এই ৮ উপকার পেতে নিয়মিত পপকর্ন খান
শহরে সিনেমা হলের সিটে, পার্কের বেঞ্চিতে কিংবা চলতি পথে পপকর্ন মুখে দেননি এমন মানুষ বোধ হয় কমই আছেন। গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে এটি ‘ভুট্টার খই’ নামে পরিচিত। আগে গ্রামের মেলায় খুব পরিচিত খাবার ছিল এই খই। এখন তা কম দেখা গেলেও স্কুলের সামনে শিক্ষার্থীদের সামনেই ভাজা হয় তরতাজা ভুট্টার খই। হইহই করে বিক্রিও হয়ে যায়।
কখনো কি ভেবেছেন, এই মুড়মুড়ে ভাজা পপকর্ন কতটা স্বাস্থ্যকর?
এই প্রশ্ন শুনে কি থমকে গেল আপনার পপকর্ন চিবানো? থমকে যেতেই পারে। কারণ, বেশির ভাগ মুখরোচক খাবারই তো কিছুটা কম স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এই প্রশ্ন শুনে পপকর্ন চিবানো একদমই থামাবেন না। বরং পারলে চাপার জোর বাড়িয়ে আরও জোরসে চিবোতে পারেন মুড়মুড়ে এই শস্যদানা। বিকেল বা সন্ধ্যায় আপনার নিয়মিত নাশতায়ও যোগ করতে পারেন পপকর্ন।
১. কম ক্যালরিযুক্ত খাবার
পপকর্নে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম। তবে তা ফোলাতে হবে ঠিকঠাক। মাখনে মাখানো বা লবণে মেশানো যদি না হয়, তবে বাতাসে ফোলানো এক কাপ ভুট্টার খইয়ে থাকে মাত্র ৩০ ক্যালরি।
২. ফল বা সবজির চেয়েও স্বাস্থ্যকর
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ২০১৯ সালে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস নামের একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, পপকর্ন পলিফেনল নামের একধরনের যৌগে পরিপূর্ণ। পলিফেনল শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা প্রদাহ কমায়। ফল ও সবজিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় তা পলিফেনলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে পপকর্নে মাত্র ৪ শতাংশ পানি থাকে। ফলে বিশেষ করে এর যে শক্ত অংশটা দাঁতে আটকে যায়, তাতে প্রচুর পলিফেনল থাকে। তবে অন্যান্য ভিটামিন ও পুষ্টিগুণের কারণে ফল ও সবজি বাদ দিয়ে শুধু পপকর্ন চিবোলে কিন্তু চলবে না!
৩. পপকর্ন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে
পলিফেনলের অনেক গুণের একটি হচ্ছে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এটি সাহায্য করে। যেহেতু এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, ফলে তা ক্যানসার উৎপাদক ফ্রি-র্যাডিক্যাল নষ্ট করে দিতে পারে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চের মতে, পলিফেনলের অনেক ক্ষমতার একটি হচ্ছে তা শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী এনজাইমগুলোকে ব্লক করে। ক্যানসার কোষ তৈরি, বৃদ্ধি ও ছড়াতে ভূমিকা রাখে এসব এনজাইম। শরীরে এসব স্বাস্থ্যকর সুবিধা পেতে ফল ও সবজি খেতে বলা হয়। কিন্তু আগেই জেনেছি, পলিফেনলের আধিক্যের কারণে এসব ক্ষেত্রে পপকর্ন বেশি কার্যকর। পলিফেনল রক্তনালিতে ব্লক তৈরিতে বাধা দেয়। কার্ডিওভাসকুলার রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৪. প্রক্রিয়াকরণবিহীন শস্যদানা
ভুট্টার খই বা পপকর্ন কোনো ধরনের প্রক্রিয়াকরণ ছাড়াই খাওয়া যায়। ফলে এটা অন্য যেকোনো শস্যদানা খাওয়ার চেয়ে বেশি কার্যকরী। আমাদের শরীরের জন্য দিনে যে পরিমাণ দানাদার খাবার খেতে বলা হয়, এক বসায় পপকর্ন খেলেই তার ৭০ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে
পপকর্ন আঁশযুক্ত খাবার। এটা যেহেতু শস্যদানা হিসেবে খাওয়া হয়, ফলে এতে প্রচুর অদ্রবণীয় আঁশ থাকে। আঁশ হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ৩ কাপ ভুট্টার খইয়ে সাড়ে তিন গ্রাম আঁশ থাকে, যা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাড়িয়ে তোলে।
৬. ওজন কমায়
পপকর্নকে বলা হয় ‘পারফেক্ট ডায়েটিং স্ন্যাকস’। অনেক আঁশ থাকার কারণে ভুট্টার খই হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফলে তা আমাদের অনেকক্ষণ ক্ষুধা থেকে দূরে রাখে। এ কারণে দুই খাবারের মাঝামাঝি সময়ে যদি আমরা হালকা নাশতা হিসেবে পপকর্ন খাই, তবে তা মিষ্টিসহ উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখবে। মূল খাবারও কম লাগবে। তাই ভারী আঁশযুক্ত হালকা খাবার হিসেবে পপকর্নের জুড়ি নেই।
৭. ডায়াবেটিকবান্ধব
পপকর্ন ডায়াবেটিস রোগীদের বন্ধু-খাবার। ২০১৫ সালের সার্কুলার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, পপকর্নে যেহেতু অনেক আঁশ থাকে, তাই হজম দেরিতে হয়। ফলে এখান থেকে শর্করা রক্তে মিশতেও দেরি হয়। তাই পপকর্ন খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।
৮. লৌহের ঘাটতি পূরণ করে
পপকর্নে অনেক শাক-লতাপাতার চেয়ে আয়রন বেশি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১ আউন্স বা ২৮ গ্রাম পপকর্নে দশমিক ৯ গ্রাম আয়রন থাকে। এটি পরিমাণে কম মনে হতে পারে। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে মাত্র ৮ গ্রাম আয়রন দরকার হয়। নারীর শরীরে আরেকটু বেশি ১৮ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ১০ ভাগ নারী আয়রনের ঘাটতিতে ভোগেন। তাই আয়রনের ঘাটতি মেটাতে খুব ভালো নাশতা হতে পারে পপকর্ন।
সতর্কতা
পপকর্ন বা ভুট্টার খই থেকে এত সব উপকার পেতে অবশ্যই শুধু বাতাসে ফোলানো পপকর্নই খাবেন। মাখন বা লবণ মেশালে তাতে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাবে। তবে নিতান্তই শুধু ভুট্টার খই খেতে না চাইলে সঙ্গে দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলা মাখিয়ে তা মুখরোচক করে নিতে পারেন। তাই এখন থেকে শুধু সিনেমায়, পার্কে নয়, বাড়িতেও বিকেল বা সন্ধ্যার স্ন্যাকস হিসেবে পপকর্ন আপনার খাবার তালিকায় থাকতেই পারে।
সূত্র: দ্য হেলদি ডটকম