সমাজবদলের চেষ্টায় কাজ করছে নর্থ সাউথের এই ক্লাব
সকাল ১০টায় গাজীপুরের হোতাপাড়ার একটি বৃদ্ধাশ্রমের সামনে এসে থামে একটা বাস। গেট দিয়ে ঢুকেই ইট বিছানো পথ। পথ ধরে এগিয়ে যান একদল তরুণ। সারা দিন বৃদ্ধাশ্রমে থাকবেন, প্রবীণদের সঙ্গে সময় কাটাবেন, ভাগাভাগি করে নেবেন কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত—এই তাঁদের পরিকল্পনা। এবারই প্রথম না, প্রতিবছরই এই আয়োজন করেন তাঁরা। এঁরা সব নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সোশ্যাল সার্ভিসেস ক্লাবের (এনএসইউএসএসসি) সদস্য।
সমাজের অবহেলিত বৃদ্ধদের পাশে দাঁড়ানো, সুবিধাবঞ্চিতদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ, বিপদে রক্ত জোগাড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা দেওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করে এনএসইউএসএসসি। যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালানো এই ক্লাবের মূল লক্ষ্য—সমাজে বিদ্যমান সমস্যা দূর করার পাশাপাশি চারপাশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও ভাগ্যহীনদের সহায়তা করা। সমাজসংস্কারের কাজে উদ্যমী একদল তরুণ নিয়ে গঠিত হয়েছে এই ক্লাব। বর্তমানে ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ২৫০ জনের বেশি।
ক্লাবের শিক্ষক উপদেষ্টা মেজবাহ উল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শুধু সমাজের সমস্যা মোকাবিলাই নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক বোধ ছড়িয়ে দিতেও ভূমিকা রাখে এই ক্লাব। বছরজুড়ে ক্লাবের সদস্যদের সহায়তায় বিভিন্ন আয়োজন হয়। যেমন রক্তদান কার্যক্রম, শীতবস্ত্র বিতরণ, আমার পাঠশালা, জয় ফর ঈদ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট হলো সোশিও ক্যাম্প। সমাজের নানা রকম সমস্যার সমাধান খোঁজা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে এই আয়োজন। মাসব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।’
ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মৌরিন ইসলাম বলেন, ‘বছরজুড়ে প্রতিটি আয়োজন পরিকল্পনামাফিক বাস্তবে রূপ দিতে ক্লাবের বিভিন্ন বিভাগ কাজ করে। সবার দায়িত্ব ভাগ করা থাকে। যেকোনো আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমতি আনা থেকে শুরু করে ঠিকঠাক ইভেন্ট নামানো পর্যন্ত ক্লাবের সদস্যদের নিরলস পরিশ্রম করতে হয়। কেবল সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করাই নয় বরং তরুণ প্রজন্মের ভেতরে সামাজিক সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে এই ক্লাব।’
মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ সাফিন আল ওয়ালিদ বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সক্রিয় ক্লাবগুলোর মধ্যে আমাদেরটা অন্যতম। ক্লাবের সদস্যরা পরে চাকরিজীবনে প্রবেশ করেও যেন তাঁদের মেধা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটাতে পারেন, সে জন্য বিভিন্ন গুণাবলি গঠনেও এই ক্লাব অবদান রাখে। নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও ক্লাবের বিশেষ ভূমিকা আছে।’
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও ক্লাব সদস্যদের সরব উপস্থিতি আছে। পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলা, বিভিন্ন উৎসব-পার্বণেও সক্রিয় থাকেন তারা। হোপ ও মোমেন্টাম নামে ক্লাবের ২টি বাৎসরিক প্রকাশনা আছে, যাতে তাঁদের কার্যক্রমগুলো উঠে আসে।