ঈদে শিল্পী কনকচাঁপা যে পাঁচটি পদ রাঁধবেন
সবার কাছে সংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিত হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও তৈরি হয়েছে ইদানীং। সেটি হলো তাঁর রাঁধুনিসত্তা। বরাবরই রান্না করতে ভালোবাসেন কনকচাঁপা। এত দিন সেটি শুধু জানতেন তাঁর নিকটজনেরা। ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খুলে এখন সেটিই সবার সামনে তুলে ধরছেন এই শিল্পী।
প্রায় এক বছর আগে ইউটিউবে চ্যানেলটি শুরু করেন কনকচাঁপা। নাম দেন ‘কনকচাঁপার পাকঘর’। চ্যানেলটির গ্রাহক এখন প্রায় ৪০ হাজার ৫০০। কিছু দিন পরপরই সেখানে নতুন নতুন রান্নার ভিডিও নিয়ে হাজির হন তিনি। হাসিমুখে শিখিয়ে দেন রন্ধনপ্রণালি। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, খুব দক্ষ হাতে কুটছেন মাছ-মাংস-সবজি, নিচ্ছেন নতুন কোনো রান্নার প্রস্তুতি আর চটপট তৈরি করে ফেলছেন মজাদার সব খাবার।
নিয়মিত রান্না থেকে শুরু করে ঈদ কিংবা অন্যান্য উৎসবে নিজের হাতেই বাড়ির সব রান্না সারেন তিনি। এই ঈদেও রাঁধবেন বিশেষ কয়েকটি পদ। ভিডিওর রান্না আর ঈদের রান্নার পার্থক্য জিজ্ঞাসা করতেই হেসে ফেললেন কনকচাঁপা। বললেন, আমার সংসারে দায়িত্বের শেষ নেই। উৎসবের দিনগুলোতে পাঁচ নাতি-নাতনি, ছেলে–ছেলের বউ, মেয়ে–জামাতা—সবার আবদার রাখা চাই। আমার সাহেবও ভিন্ন ভিন্ন পদ খেতে ভালোবাসেন। তাই দেখা যায়, এক পদ দুই পদ করতে করতে অনেকগুলো হয়ে যায়। তিনি এ–ও জানান, এবার সপরিবার কোরবানির ঈদ করবেন লন্ডনে। সেখানেই সবার সঙ্গে মিলে রান্না করবেন বেশ কয়েকটি দেশি পদ।
গল্পের এক ফাঁকে উঠে রান্নাঘরে চলে গেলেন কনকচাঁপা। রান্না শেষ। বাটিতে সাজাতে লাগলেন নানা পদ, একে একে সেগুলো চলে এল টেবিলে। মূল আয়োজন পরোটা। সঙ্গে গরু ও মুরগির ঝালের দুই পদ। আরও আছে দইবড়া। মুখমিষ্টির জন্য আছে শাহি টুকরা। গরম আর হজমের কথা মাথায় রেখে বানিয়েছেন কাঁচা আমের আম পান্না।
দইবড়া
উপকরণ: মাষকলাই ডাল ২৫০ গ্রাম, সাদা দই ৫০০ গ্রাম, তেঁতুল এক মুঠ, বিট লবণ ১ চা-চামচ, ভাঁজা মরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, চিনি ১ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, ভাজা জিরার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, পুদিনাপাতা বাটা ১ টেবিল চামচ, তেল ৩ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ বাটা অল্প পরিমাণ, পানি পরিমাণমতো।
প্রণালি: মাষকলাই ডাল ভালো করে ধুয়ে নিন। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। হাতে অত সময় না থাকলে গরম পানিতে অন্তত চার ঘণ্টা ভিজিয়ে নিন। ডাল নরম হয়ে এলে মিহি করে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর একটি পাত্রে নিয়ে হ্যান্ডবিটার দিয়ে ১০ মিনিট ফেটে নিন। খুব ঘন বা পাতলা যেন না হয়। এমন হবে যে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিলে ভেসে উঠবে। একটি পাত্রে তেঁতুল, আধা চা-চামচ বিট লবণ ও মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে তেঁতুলের পানি আগে থেকেই তৈরি রাখুন। আরেকটি পাত্রে দইয়ের সঙ্গে চিনি, লবণ, জিরার গুঁড়া, বাকি বিট লবণ, পুদিনাপাতা বাটা মিশিয়ে নিন। ডালের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গোল করে বড়া বানিয়ে নিন। ফ্রাইং প্যানে তেল দিয়ে বড়াগুলোকে ভেজে নিন। বড়াগুলো ভাজার সঙ্গে সঙ্গে তেঁতুলের পানিতে ডুবিয়ে নিন। ভিজে গেলে দইয়ের মিশ্রণে ডুবিয়ে দিন। ওপরে একটু পুদিনাপাতা ও কাঁচা মরিচবাটা দিয়ে দিন। ব্যস! হয়ে গেল দইবড়া।
শাহি টুকরা
উপকরণ: দুধ ১ লিটার, জাফরান আধা চা-চামচ, গুঁড়া দুধ আধা কাপ, ডাবল ক্রিম ২৫০ গ্রাম, চিনি স্বাদমতো, পাউরুটি ১ প্যাকেট, ঘি আধা কাপ, বাদাম ১ টেবিল চামচ, কিশমিশ এক মুঠ।
প্রণালি: ২ চা-চামচ দুধে জাফরান ভিজিয়ে রাখুন। এবার বাকি দুধ জ্বাল দিয়ে অর্ধেক করে নিন। তাতে গুঁড়া দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর এতে ডাবল ক্রিম মেশান। এবার জাফরান ভেজানো দুধটুকু দিয়ে নাড়ুন। বাদামি রং ধারণ করলে তাতে চিনি মিশিয়ে নিন। এবার পাউরুটিগুলোর চারপাশ কেটে নিন। সাদা অংশগুলো ঘিয়ে ভেজে নিন। মচমচে হয়ে এলে সেগুলো একটি পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে নিন। রুটিগুলোর মাঝখানে কিছুটা বাদাম দিন। এবার কুসুম গরম দুধের মিশ্রণ ওপরে ছড়িয়ে দিন। ওপরে বাকি বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে নিন। ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শাহি টুকরার স্বাদও বাড়তে থাকে।
মুরগির কিমা কারি
উপকরণ: ব্রয়লার মুরগি ১টা, সয়া সস ২ চা-চামচ, ডার্ক সয়া সস ২ চা-চামচ, আদা ১ টেবিল চামচ, জিরা আধা চা-চামচ, মরিচগুঁড়া আধা চা-চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচের ৩ ভাগের এক ভাগ, কাবাব মসলা ১ চা-চামচ, তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ ৩টি, রসুন ৩ কোয়া, কর্নফ্লাওয়ার আধা চা-চামচ, কাঁচা মরিচ স্বাদমতো।
প্রণালি: মুরগি হাড় ছাড়িয়ে নিন। কেটে ছোট ছোট টুকরা করে নিন। এবার এতে দুই ধরনের সয়া সস, আদা, জিরা, মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া ও কাবাব মসলা দিয়ে মাখিয়ে নিন। কড়াইয়ে তেল ঢেলে নিন। এতে কুচি করে কাঁটা পেঁয়াজ আর রসুন দিয়ে দিন। তারপর মাখানো মুরগির টুকরাগুলো ছেড়ে দিন। ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। এবার কর্নফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে নিয়ে কড়াইয়ে দিয়ে দিন। ভালোমতো নেড়ে নিন। এবার এতে কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে কিছুক্ষণ জ্বাল দিলেই হয়ে যাবে মুরগির কিমা কারি।
গরুর কষা গোশত
উপকরণ: দেড় কেজি গরুর মাংস, আদাবাটা ২ চা-চামচ, রসুনবাটা ২ চা-চামচ, জিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনিয়ার গুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদগুঁড়া সিকি চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, শর্ষের তেল সোয়া কাপ, পেঁয়াজ ৭-৮টি, তেজপাতা ৩টি, দারুচিনি ৩–৪টি, লং ৪–৫টি, এলাচি ৩–৪টি, পেঁয়াজ ২টি বেরেস্তার জন্য, আস্ত রসুন ৪টি, কাঁচা মরিচ ৭-৮টি।
প্রণালি: গরুর মাংসে আদাবাটা, রসুনবাটা, জিরার গুঁড়া, ধনিয়ার গুঁড়া, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া এবং গরমমসলার গুঁড়া দিয়ে ভালোমতো মেখে নিন। ১ ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন। এবার হাঁড়িতে তেল দিয়ে কাটা পেঁয়াজ আর গরমমসলায় মাংসের মিশ্রণ দিয়ে দিন। বেরেস্তা করার জন্য কিছুটা তেল আলাদা করে রাখুন। মাঝারি আঁচে ভালো করে নেড়ে কষান। এতে অতিরিক্ত পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মাংসের পানিতেই ধীরে ধীরে রান্না হতে থাকবে। আঁচ কমিয়ে ঢেকে দিন। আরেকটি কড়াইয়ে শর্ষের তেল ঢেলে পেঁয়াজের বেরেস্তা ভেজে নিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে এতে বেরেস্তা দিয়ে দিন। এরপর আস্ত রসুন ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ওপরের দিকটা কেটে মাংসে দিয়ে দিন। এরপর কাঁচামরিচ দিয়ে দিন। দুই ঘণ্টা হালকা আঁচে রান্না করলেই হয়ে যাবে গরুর গোশত কষা।
আম পান্না
উপকরণ: কাঁচা আম ২টি, বিট লবণ আধা চা-চামচ, চিনি ১ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতা পরিমাণমতো, ঠান্ডা পানি ২ গ্লাস, বরফ পরিমাণমতো এবং চিয়া সিড ২ চা-চামচ।
প্রণালি: কুচি করে কাটা কাঁচা আম, বিট লবণ, চিনি, গোলমরিচ, ঠান্ডা পানি ও বরফ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। গ্লাসে ঢেলে পুদিনাপাতা দিয়ে সাজিয়ে নিন।