উজিবুজি, সিডিসক্রেজি, এথেনারাই জয়ী
উজিবুজি, সিডিসক্রেজি, এথেনা, ব্লুক্লাউডেডগ্রে, মক্সি, তাজ—শুনতে কি একটু অদ্ভুত লাগছে? গেমিংয়ের জগতে রিমশা ইকবাল, সাবরিনা ইসলাম, জারিন নাওয়ার, নিশাত নিতু, এশরাত কবির, তাজরীন আলমরা কিন্তু এসব নামেই পরিচিত। দলীয়ভাবে তাঁদের আরও একটা পরিচয় আছে। তাঁরা টিম সেলেস্টিয়ালসের সদস্য। দেশের নারীদের জন্য আয়োজিত ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এই দল। পেয়েছে ৪০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করেছিল অ্যাঙ্গুলার ই-স্পোর্টস। ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব।
ই-স্পোর্টসজয়ী এই তরুণীরা একসময় আলাদাভাবে গেম খেলতেন। কেউ কাউন্টার-স্ট্রাইক: গ্লোবাল অফেনসিভ, কেউ ওয়ারফেস, কেউ রেইনবো সিক্স সিজ খেলায় হাত পাকিয়েছিলেন। গেমার হলেও দল বেঁধে খেলার কথা আগে সেভাবে ভাবেননি। ২০২০ সালের ২ জুন মুক্তি পায় ভ্যালোরেন্ট নামের ভিডিও গেম। মুক্তির পরপরই ব্যাপক সাড়া ফেলে। অনেকের মতো রিমশা, এশরাতরাও তখন ভ্যালোরেন্ট খেলতে শুরু করেন। বাংলাদেশি গেমিং প্ল্যাটফর্ম ডেথনোট ড্রিমিং থেকে যখন দলীয় ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলো, হন্যে হয়ে একেকজন সতীর্থ খুঁজতে শুরু করেন। সেই সূত্রেই তাঁদের পরিচয়।
দলের ভেতর বৈচিত্র্যটাও চোখে পড়ার মতো। রিমশা ও লেভেল পেরিয়েছেন, তাজরীন আলম এ লেভেল দিয়েছেন, সাবরিনা পড়ছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশে (আইইউবি), জারিন গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, আর নিশাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে পড়ছেন। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ই-স্পোর্টস টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু বড় ধরনের সাফল্য এল এই প্রথম। ডেথনোট ড্রিমিং আয়োজিত ভ্যালোরেন্ট টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছিলেন তাঁরা। নারী দিবস উপলক্ষে অ্যাঙ্গুলার ই-স্পোর্টস আয়োজিত বিশেষ টুর্নামেন্ট ও মার্সেনারিজ টুর্নামেন্টেও প্রথম রানার্সআপ হয়েছিলেন তাঁরা।
প্রথম দিকে তাঁরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন ভালো খেলার জন্য, স্রেফ মজার জন্য। দ্বিতীয় রানার্সআপ হওয়ার পর বুঝতে পারেন খেলার ধরন (প্লে-স্টাইল) ও নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে। এগুলো ঠিক হলেই সেরাদের সেরা হতে পারবেন। সে অনুযায়ী কাজে নেমে পড়েন।
১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বেসিসের মেলায় ই-স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশ থেকে ৮টি দল এতে অংশ নেয়। রিমশার নেতৃত্বে অংশ নেয় ‘টিম সেলেস্টিয়ালস’। নিজেদের সেরাটা দেওয়াই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। সেলেস্টিয়ালসের সদস্য সাবরিনা ইসলাম জানান, প্রথম তিনটি টুর্নামেন্টে সফল না হলেও তাঁরা হাল ছাড়েননি। দলের সবাই এক হয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করেছেন। সাবরিনা বলেন, ‘কোচ এবং দলনেতার সমর্থন ছিল সব সময়। সে কারণেই চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সহজ হয়েছে।’
পেশাজীবনের পাশাপাশি গেমিংটাও ধরে রাখতে চান এই গেমাররা। জাতীয় পর্যায়ে নিজেদের প্রমাণ করেছেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভালো করতে চান। তাঁদের প্রত্যাশা, শুধু ক্রিকেট-ফুটবলেই নয়; গেমিংয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা এগিয়ে যাবে। এশরাত কবির যোগ করেন, এভাবে যেন আরও টুর্নামেন্ট হয় এবং মেয়েরা যেন আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারে।