বর্তমান সময়ে মানুষের যাপিত জীবনে নানা ধরনের কাজ এবং পারিপার্শ্বিকতার কারণে মানসিক চাপ বেড়েই চলছে। এই চাপ বা স্ট্রেস থেকে একটু স্বস্তি পেতে মানুষ খুঁজে ফেরে বিভিন্ন অনুষঙ্গ। কারণ, এটাই তাকে অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রশান্তি দেয়। এমনকি অনেকেই স্বস্তি খোঁজেন খাবারে; যা মনকে শান্ত করে, ভালো লাগা অনুভব করায়। এ ধরনের খাবারকেই পশ্চিমা বিশ্বে কমফোর্ট ফুড বা স্বস্তিদায়ক খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
১৯৬৬ সালে দ্য পাম বিচ পোস্ট পত্রিকায় অবেসিটিবিষয়ক একটি আর্টিকেলে কমফোর্ট ফুডের ধারণাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়, কেউ যখন প্রচণ্ড মানসিক স্ট্রেস বা যন্ত্রণায় ভোগে, তখন কমফোর্ট ফুডে স্বস্তি পায়। ধারণা করা হয়, এ জন্যই দুঃখ ভারাক্রান্ত মানুষগুলোর মোটা হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।
প্রবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের খাবারের খাদ্য উপযোগিতা অনেক কম এবং এ ধরনের খাবার সাধারণত অস্বাস্থ্যকর। বছরের পর বছর ধরে কমফোর্ট ফুড নিয়ে চলছে নানা তর্ক–বিতর্ক এবং গবেষণা।
কমফোর্ট ফুডের প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে এগুলো হাই কার্বোহাইড্রেট, হাই ফ্যাট, হাই ক্যালরিসমৃদ্ধ এবং অস্বাস্থ্যকর। অন্য একটি গবেষণায় একে একটু ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী এবং আত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত খাবারই কমফোর্ট ফুড। অর্থাৎ যে খাবার খেলে মানুষ সহজেই নস্টালজিক হয়ে পড়ে। আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় কমফোর্ট ফুড হচ্ছে আইসক্রিম।
এরপরই আসে চকলেট, চকলেট কেক, ব্রাউনি, ম্যাক এন চিজ, ম্যাশড পটেটো, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার—এসবের নাম। এমনকি সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিটি দেশেরই রয়েছে কমফোর্ট ফুড। যেমন আমাদের দেশের কথাই যদি ধরি, তাহলে নিঃসন্দেহে সবার প্রথমে আসবে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, চানাচুর, আচার ইত্যাদি খাবারের নাম।
আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, লিঙ্গ ও বয়সভেদে কমফোর্ট ফুড একেকজনের কাছে একেক রকম। যেমন পুরুষেরা গরম, ভারী খাবার যেমন স্টেক, চিকেন স্যুপ, বিভিন্ন রকমের ডাল, মাংস দিয়ে তৈরি খাবার কমফোর্ট ফুড হিসেবে গ্রহণ করে। নারীদের ক্ষেত্রে তা বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস আইটেম যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, ব্রাউনি, চকলেট কেক ইত্যাদি। কম বয়সীদের কাছে আইসক্রিম, বার্গার, পিজা এবং বৃদ্ধ মানুষদের কাছে ভারী গরম খাবারই প্রিয় কমফোর্ট ফুড। আবার কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, কমফোর্ট ফুড আদৌ মনে বিশেষ কোনো স্বস্তি আনে না।
এটি কেবল ব্যবসা বাড়ানোর একটি উপায়। একে প্রপাগান্ডাও বলেছে অনেকে। অনেকে আবার রসিকতা করে বলেছে, অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বা বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে অনুতপ্ত না হওয়ার বাহানামাত্র। এ বিষয়ে সবচেয়ে আলোচিত গবেষণাটি হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার মনোবিজ্ঞান বিভাগে। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু কমফোর্ট ফুড নয়, সব ধরনের খাবারই মানুষের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। এমনকি কিছু না খেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক বা দীর্ঘ সময়ের খারাপ লাগা অনুভূতিটা কেটে যায়। এ গবেষণার পর থেকে কমফোর্ট ফুড নিয়ে বেশ বিতর্ক দেখা দিয়েছে।