অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ডাল-ভাত ছাড়া চলেই না
ফেসবুকে তাঁর পেজে ঢুঁ মারলে মনে হয়, এ বুঝি ভোজনরসিক কোনো বাঙালির প্রোফাইল! একদিন দেখি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘আজ খেলাম শাক-ডাল, মুরগির তরকারি আর ভাত।’ আরেকদিন দেখি ছবির সঙ্গে লিখেছেন, ‘মেঘলা দিনে আমের আচার বানাচ্ছি।’
স্ট্যাটাসদাতার নাম স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীরা জানেন রন্ধনপটুতার কথা। শুধু রাঁধেন এমন নয়, খাবারগুলো পরিপাটি সাজিয়ে ছবি তুলে পোস্টও করেন। যেসব খাবারের বেশির ভাগই ডাল, ভাত, ভর্তা আর মুরগির পদ।
উপমহাদেশীয় খাবারের প্রতি তাঁর ভীষণ পক্ষপাত। বিশেষ করে মুরগির পদ। গত ছয় থেকে সাত মাসে শুধু মুরগির পদই রেঁধেছেন ২৫টির মতো। বিভিন্ন সময় ফেসবুকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মুরগির পদগুলো তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রচলিত আলু আর মুরগি ভুনাও প্রায়ই রাঁধেন। তাঁর পছন্দের খাবার তালিকায় আচারি খিচুড়িও রয়েছে। ভাতের থালায় মাঝেমধ্যে দেখা যায় বেগুন আর টমেটো ভর্তাও।
স্কট মরিসন শনিবার রাতের খাবার আয়োজনের নামই দিয়েছেন ‘#কারিনাইট’। প্রায় প্রতি শনিবার বিভিন্ন মুরগির তরকারি নিজে রান্না করেন। রান্নার সময় কখনো মেয়েকে সঙ্গে নেন, কখনো একাই রাঁধেন। তারপর রেসিপি শেয়ার করেন। আর সবাইকে বলেন, নতুন নতুন মুরগির পদের রেসিপি তাঁকে জানাতে।
সাদাসিধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী
স্কট মরিসন গত দশকের দীর্ঘতম সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। দেশ-বিদেশের রাজনীতির মারপ্যাঁচ, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে চীনের সঙ্গে কামান দাগা সম্পর্ক, সাবমেরিনের চুক্তিতে ফ্রান্সের সঙ্গে চিড় ধরা বন্ধুত্ব—সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে আলোচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে কট্টর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় খবরের শিরোনামও হয়েছেন। গত বছরের শুরুতে আরেকবার শিরোনাম হলেন নির্বাচনে বিরোধী দলের কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব খুইয়ে, নিজের দলের নেতৃত্ব হারিয়ে।
তার পর থেকে তাঁর জীবনযাপন একেবারেই সাদাসিধে। চলাফেরা করেন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া। নিজেই বাজারসদাই করেন। নানা জায়গায় আড্ডা দেন। ঢুঁ মারেন তাঁর এলাকার নানা অনুষ্ঠানে। সন্তানদের বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়াটাও করেন। আর রান্না তো আছেই।
বাংলা নববর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন স্কট মরিসন। আর এখন তো ডাল, ভাত, ভর্তা, মুরগির পদ রেঁধে আরও আপন হয়ে গেছেন। তাঁরও ধারণা, রাজনীতির জন্য নয়, রান্নাবান্নার কারণেই নাকি তাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ অনুসরণ করেন।