সংসার না করলে স্ত্রী আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেবে বলেছে
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয়। বউকে এখনো তুলে আনা হয়নি। বিয়ের পর থেকেই আমার স্ত্রী ও তার মা-বোন বিভিন্নভাবে আমাদের অপমান করছে। আমাদের নামে নানা রকম মিথ্যা কথা বলছে। আমরা নতুন আত্মীয় ভেবে সবই মেনে নিয়েছি। এর মধ্যে আমার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে তিন-চার দিন ছিল। সেই সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। তাকে আমার মায়ের সঙ্গে থাকতে বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত তুলে সে আমার রুমে এসে থাকে। আমি ফোনে তাকে মায়ের রুমে থাকতে অনুরোধ করলে সে থাকবে বলে পরে আর থাকেনি।
গত ৯ জানুয়ারি আমরা জানতে পারি, মেয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যও সঠিক নয়। তারা আমাদের মিথ্যা বলেছে। এর পর থেকে আমার স্ত্রী তার মা-বাবার বাড়িতেই আছে। আমার বোনদের সে সহ্য করতে পারছে না। আমার বাবা নেই, মা অসুস্থ বলেই তখন দ্রুত বিয়ে করেছি। এখন তারা হুমকি দিচ্ছে, সংসার না করলে আমাদের নামে মামলা ও চাকুরিচ্যুত করবে। উল্লেখ্য যে আমরা চার ভাইবোন। এর মধ্যে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা। ওনাদের আচরণ পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। আইনিভাবে কী করতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যেই যে আপনি এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছেন, এটি খুব দুঃখজনক। মেয়েটি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আইনের চোখে এটি একটি অপরাধ।
এই অপরাধের জন্য আপনি চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করেন, তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।
আপনি জানিয়েছেন, আপনার স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সংসার না করলে আপনাদের নামে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে এবং চাকুরিচ্যুতির ভয় দেখাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।
দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি ও মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে।
এ ধরনের বেআইনি কাজ থেকে তাঁদের বিরত থাকতে বলুন। এরপরও এ ধরনের হুমকি দিলে বা একই আচরণ করলে এসব কথা উল্লেখ করে নিকটস্থ থানাকে অবহিত করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি বুঝে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনারা আপনাদের কর্মক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে পারেন।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA