এক কাপ নিখুঁত চা বানানোর রেসিপি দিয়ে এই মার্কিন রসায়নবিদ কেন আলোচনায়?
এক কাপ নিখুঁত চায়ের রেসিপি কী? আপনি হয়তো চট করে বলে দিতে পারবেন, কোন চা–পাতা চমৎকার ঘ্রাণ আর রং ছড়ায়, চা–পাতা ঠিক কতক্ষণ ফোটালে চায়ের লিকার হয় একদম জুতসই কিংবা আপনি বলে দিতে পারেন ঠিক কতটুকু দুধ আর চিনি মেশালে লোকের বাহবা পাওয়ার মতো চা বানানো যায়। আদতে এই চা বানানো বা রান্নাবান্না তো শিল্প। ফলে কার হাতে কীভাবে কত ভালো চা হবে, তা কেউ হলফ করে বলতে পারে না। তাই হয়তো রবি ঠাকুরের গানের কথা বদলে দিয়ে আমরা কেবল প্রশ্ন করে যাই, ‘তুমি কেমন করে চা বানাও হে গুণী...’? অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট রেসিপি অনুসরণ করলেই যে এক কাপ নিখুঁত চা বানানো যাবে, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তবে বিজ্ঞানীরা তো আর বসে থাকার মানুষ নন। তাঁদেরই একজন মার্কিন রসায়নবিদ ও ব্রিন মার কলেজের অধ্যাপক মিশেল ফ্র্যান্সেল। কী করেছেন তিনি? বৈজ্ঞানিকভাবে নিখুঁত চায়ের রেসিপি বাতলে দিয়েছেন।
এক কাপ মামুলি চায়ের পেছনে যে কত জটিল রসায়ন লুকিয়ে আছে, তা হয়তো অনেকেই ভেবে দেখি না। তবে এ বিষয়ে ভাবনার খোরাক জোগানোর মতো আস্ত একটা বই লিখে ফেলেছেন মিশেল ফ্রান্সিল। এক কাপ নিখুঁত চায়ের রহস্য নিয়ে লেখা মিশেলের বই ‘স্টিপড: দ্য কেমিস্ট্রি অব টি’ বাজারে এসেছে গত ২৪ জানুয়ারি। এর পর থেকে এই বইয়ে মিশেলের বাতলে দেওয়া চায়ের রেসিপি নিয়ে দুনিয়ার নানা প্রান্তের চা–প্রেমীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা–সমালোচনা। বিশেষ করে ব্রিটেনবাসী তো রীতিমতো উত্তেজিত!
চা–প্রেমী হিসেবে ব্রিটেনবাসীর নামডাক বিশ্বজোড়া। চা তাদের জাতীয় পানীয়। ফলে ব্রিটেনে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড়ই লেগেছে বলা চলে। কারণ, নিখুঁত চায়ের জন্য বেশ কিছু পরামর্শের সঙ্গে মিশেল চায়ের কাপে মিশিয়ে দিতে বলেছেন এক চিমটি লবণ! হ্যাঁ, লবণ। আর এতে ব্রিটিশদের প্রবল আপত্তি। টিকটকের কিছু ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন জোঁকের মুখে লবণ পড়ার মতো অবস্থা!
লবণের কথা শুনে আপনিও যদি ব্রিটিশদের মতো আগেই পিঠটান দিয়ে ভেবে নেন, এ চা আমার জন্য নয়, তবে মিশেলের চা সম্পর্কে আপনার আর না জানলেও চলবে। কিন্তু এটুকু পড়ে মনে যদি প্রশ্ন জাগে, কী সেই নিখুঁত চায়ের রেসিপি, তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক মিশেল তাঁর বইয়ে ঠিক কীভাবে এক কাপ নিখুঁত চা বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
মিশেলের মতে, চা বানানোর জন্য ছোটখাটো কাপ হলেই ভালো, যা খুব বেশি ছড়ানো হবে না। এতে চা বেশিক্ষণ গরম থাকে এবং তাপ পরিচালন সুবিধাজনক। কাপটা আগে থেকে গরম করে নেওয়া খুব জরুরি। চায়ের পানি যত গরম হবে, চা–পাতা থেকে তত ভালোভাবে ক্যাফেইন আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট পানিতে মিশে ঘ্রাণ এনে দেবে।
মিশেল মনে করেন, নিখুঁত চা বানানোর জন্য টি-ব্যাগের তুলনায় খোলা চা–পাতা বেশি কার্যকর। আর টি-ব্যাগ দিয়ে চা বানানোর সময় ব্যাগটি খুব দ্রুত ভালোভাবে চুবিয়ে নিংড়ে নিতে হবে, যাতে চায়ে তেতোভাব না চলে আসে। টি-ব্যাগ যদি আকারে বড় হয়, তাহলে ভেতরের চা–পাতা নড়াচড়া করার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায় এবং নির্যাস সহজে পানিতে মিশতে পারে।
এরপরের পরামর্শটা যদিও সবারই জানা, তবু মিশেল আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, চা–পাতা বা টি-ব্যাগ—যা–ই ব্যবহার করুন না কেন, তা একবারই ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ, চা–পাতা পুনরায় ব্যবহার করতে গেলে তাতে আর ক্যাফেইন অবশিষ্ট থাকে না। ডিক্যাফেইনেটেড চা বানাতে চাইলে অবশ্য আলাদা ব্যাপার।
চা বানানোর সময় লবণ দেওয়ার পক্ষে মিশেলের যুক্তি হচ্ছে, লবণ দিলে চায়ের স্বাভাবিক তেতো ভাবটা কমে যায়। অন্যদিকে লবণ যোগ করার মতো আরেকটা যে সমালোচিত পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, তা হচ্ছে চায়ের সঙ্গে যে দুধ মেশানো হবে, তা যেন গরম করে নেওয়া হয়। এতে দুধটা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এই দুই ধাপ নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
সবশেষে মিশেল বলেছেন, যদি নিখুঁত স্বাদের চা বানাতে চান, তাহলে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার না করাই ভালো। তো এই হলো মার্কিন রসায়নবিদ মিশেল ফ্র্যান্সেলের দেওয়া এক কাপ নিখুঁত চা বানানোর রেসিপি। চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান