শুধু উদ্ভিদ থেকেই প্রোটিনের চাহিদা কীভাবে মেটাবেন

প্রোটিন হলো শরীরের বিল্ডিং–ব্লক। পেশি তৈরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজাইম (উৎসেচক) ও হরমোন তৈরির কাজে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দেহের একাধিক জরুরি কাজে এই উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে অটুট রাখতেও সাহায্য করে প্রোটিন। প্রত্যেক মানুষের সুস্থ থাকতে চাই প্রোটিনযুক্ত খাবার।

সারা দিনের মোট ক্যালরির ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন–জাতীয় খাবার থেকে আসতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তির ওজনের প্রতি কেজির জন্য প্রতিদিন ০.৮ গ্রাম থেকে ১ গ্রামের মতো প্রোটিন দরকার। কাজেই সুস্থতা ধরে রাখতে তার প্রতিদিন ৫০-৬০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া জরুরি। কথা হচ্ছে, কোন প্রোটিন ভালো? প্রাণিজ, নাকি উদ্ভিজ্জ? দুটিতেই অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। তবে প্রাণিজ প্রোটিনের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু অনেক বেশি। অর্থাৎ এই প্রোটিনে শরীরের প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড উপস্থিত থাকে। অপর দিকে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনে অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা তুলনামূলক কম। ফলে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের তুলনায় প্রাণিজ প্রোটিনের গুণগত মান অনেক বেশি।

উদ্ভিজ্জ খাবার থেকেও মেলে প্রোটিন
ছবি: প্রথম আলো

তবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ যেকোনো ধরনের প্রাণিজ প্রোটিনযুক্ত খাবারের সঙ্গে দেহে প্রচুর চর্বি প্রবেশ করে। আর এসব খাবারে কিন্তু ফাইবারের পরিমাণও তেমন নেই। তাই প্রাণিজ প্রোটিন বেশি পরিমাণে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক, ক্যানসারসহ একাধিক জটিল অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এসব বিবেচনায় উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অত্যন্ত উপকারী। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ এবং দ্য প্ল্যান্ট–বেজড বেবি অ্যান্ড টডলার বইয়ের রচয়িতা হুইটনি ইংলিশ বলেন—বীজ, সয়া, বাদাম, শিম ও শস্যজাতীয় খাবার থেকে সহজেই একজন মানুষ দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। আসলে উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে প্রোটিনের পাশাপাশি জরুরি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন, যা রোগ থেকে দূরে রাখে। তাই ডায়েটে নিরামিষ প্রোটিন রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। ডাল, সয়াবিন, ছাতু, ভুট্টা, ছোলাসহ উদ্ভিজ্জ একাধিক খাবারে রয়েছে প্রোটিনের ভান্ডার। তাই নিরামিষাশীরা এ ধরনের খাবার খেয়েই দেহের প্রোটিনের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে পারবেন। আর এ ধরনের খাবারের আরও একটি সুবিধা রয়েছে। এসব খাবারে প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মেলে প্রচুর। আর এসব উপাদানই শরীর সুস্থ রাখার কারিগর।

উদ্ভিদ—উদ্ভিজ্জ উৎসের খাবারের মধ্যে লতানো উদ্ভিদ থেকে আসা খাবারে পুষ্টি উপাদান থাকে সবচেয়ে বেশি
ছবি: প্রথম আলো

আসলে স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বুঝতে হবে, কোন প্রোটিন কার জন্য প্রযোজ্য। তবে আমি প্রোটিনের উৎস হিসেবে তরতাজা উদ্ভিজ্জ–জাতীয় খাবার বেছে নেওয়ারই পরামর্শ দেব। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলতে পারলে অনেক ঝামেলামুক্ত থাকা যায়। এমনকি মাংসের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত ‘উদ্ভিজ্জ মাংস’ ও প্রোটিন পাউডার খাওয়াও এড়িয়ে যাওয়া উচিত। মাংসের বিকল্প কালেভদ্রে খাওয়া যায়, নিয়মিত নয়। মনে রাখতে হবে, এতে ভোজ্য আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান ইত্যাদি কমই পাওয়া যাবে।

এবার এ–জাতীয় খাবারের নাম ও সেসব খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন।

উদ্ভিদ—উদ্ভিজ্জ উৎসের খাবারের মধ্যে লতানো উদ্ভিদ থেকে আসা খাবারে পুষ্টি উপাদান থাকে সবচেয়ে বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য আঁশ আর ভিটামিন বি থাকে। যেমন প্রতি কাপ মসুর ডালে প্রোটিনের পরিমাণ ১৮ গ্রাম। আবার কালো শিমের বীজের প্রতি কাপে প্রোটিন মিলবে ১৫ গ্রাম। আর এই দুটি খাবারই স্যুপ, সালাদ ইত্যাদির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। সয়াবিন ও অন্যান্য সয়া খাবার নিয়ে মানুষের মধে৵ নানা মত প্রচলিত। প্রাকৃতিকভাবে সয়া পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার। প্রোটিনের মাত্রাও ভালো। প্রতি কাপ সয়া থেকে মিলতে পারে প্রায় ১৮ গ্রাম প্রোটিন। সেদ্ধ মটরশুঁটি, শেলড বিনস, টফু, সয়াবিন—সব কটি খাবারেই প্রোটিন মিলবে। সঙ্গে আরও মিলবে ওমেগা থ্রিএস, লৌহ, ভিটামিন বি এবং ‘ফাইটোকেমিক্যালস’ নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

বীজজাতীয় খাবার আকারে ছোট হলেও প্রোটিন কম নয়। ওটমিল, স্মুদি, স্যুপ ইত্যাদি খাবারে সহজেই বীজজাতীয় উপাদান যুক্ত করা যায়। কুমড়ার বীজ আর চিয়া সিডেও প্রচুর পুষ্টি ও প্রোটিন উপাদান পাওয়া যায়। এই বীজ দুটি মাত্র দুই টেবিল চামচেই জোগান দিতে পারে ৫ গ্রাম প্রোটিন।

শস্যজাতীয় খাবার হলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে আবার কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট প্রোটিনের আদর্শ উৎস। এক কাপ কাঁচা বাদাম দিতে পারে ৪ থেকে ১০ গ্রাম প্রোটিন। এর মধ্যে এক কাপ চিনাবাদামে থাকে সাড়ে ৯ গ্রাম প্রোটিন। আবার দুই টেবিল চামচ বাদামের মাখন বা পিনাট বাটার জোগাতে পারে ৭ থেকে ৮ গ্রাম প্রোটিন। শস্যজাতীয় খাবার হলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট। ওটসের প্রতি কাপে জোগায় ১২ গ্রাম প্রোটিন, যা প্রায় দুটি ডিমের সমান। সেই ওটমিলের সঙ্গে যদি যোগ করা হয় সয়া মিল্ক আর পিনাট বাটার, তবে দিনের শুরুতেই পেয়ে গেলেন ২০ গ্রাম প্রোটিন। গমের আটার প্রতি কাপে মেলে ১১ গ্রাম প্রোটিন। গমের ময়দার প্রতি কাপে ২৫ গ্রাম প্রোটিন। এক কাপ ‘কিনোয়া’ থেকে পেতে পারেন ৮ গ্রাম প্রোটিন। সবজি থেকেও মেলে প্রোটিন। প্রতি কাপ সবুজ মটরশুঁটি থেকে পাওয়া যায় ৯ গ্রাম প্রোটিন, সেই সঙ্গে মেলে ভোজ্য আঁশ ও ভিটামিন। একটি আস্ত আলু প্রায় ৭ গ্রাম প্রোটিনের জোগান দেয়। পালংশাকের প্রতি কাপে আছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন।

সূত্র: হেলথলাইন