বোরহানি, পানমসলা কিংবা হজমি কি হজমে সাহায্য করে?
ঈদে না চাইলেও অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায়। খাওয়াদাওয়ার পর একটু হাঁসফাঁস লাগলে, স্বাদে ভিন্নতা আনতে বা হজমসহায়ক হিসেবেও অনেকে ধরনের পানীয় গ্রহণ করেন। কেউ আবার হজমসহায়ক গুঁড়ার স্যাশে খুলে পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নেন। হজমসহায়ক বিবেচনা করে বোরহানি, পানমসলা, হজমি লজেন্সও খাওয়া হয়। আদতেই কি এসবের কোনো উপকারিতা আছে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এই লেখা।
হজমি গুলি, চমনবাহার, জর্দা, পানমসলা বা মিষ্টি পানের মতো নানান উপকরণ হজমসহায়ক বলেও অনেকের ধারণা আছে। প্রচলিত এসব ধারণার আসলে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হজমসহায়ক স্যাশেও অপ্রয়োজনীয়। মূলত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের সময় কিছু ভুল করার ফলেই হজমে গন্ডগোল দেখা দেয়। ঈদে সুস্থ থাকতে তাই এসব বিষয়ে সচেতনতা আবশ্যক, এমনটাই বলছিলেন ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
পানি কিংবা বোরহানি
খাওয়ার মধ্যে পানি খাবেন না, বোরহানিও নয়। খুব প্রয়োজন হলে সামান্য পানি খেতে পারেন। খেতে গিয়ে ঝাল লেগেছে? ঢকঢক করে পানি না খেয়ে একটু শুকনা ভাত বা পোলাও খেয়ে নিতে পারেন কিংবা জিহ্বায় সামান্য লবণ নিয়ে একটু অপেক্ষা করতে পারেন।
খাওয়ার অন্তত ১০ মিনিট আগে পানি খেতে পারেন। খেতে পারেন রসাল ফল কিংবা ফলের রসও। তবে একেবারে খালি পেটে বোরহানি খাবেন না। আর খাওয়ার পর অন্তত ১৫-২০ মিনিট পর পানি বা পানীয় খাবেন।
খাওয়ার পর বোরহানির টক দই হজমে সামান্য সহযোগিতা করবে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণ বোরহানি খাওয়া উচিত নয়। জিরা ভেজানো পানিও পেটের জন্য আরামদায়ক। আদা লেবুর পানিও খেতে পারেন।
খাবারের ধরন
পবিত্র রমজান মাসজুড়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলার পর ঈদের দিন থেকে হুট করে নানান ধরনের খাবার গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলীর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। তাই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
অতিরিক্ত মসলা দেওয়া খাবার খাবেন না। বাটা মসলায় রান্না করা উচিত। ধনে কম দেওয়াই ভালো। পরিবেশন পাত্রে খাবার তোলার সময় মসলা কম তোলার চেষ্টা করুন।
কম তেলে রান্না করা খাবার খান। ডুবোতেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। নিতান্তই খেতে হলে বাড়তি তেল ঝরিয়ে ফেলুন বা টিস্যুতে মুছে নিন। ননস্টিক পাত্রে খাবার রান্না করা ভালো। ঘিয়ের পরিমাণও কম রাখা উচিত।
একবার ব্যবহৃত তেল পুনরায় ব্যবহার না করা ভালো। রান্নার তেল যদি রয়েই যায়, তাহলে সেটা ঘণ্টা দশেকের মধ্যেই কাজে লাগিয়ে ফেলতে হবে। দোকানের অনেক খাবার চক্রাকারে পুনর্ব্যবহৃত তেল দিয়ে রান্না হতে থাকে। এতে প্রথম দিনের তেলের কিছু অংশ রয়ে যায় দীর্ঘদিন। তাই দোকানের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
টক দইয়ের ড্রেসিং দেওয়া সালাদ খেতে পারেন। তবে কাঁচা বাঁধাকপি আর মুলা অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
দু–একবার খাওয়ার পর খানিকটা বিশুদ্ধ মৌরি কিংবা জইন খেতে পারেন।
বাসি খাবার খাবেন না। খাবারের স্বাদ, বর্ণ বা গন্ধে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করলে খাওয়া যাবে না। রান্নার দেড়-দুই ঘণ্টার ভেতরে খাওয়া না হলে খাবারটা ফ্রিজে তুলে রাখতে হবে।
রোজ বদহজম?
খাওয়ার পর অন্তত এক ঘণ্টার মধ্যে শোবেন না।
একেবারে ভরপেট খাবেন না।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে নিরাময়ের জন্য রোজ পর্যাপ্ত পানি খান, প্রচুর শাকসবজি খান।
কাঁচা পেঁপে ভাপিয়ে নিয়ে কুচি করে সালাদ হিসেবে খান কিংবা ভর্তা বানিয়ে খেতে পারেন। ভালো হজম হবে।