পথ্য থেকে স্যুপ যেভাবে বাংলার রসনা সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিল
সারা বছর রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া হলেও শীতে মন চায় বাড়িতেও হোক স্যুপ। ঘরোয়া পদ্ধতিতে বরবটি, ফুলকপি, গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি দিয়ে গরম–গরম স্যুপ খাওয়ার যে সাধ, তাকেই বুঝি বলে ‘উইন্টার ক্রেভিংস’।
এই স্যুপ খাওয়ার মধ্যেও আবার আয়োজন আছে। শীতের কুয়াশাসন্ধ্যায় অথবা অলস ছুটির বিকেলে আরাম করে এক বাটি স্যুপ খাওয়ার আনন্দই আলাদা। ধোঁয়া ওঠা স্যুপের ঘ্রাণ আর স্বাদের উষ্ণতায় নিমেষেই চনমনে হয়ে ওঠে শরীর-মন।
স্যুপ কিন্তু আমাদের খাবার ছিল না। পশ্চিমা এই খাবার ব্রিটিশ শাসনামলে উপমহাদেশে আসে। প্রথম দিকে এটা ছিল রোগীর পথ্য। পরিবারের কেউ ঠান্ডা বা ফ্লুতে আক্রান্ত হলে পথ্য ছিল মুরগির স্যুপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিকেন ব্রথ, ক্রিমি ভেজিটেবল স্যুপ আমাদের স্থানীয় সবজি, মসলা ও অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে মিলে তৈরি করে এক ফিউশন স্বাদ। বাংলার রসনা সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়ে হয়ে উঠেছে আমাদের খাবার।
আপনি রান্নায় পটু হয়ে থাকুন বা অপটু, স্যুপ রান্নায় নির্দ্বিধায় আপনি নিজের সৃজনশীলতা প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। যে যে সবজি আপনার পছন্দ, যেসব রঙের সবজি দিলে দেখতে সুন্দর হবে, সেগুলো দিয়ে অনায়াসে বানাতে পারেন স্যুপ।
এই পদ তৈরির কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। এতে তিনটি উপকার হচ্ছে ১. একসঙ্গে অনেক স্যুপ বানিয়ে ফ্রিজে রেখে বেশ কিছুদিন খেতে পারবেন। ২. নিজের ইচ্ছেমতো সবজি দিয়ে স্যুপ বানানোর প্রক্রিয়াটি আপনার জন্য হতে পারে ‘থেরাপিউটিক’। ৩. পরিবারের শিশু সদস্যটি যদি সবজি খেতে না চায়, তাহলে স্যুপের সঙ্গে মিলিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। চাইলে মাছ বা মুরগিও যোগ করতে পারবেন। এতে একই সঙ্গে আমিষ, ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণ হবে।
বিভিন্ন দেশ ঘোরার সময় দেখেছি, খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য সংস্কৃতিতে স্যুপের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। যেমন, চীনে হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ খাওয়া হয় এর ঔষধি গুণাগুণের জন্য। ফ্রান্সের নিজস্ব স্যুপ ফিশ বুইয়াবেস ও অনিয়ন স্যুপের স্বাদ ও রন্ধনশৈলী উভয় দিক থেকে স্বতন্ত্র। অন্যদিকে জাপানের মিসো স্যুপ মুখরোচক স্বাদ ও অন্যান্য শারীরিক উপকারিতার জন্য জনপ্রিয়। আবার রাশিয়ান স্যুপের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দেশটির স্থানীয় সবজি ও ঐতিহ্যের মিশেল।
লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আর্টিয়াস লিমিটেড