'এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না।’
মহাদেব সাহার এ কবিতা লাইনের মতো কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছে এক কোটি বছর ধরে সিদল (ছোট মাছের শুঁটকিবিশেষ) খাই না। যদিও মাস দুয়েক আগে নিজেই সবজি দিয়ে শুঁটকি রান্না করে খেয়েছি। শুঁটকি খেয়ে আসলে সিদলের স্বাদ পাওয়া যায় না। আমার বড় আপা ফাতেমা খাতুনের বাড়িতে মাঝেমধ্যেই সিদল রান্না হয়। রান্না মূলত পরিচর্যার একটি বিষয়। তাই যে যত বেশি রান্না করে, তাঁর রেসিপি তত মজার হয়। কল ধরেই আপা বলে, ‘চিকিৎসা করতে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছি।’
বললাম, ‘তোর বেশি সময় নেব না। আমি রান্না করব বলে ফ্রি হয়ে বসে আছি, একটা রেসিপি বলতে পারবি এখন?’
আমার এ প্রশ্নে আপা বলে, ‘দুই মিনিটে একটা রেসিপি বলব, তেমন কোনো মসলাও নেই, তেলও ব্যবহার করতে হয় না। রান্নাও করতে পারবি দ্রুত। আমার ডাক্তার দেখানোর ঝামেলা শেষ হইলে বড় রেসিপি দেব।’
আমি নাক কুচকে বললাম, ‘এখন এত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চাচ্ছিলাম না। মজার একটা খাবার খেতে চাই। তাও বল, তেল মসলা ছাড়া এত স্বাস্থ্যকর রেসিপি কী?’
‘হিদলের তরকারি,’ আপা বলে।
অনেক অনেক দিন পর হবিগঞ্জের আঞ্চলিক শব্দ হিদল কথাটা শুনলাম। ‘বলিস কী? আমি তো তোরে ফোন দিছি সিদলের তরকারির রেসিপির জন্যই।’
‘আজাইরা পাম দিস না! সময় নাই। আমার কল চলে আসবে। ডাক্তারের রুমে ঢোকার আগে দ্রুত লিখে ফেল রেসিপিটা। উপকরণগুলো দেখ আছে কি না। সিদল ৩০ গ্রাম, কাঁকরোল ৫টি, কাঁঠালের বিচি ৫০ গ্রাম, ছোট্ট লাল আলু ৫০ গ্রাম, কাঁচা মরিচ ৭টি, ১ চামচ করে রসুনবাটা ও মরিচের গুঁড়া। মাঝারি আকারের টাকি মাছ ৪-৫টি।’
‘সিদলের সঙ্গে কি কাঁকরোল মানায়?’
এই কথায় রেগে গেল আপা, ‘নিজেই এত পণ্ডিত হলে আমার কাছে রেসিপি চাচ্ছিস কেন আবার?’
ঝাড়ি খেয়ে ঠিক হয়ে বললাম, ‘আচ্ছা বলো, কীভাবে শুরু করব?’
‘প্রথমে সবজিগুলো ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে। একটি কড়াইয়ে দুই গ্লাস পানি ফুটিয়ে তাতে সিদল, গুঁড়া মরিচ আর লবণ দিয়ে মাঝারি আঁচে সেদ্ধ কর। কিছু সময় সেদ্ধ হওয়ার পর দেখবি কাঁটাগুলো আলাদা হয়ে গেছে। তখন কাঁটা ফেলে দিবি। সিদলের মাথাও নেওয়ার দরকার নেই। কাটা ফেলে দেওয়ার পর কেটে, ধুয়ে রাখা কাঁকরোল, কাঁঠালের বিচি আর আলু দিয়ে ৭-৮ মিনিট একটু ঢেকে রাখ। তারপর সবজির চেয়ে একটু বড় মাপের টুকরা করা টাকি মাছ, রসুনবাটা, কাঁচা মরিচ দিয়ে ৩ মিনিট ঢেকে রান্না করবি। এবার ২ গ্লাস পানি দিয়ে ৫ থেকে ৭ মিনিট ঢাকনা ছাড়া জ্বাল দিবি।’
‘তারপর?’
‘রান্না শেষ। আগুন বন্ধ করে ধনেপাতা দিয়ে ঢেকে রাখবি ঠান্ডা হওয়ার আগপর্যন্ত।’
‘তেল-হলুদ কিছু নাই, মজা হবে তো?’
‘সিদলের তরকারিতে যত কম মসলা দেওয়া যায়, তত স্বাদ। তেল দিলে সিদলের আসল মজা পাওয়া যায় না। কাঁকরোল দিয়ে রান্না করে খেয়ে ভালো লেগেছে বলেই তোকে বলেছি। রান্না করে জানাস কেমন হলো। গরম ভাতের সঙ্গে খাবি।’
‘সিদলের মতো জটিল একটা বিষয়’ এত দ্রুত রান্না করে ফেলতে পারব চিন্তাও করিনি। অসাধারণ হয়েছে। আপনিও ট্রাই করুন।