সাফল্য
ব্যাংকার থেকে ফুড ফটোগ্রাফার
নিঃসন্দেহে ভালো রাঁধেন আতিয়া আমজাদ। তবে শুধু রান্নাতেই সীমাবদ্ধ নয় তাঁর গুণপনা। তাঁর তোলা ছবি ও রান্নাবিষয়ক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়। আতিয়ার গল্প শুনেছেন রয়া মুনতাসীর
২০১৩ সাল। আতিয়া আমজাদ তখন ব্যাংকার। সন্তানের আগমনী টের পেয়ে কর্মজীবন থেকে বিরতি নিলেন। বাসায় থাকার দিনগুলোতে রসুইঘরের সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর সখ্য। তবে তখন পর্যন্ত রান্নাতেই ছিল তাঁর মনোযোগ, ‘দায়সারাভাবে পরিবেশন করতাম। এক নকশার কাপে চা ঢালতাম, আরেক নকশার পিরিচের ওপর সেটা বসিয়ে দিতাম। আমার স্বামী (কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন) সব সময় সুন্দর করে খাবার পরিবেশন ভালোবাসেন। ধীরে ধীরে আমারও আগ্রহ তৈরি হলো।’
সুন্দর করে সাজিয়ে খেলেই শুধু হবে, ছবি তুলতে হবে না! ব্যাকরণ না জেনেই ছবি তোলা শুরু করেন আতিয়া। যেমনটা চাইতেন, সে রকম হতো না। কেন হচ্ছে না, পড়াশোনা করে বুঝতে পারেন আতিয়া, ‘মোবাইলে আর যা–ই হোক, ডিএসএলআরের মতো ছবি হয় না। এরপর ক্যাননের ৬০০ডি ক্যামেরা কিনে ছবি তোলা শুরু করলাম।’ এবার ছবি হলো মনমাফিক। ছবিগুলো পোস্ট করে প্রশংসাও পেলেন।
চার বছরের বিরতি শেষে আবারও কর্মজীবনে ফিরেছেন আতিয়া আমজাদ। বর্তমানে তিনি অ্যারিসটো সার্ভিসেস লিমিটেডের চিফ অব অপারেশন। তবে রান্না আর ছবি তোলাতেই বেশি ঝোঁক। এখন তিনি সফল এক পেশাদার ফুড ফটোগ্রাফার।
খাবার ছবিতে গল্প বলেন আতিয়া
নিজের কাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে দরকার ভিন্নতা। আতিয়া সেটা আয়ত্ত করতে পেরেছেন। তিনি মনে করেন, নান্দনিক বা শৈল্পিকবোধ না থাকলে এ পেশায় সফল হওয়া, নিজের পরিচয় তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। সেই সঙ্গে প্রয়োজন চর্চা, একাগ্রতা আর ধৈর্য। নিজের চিন্তাকে যেন নিখুঁতভাবে ছবির মধ্যে ফুটিয়ে তোলা যায়, এ জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন ধীরে ধীরে। পড়াশোনা করেছেন, বিদেশি প্রশিক্ষকদের কাছে কোর্স করেছেন। বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের ওয়েবসাইট ঘেঁটেছেন। এভাবে নিজের জানাশোনার দিগন্ত বাড়িয়েছেন।
প্রতিটি ছবির মধ্যে একটি গল্প তুলে ধরেন আতিয়া। ছবি তোলার সময় খাবারের টেকশ্চার বা বুনটের ওপর গুরুত্ব দেন বেশি। প্রতিটি খাবারই যেন তাজা থাকে। আপেলের চামড়া কুঁচকানো হলে চলবে না, চা ঢালার সময় ধোঁয়া উঠতে হবে, কেক পরিবেশনের সময় ওপর থেকে কিছু পরতে পারে বা একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে বদল হতে পারে কেকের প্লেট।
পেশা হিসেবে ফুড ফটোগ্রাফি
পেশা হিসেবে ফুড ফটোগ্রাফি এখন বেশ সমাদৃত। তবে এই পেশায় আসার সঙ্গে সঙ্গে উপার্জন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন আতিয়া আমজাদ। তাঁর পরামর্শ, যাঁরা এই পেশায় আসতে চান, তাঁদের শতভাগ ভালোবাসা দিতে হবে। ক্যামেরা তাক করে ক্লিক করার আগে খাবার টেবিলের প্রতিটি উপকরণ আদ্যোপান্ত বুঝে নিতে হবে। ছোট থেকে বড় প্রতিটি বিষয় জানার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আতিয়া বলেন, ‘পাঁচ বছর ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আমার যে অগ্রগতি হয়েছিল, ছয় মাসের সঠিক একটি কোর্সে তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি শিখেছি।’
খাবারের ছবি ভালোভাবে তুলতে চাইলে ভালো রান্না জানাটাও নাকি জরুরি। স্বাদ ভালো হলে আতিয়ার তোলা ছবিতেও সেটার ‘ঘ্রাণ’ লেগে থাকে। কারণটা আতিয়ার মুখেই শুনি, ‘মুরগি বারবিকিউ করার ছবি তোলার সময় কতটুকু পোড়ানো হবে, সেটা না জানলে হিতে বিপরীত হবে। রান্নার কোন ধাপে ছবি তোলা হবে, সেই বোধ থাকতে হবে। খাবার আর প্লেটের রঙে থাকতে হবে বৈপরীত্য। প্রতিটি ছবির ভেতরেই যেন ভিন্নতা আসে। এক চা ঢালার ছবিও তোলা যায় নানাভাবে।’
মা, বোন এবং স্বামী—সবাই আতিয়ার অর্জনে খুশি। পরিবারের খুদে দুই সদস্য গুনগুন আর তিয়ান ছবি তোলার সময় বিভিন্ন কাজে আতিয়াকে সহায়তা করে। আতিয়ার তোলা ছবিগুলোতে যে হাত দেখা যায়, সেটাও ওদেরই।
করোনার গৃহবন্দী সময়ে বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করেছেন আতিয়া। ফুডেলিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফুড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় মাসের সেরা ছবি হিসেবে টানা দুই মাস তাঁর ছবি নির্বাচিত হয়েছে। অন্যদের এখন ফুড ফটোগ্রাফির প্রশিক্ষণ দেন আতিয়া। পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল বা রেস্তোরাঁর জন্য খাবারের ছবি তোলেন। এ প্রসঙ্গে একটা মজার কথাও শোনালেন আতিয়া, ‘নানা সময় বিভিন্ন ক্লায়েন্ট আমার তোলা ছবিই পাঠিয়ে অনুরোধ করে, এমনভাবে তুলে দিতে হবে!’ তাতেই পরিশ্রমের সার্থকতা খুঁজে পান আতিয়া।
আতিয়া আমজাদের তোলা ছবিগুলো ফেসবুকের আমজিস কুকবুক পেজ আর
www.amzeescookbook.com ওয়েবসাইটে দেখা যাবে।