আমরা কেউ খালি হাতে ফিরিনি
আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াডে রৌপ্য জিতেছেন সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরেফিন আনোয়ার। পড়ুন তার লেখা।
আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াড এমন এক অলিম্পিয়াড, যেখানে প্রোগ্রামিং ও গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) পরিচালক ও অধ্যাপক বি এম মঈনুল হোসেন স্যারের নেতৃত্বে অংশ নিয়েছিলাম আমরা চারজন। সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আমি, ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে মিসবাহ উদ্দিন ও আবরার শহিদ এবং অ্যাকাডেমিয়া স্কুলের রাফিদ আহমেদ। প্রথমবারেই আমরা জিতেছি চারটি পদক। আমি ও মিসবাহ পেয়েছি রৌপ্য, আবরার ও রাফিদ ব্রোঞ্জ।
৮-১২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার মূল আসরে অংশ নেয় ২৫টি দেশের ১০০ শিক্ষার্থী। মূল পর্বের দুটি অংশ—বৈজ্ঞানিক ও ব্যবহারিক। বৈজ্ঞানিক পর্বে আমাদের মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম, গাণিতিক তত্ত্ব ও তাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর ৪২ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আর ব্যবহারিক অংশে সমাধান করতে হয়েছে মেশিন লার্নিং–সংক্রান্ত একটি সমস্যা। ‘ডিপ ফিচার লার্নিং’ ব্যবহার করে আফ্রিকা মহাদেশের পরবর্তী দাবানল (বনফায়ার) অনুমান করাই ছিল এই পরীক্ষার মূল বিষয়। আয়োজনটা এবার এতটাই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছিল যে ১০০ জন প্রতিযোগীর নম্বরের পার্থক্য ছিল মাত্র ০.০০১।
প্রথম আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াডে রৌপ্যজয় আমাদের জন্য নিশ্চয়ই গর্বের। তবে গর্ব করার আরও একটি জায়গা আছে—আমরা কেউ খালি হাতে ফিরিনি। সবাই কোনো না কোনো পদক পেয়েছি। পুরো প্রতিযোগিতায় এ রকম মাত্র তিনটি দলই ছিল, যাদের সবাই পদক জিতেছে। পুরস্কারের মঞ্চে বাংলাদেশের নাম আলাদা আলাদাভাবে চারবার উচ্চারিত হলো, এটাও তো কম নয়!
মেশিন লার্নিংয়ে আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল। বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জানতাম। যেমন আমি সপ্তম শ্রেণি থেকে কোডিং ও রোবট নিয়ে কাজ করি। আমার সঙ্গে যারা পদক পেয়েছে, তাদেরও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। ফলে আমরা ভালো নম্বর পেয়েছি। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগ ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সহায়তাও ছিল। বিশেষ করে, দলনেতা বি এম মঈনুল হোসেন স্যার সব সময় পাশে ছিলেন। ঢাকাসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রবাসী একাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের চর্চা করিয়েছেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো ফল করা সম্ভব হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান কম-বেশি সব সময়ই বেশ উল্লেখযোগ্য। আমরা সেই ধারা বজায় রাখতে পেরেছি। এই আসরে একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতাও হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও সুইডেন দল আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, শুধু এই কারণেই আমাদের ব্যাপারে তারা আগ্রহী হয়েছিল।
আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপ লার্নিং নিয়ে আরও গবেষণা। যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারি। দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসারের জন্য আমরা ‘ইনসিগনিয়া স্কুল’ নামে একটি সংগঠন খুলেছি। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হবে।