কফি খাওয়ার সেরা সময় কখন

অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই কফি খেয়ে দিনের শুরু করেন। আবার কেউ কেউ দিনের মাঝে, শেষে কফির কাপে চুমুক দিয়ে নিজেকে ‘রি–স্টার্ট’ করতে অভ্যস্ত। কিন্তু আদৌ কি যখন-তখন কফি খাওয়া ভালো? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, না। তাহলে প্রশ্ন আসে, কফি খাওয়ার সঠিক সময়টি কখন? চলুন জেনে নিই। তার আগে জেনে নিই, কখন কখন কফি খাবেন না।

দিনের আলো ফুরোলে, কফির কাপে চুমুক নয়
ছবি: পেক্সেলস

দিনের আলো ফুরোলে, কফির কাপে চুমুক নয়

আমাদের দেহঘড়িকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সারকাডিয়ান রিদম’ বলা হয়। এই সারকাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ছন্দ দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই চলমান। যেমন ধরুন, কয়েক দিন নিয়ম করে রাত ১১টায় ঘুমানোর চেষ্টা করলে আপনার সারকাডিয়ান রিদম সেটিকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলবে। সাতসকালে ঘুম থেকে ওঠা, রাতে ঘুমিয়ে পড়া—সবই সারকাডিয়ান রিদমের খেলা। সন্ধ্যায় বা সন্ধ্যার পর কফি খেলে স্বাভাবিক এই ‘রিদম’ বা ছন্দের পতন হয়।

কফি আমাদের শরীরে শক্তি জোগায়। সন্ধ্যার পর আমরা সাধারণত তেমন কোনো কায়িক শ্রম বা ভারী কাজ করি না। তাই কফি খাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া বাড়তি শক্তি ব্যয় হয় না। আর বাড়তি এই শক্তি যদি কোনো কাজে ব্যয় না করা হয়, তবে শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা। রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই সূর্য ডোবার পর কফির কাপে চুমুক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ঘুম থেকে উঠেও বন্ধ থাক কফিতে চুমুক

আমাদের দেহের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিসল নামের এক হরমোন নিঃসরণ হয়। কর্টিসল কিছু শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন বিপাক, রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা, মানসিক চাপ ইত্যাদি। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে বলে এই হরমোনকে ‘স্ট্রেস হরমোন’ও বলে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কর্টিসল প্রাকৃতিকভাবে আপনাকে চাঙা রাখে। তাই সকাল সকাল কফির কাপে চুমুক দিলে তেমন কোনো উপকার পাওয়া যায় না।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা কফি ব্রেক নিতেই পারেন
ছবি: পেক্সেলস

দুপুরে একটু-আধটু কফিতে দোষ নেই

দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর শরীরে অলসতা বাসা বাঁধে। এ সময় একটু কোল্ড কফি খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। তবে ক্লান্তি এলেই দূর হবে কি হবে না, তা ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। দুপুরের পর আধা কাপ কফি খেলে বাড়তি শক্তি পাবেন। তবে যদি পূর্ণ এক কাপ বা তারও বেশি কফি খান এ সময়, তাহলে আবার রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই দুপুরের পর ঠিক কোন সময় কী পরিমাণ কফি খেলে আপনার ঘুম ঘুম ভাবটা চলে গিয়ে চাঙা অনুভূতি দেবে, আবার রাতের ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটাবে না, তা আপনাকেই বুঝে নিতে হবে।

বিকেলেও ‘না’ বলুন কফিকে

অফিস শেষ। আপনার দেহ-মনে রাজ্যের ক্লান্তি। অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরার আগে হাতের কাছে কোনো কফি শপ থেকে নিয়ে নিলেন এক কাপ কফি। না, এটা করবেন না। বিকেলে বা বিকেলের পর কফি খেলে রাতে সহজে ঘুম আসবে না। তৈরি হবে অস্থিরতা। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরদিন, কর্মক্ষেত্রে আপনার কাজে। তাই বিকেলে কফি শপ আপনাকে নীরবে ডাকলেও সাড়া দেবেন না।

শরীরচর্চার আগে হোক এক কাপ কফি

বিকেল বা দিন শেষে অফিস ছুটির পর বাড়িতে গিয়ে অনেকেই শরীরচর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শেষ বিকেলে শরীরচর্চায় যাওয়ার আগে এক্সপ্রেসোর (দুধবিহীন টাটকা কফি) একটি শট পান করতে পারেন। এতে শরীরে বাড়তি শক্তি চলে আসবে। পরে শরীরচর্চায় তা ব্যয়ও হয়ে যাবে। এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন, সন্ধ্যার দিকে কফি খেলে যদি রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে? শরীরচর্চায় নামার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে কফি খেতে হবে। এতে তৈরি হওয়া বাড়তি শক্তি ভালোভাবেই শরীরচর্চায় ব্যয় হয়ে যাবে। ফলে রাতের ঘুমে তা নেতিবাচক প্রভাব রাখবে না।

শেষ কথা

• আপনি যদি রাতজাগা পাখি হয়ে থাকেন অর্থাৎ রাতের শিফটে কাজ করতে হলে রাত ৯টার পর কফি খেতে পারেন। অনেকে রাতের শিফটে কাজ করেন বা ভিন্ন দেশের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে অনলাইনভিত্তিক কাজ করেন। ফলে রাত জেগে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি সন্ধ্যায় বা রাতে কাজে বসার আগে এক কাপ কফি খেতেই পারেন। এতে আপনি সারা রাত জেগে থাকার ‘এনার্জি’ পাবেন।

• সন্ধ্যায় শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে অন্তত এক ঘণ্টা আগে এক্সপ্রেসোর একটা শট নিয়ে নিতে পারেন।

• আর যদি স্বাভাবিক ঘুম শেষে সকাল সকাল অফিস যাওয়ার তাড়া থাকে, তাহলে একটু বুঝেশুনে কফি খাবেন। সন্ধ্যার পর কফি একেবারেই নয়। দিনের শুরুতেও দরকার নেই। এর মাঝে যেকোনো সময় আপনার সুবিধা অনুযায়ী কফি খেতে পারেন। যাঁরা ভোরে ৬টা বা ৭টায় ঘুম থেকে ওঠেন, তাঁরা ৯টা থেকে ১১টার ভেতর কফি খেতে পারেন। যাঁরা ঘড়ির কাঁটা ১০টা না ছুঁয়ে ফেলা পর্যন্ত চোখ খোলেন না, তাঁরা দুপুরে খাওয়ার পর একটা কফি ব্রেক নিতেই পারেন।


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথলাইন ও ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক