দোনের কাবাব। চাহিদার দিক থেকে এটি বিশ্বের শীর্ষ খাবারগুলোর একটি।
গত শতকের গোড়ায় তুরস্ক জার্মানিতে যখন বড় এক দল কর্মী পাঠায়, তখন জার্মানি থেকে ইংল্যান্ড হয়ে সারা ইউরোপে তাদের মারফতই ডোনার কাবাব ছড়িয়ে পড়ে। তারপর জার্মান ডোনার কাবাব নামের এক প্রতিষ্ঠান দুবাই, যুক্তরাজ্য, আমেরিকায়ও সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। কাবাবটিকে ফ্রান্সেও নিয়ে গিয়েছিল অভিবাসী তুর্কিরা। সেখান থেকে এটি উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে ও জনপ্রিয় হয়। দিনে দিনে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আলিশকানের স্বত্বাধিকারী মাহমুদ হাসান আরিফ। যখন তিনি ভাবলেন এখানে একটি রেস্তোরাঁ খুলবেন, তখন ছাত্ররা আগ্রহী হবে, এমন খাবারই বিপণনের কথা ভাবলেন। সে হিসেবে বার্গার, স্যান্ডউইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই—এ–জাতীয় খাবারের কথাই মনে এল আগে। পরে এক বন্ধুর পরামর্শে ডোনার কাবাবকেই অগ্রাধিকার দিলেন তিনি। এর তিনটি কারণ, ঢাকার খুব বেশি রেস্তোরাঁ এটি তৈরি করে না, শিক্ষার্থীরা সহজে এটি খেতে পারবে, দামও নাগালের মধ্যে রাখা যাবে। আর এর স্বাদের কথা নতুন করে বলার কী আছে!
আরিফ পেশায় সাংবাদিক, আলিশকান তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প। এ থেকে যত না আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাইলেন, তার চেয়ে বেশি চাইলেন মানুষকে খাইয়ে খুশি করতে।
সর্বোপরি আরিফ ভাবলেন, কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের উপায়ও হতে পারে আলিশকান। তিনি নামলেন কোমর বেঁধে। চাহিদামাফিক ওভেন, ফ্রিজারসহ রান্নাঘর-সরঞ্জাম কেনার পর বাহারি নকশার ব্যানার, সাইনবোর্ড তৈরি করালেন। এরপর ডোনার কাবাব তৈরিতে পারদর্শী শেফ খুঁজে বের করলেন।
জার্মানির খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী ডোনার কাবাব ভেড়া বা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি করতে হবে, যাতে গোশতের ভাগ থাকবে ৬০ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হবে লবণ, ডিম, মসলা, তেল, পেঁয়াজ, দুধ, দইসহ আরও কিছু উপাদান।
আলিশকানের সিগনেচার আইটেম ডোনার কাবাবের নাম এরই মধ্যে পরিচিত, তবে ক্রেতা টানছে মিটবক্স।
প্রিমিয়াম ও ক্ল্যাসিক কোয়ালিটির ডোনার কাবাবে ভিন্ন স্বাদের কয়েকটি ধরন রয়েছে—অরিজিনাল ডোনার, নাগা ডোনার, হানি মাস্টার্ড ডোনার, ওয়াসাবি মায়ো ডোনার, পেরি পেরি ডোনার, সসেজ ডোনার। দাম ২০০ থেকে ৪৪০ টাকা পর্যন্ত।
প্রিমিয়াম ও ক্ল্যাসিক কোয়ালিটির ছোট, মাঝারি ও বড় প্যাকেটে তিনটি স্বাদের মিটবক্স পাওয়া যায়, নাগা ডোনার মিটবক্স, হানি মাস্টার্ড ডোনার মিটবক্স ও পেরি পেরি মিটবক্স। দাম ১০০ থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত।