ঢাকার যে ক্যাফেতে পোষা কুকুর–বিড়াল সঙ্গে নিয়ে খেতে পারবেন, তাদের জন্যও আছে কেক কুকিজ
ক্যাফে-রেস্তোরাঁর তো আর অভাব নেই। তার মধ্যেও ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা সড়কে অবস্থিত প্যাট আ পেট অন্য রকম। প্রাণিবান্ধব এই ক্যাফেতে এলে খাবারের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন বিড়ালের সান্নিধ্য। শুধু তা-ই নয়, চাইলে আপনার পোষা বিড়াল, কুকুর কিংবা খরগোশদেরও সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। তবে অবশ্যই তাদের প্রয়োজনীয় টিকা দেওয়া থাকতে হবে। বিড়াল-কুকুরের জন্য আলাদা খাবারও পাবেন।
ক্যাফের ভেতরটা ঘুরে দেখছিলাম। হঠাৎ আড়াল থেকে আগ বাড়িয়ে কেউ ‘আলাপ’ জুড়ে দিল। আলাপীকে ইতিউতি খুঁজে শেষে চেয়ারের তলে পাওয়া গেল। সাড়া পেয়ে চেয়ারের নিচ থেকে বেরিয়ে এসে আদরও নিল। জানা গেল, তার নাম লাড্ডু। কিছুদিন আগে পথ থেকে এই ক্যাফেতে ঠাঁই পেয়েছে। শরীরে তখনো একটি পুরোনো পোড়া ক্ষত।
কেবল লাড্ডুই নয়, এই ক্যাফের আশ্রয়ে রয়েছে লালু, কালু, বনানী, ব্রাউনি, মিকি, হিটলারসহ আরও ‘কয়েকজন’। কোনো না কোনো অনিরাপদ পরিবেশ থেকে এদের উদ্ধার করে আনা হয়েছে। অতিথিরা চাইলে তাদের আদরও করতে পারেন। নিদেন পক্ষে তাদের আদুরে কীর্তি উপভোগ করতে পারেন। লাড্ডু ‘মিউ’ ডাকে যেভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, তাতে মনে হয়েছিল তাকে বুঝি বেশ আয়েশ করে আদর করা যাবে। কিন্তু বিড়াল যে নিজের ইচ্ছার রাজা! সে যতটুকু চায়, তার বেশি আদর দিতে গেলেই বিপত্তি। তাই মতিগতি বুঝে তার সঙ্গে ভাব জমাতে হবে।
উদ্যোগের প্রেরণা
প্রাণিবান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলার ভাবনা থেকেই প্যাট আ পেট ক্যাফের সূচনা। যে কেউ যাতে নিজের পোষা প্রাণী নিয়ে স্বচ্ছন্দে ঘুরতে বেরোতে পারেন, অন্যরাও যাতে মানুষের সঙ্গে প্রাণীর সহজ সম্পর্কটাকে উপলব্ধি করতে পারে, তা থেকে এমন ক্যাফে। কারও মধ্যে অহেতুক ভয় থাকলে সেটিও যেন কেটে যায়। রাকিবুল এমিল, সারিয়া সাওয়ারো এবং ফারজানা আলমের উদ্যোগে ২০২২ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে প্যাট আ পেট। তাঁদের ভাষায় এটি হলো প্রাণিপ্রেমীদের ক্যাফে। পোষা প্রাণী নিয়ে এলে আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাগত জানান সেখানকার কর্মীরা। প্রাণীর (অ)স্বাভাবিক আচরণে প্রাণীর মালিকদের এখানে কখনোই বিব্রতবোধ করতে হবে না।
পোষা প্রাণীরাও একটি পরিবারের সদস্য, তাদের জন্য কিছুটা হলেও সময় বের করা উচিত বলে মনে করেন এই তিন প্রাণিপ্রেমী। বাড়িতে পোষা প্রাণী না থাকলেও কোনো জায়গায় যদি পোষা প্রাণীর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে শিশু-কিশোরদের সেখানে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা। কোমল হৃদয়ে এভাবেই মানবিকতা আর সহমর্মিতা জন্মে। এই রেস্তোরাঁর অন্দর প্রাণিবান্ধব। বিড়ালের জন্য আছে ঝুলন্ত আসন, পছন্দের প্রিয় উঁচু তাকেও স্বাচ্ছন্দ্যে বসতে পারে তারা। ভবিষ্যতে কুকুরদের জন্য পানির পুল, মাটি খোঁড়ার খেলা বা অন্যান্য মজার কাজের সুযোগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
দ্বিতীয় বাড়ি
নিয়মিতই এই ক্যাফেতে আসেন আউটডোর অ্যাকটিভিটি ক্যাম্প বেজক্যাম্পের অপারেশন ম্যানেজার ইসরাত ইতু। কর্মসূত্রে তাঁকে থাকতে হয় গাজীপুর। ১২টি প্রাণীর তিনি অভিভাবক। প্রতি মাসে ঢাকায় আসেন। অন্য কোনো ক্যাফে বা রেস্তোরাঁয় পোষা প্রাণী নিয়ে গেলে অস্বস্তিতে পড়তে হয়, তাই এই ক্যাফে ছাড়া অন্য কোথাও খেতে যান না। নতুন পরিবেশে এসে কুকুর হুটহাট যেখানে-সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করে দিতে পারে। এখানে সে রকম হলে একমুহূর্ত দেরি না করে কর্মীরা, জায়গাটা পরিষ্কার করে দেন বলে জানালেন তিনি।
ক্যাফেতে সময় কাটাতে আসা অন্যরাও তাঁর পোষা প্রাণীদের আদর করেন। ক্যাফের পরিবেশ এবং খাবারের মান নিয়েও ইতিবাচক মন্তব্য করলেন। পরিবেশটা এতটাই স্বস্তিদায়ক, ঠিক যেন তাঁর ‘দ্বিতীয় বাড়ি’।
যেতে চাইলে, খেতে চাইলে
মানুষের জন্য এখানে পরিবেশিত হয় ‘ভেজিটেরিয়ান’ খাবার ও পানীয়। আর কুকুর-বিড়ালের জন্য আছে নানা রকম কুকিজ, কাপ কেক, বিড়ালের জন্য টুনা মাফিন ইত্যাদি। কুকুর-বিড়ালের জন্মদিনের নানা রকম কেকও মিলবে। ক্যাফের বারিস্তা (পেশাদার কফি প্রস্তুত ও পরিবেশনকারী) রিয়াজ হাসানের কাছ থেকে জানা গেল, আসলে খাবারের চেয়েও প্রাণিবান্ধব পরিবেশটাই বেশি টানে প্রাণিপ্রেমী মানুষকে। কখনো অতিথির পোষা প্রাণীর সঙ্গে ক্যাফের বিড়ালের সংঘর্ষের শঙ্কা সৃষ্টি হলে ক্যাফের বিড়ালদের সরিয়ে রাখা হয়। আর অতিথিদেরও তাঁর পোষ্যর নিরাপত্তা বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়। ক্যাফে খোলা থাকে রোজ। বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। ঠিকানা: প্লট ৮০, ব্লক এ, চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর, ঢাকা।