‘শিক্ষকদের পরামর্শ ক্যারিয়ারকে সম্পূর্ণ নতুন পথে নিয়ে গেছে’
প্রাক্তন শিক্ষার্থী বা অ্যালামনাইরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ‘বিজ্ঞাপন’। অ্যালামনাইরা যখন দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে পড়েন, ভালো কাজ করেন, তাঁরাই হয়ে ওঠেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গর্ব। যা অনুপ্রাণিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও। পড়ুন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মো. আকরাম উদ্দিন আহমেদের লেখা। তিনি বর্তমানে উইন্ডি গ্রুপের হিসাব ও অর্থ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন।
ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হব। কিন্তু এসএসসির পর ব্যবসায় শিক্ষায় মনোযোগ দিতে উৎসাহ দেয় পরিবার। এখন পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, সিদ্ধান্তটা বোধ হয় ভুল ছিল না।
এখন উইন্ডি গ্রুপে হিসাব ও অর্থ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি। ‘ওভেন গার্মেন্টস’ রপ্তানিতে সর্বোচ্চ অবদানের জন্য ২০২১-২২ সালে বাংলাদেশ সরকারের গোল্ড ট্রফি পায় আমার প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উইন্ডি গ্রুপ বছরে প্রায় ২২০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। এখানে কাজ করেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। আমাদের হিসাব ও অর্থ বিভাগে ৩২ জন পেশাদার সহকর্মীকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব আমার। পাশাপাশি স্টোর ও কমার্শিয়াল টিমের কাজও আছে। ২০২৩ সালে আমি ও আমার দল পেয়েছি ‘সেরা পারফর্মিং টিম’–এর স্বীকৃতি।
আজকের এ সাফল্যের জন্য আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। উত্তরা ইউনিভার্সিটি আমাকে সম্মানজনক এক পরিচিতি ও দক্ষতা-জ্ঞান দিয়েছে, যার মাধ্যমে একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরি শুরু করতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাদের পাঠ্যক্রম বেশ আধুনিক মনে হয়েছিল। ব্যবসা, হিসাব, অর্থনীতি, ফিন্যান্স, ব্যাংক ও বীমা, বিনিয়োগ, ট্যাক্স, স্ট্র্যাটেজি, গণিত, বিজ্ঞান, আইন, শিল্প, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, প্রশাসন, মানবসম্পদ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন—সবই আমাদের পড়তে হয়েছে। এ সবকিছুই আমার বর্তমান পেশায় কাজে লাগছে।
ব্যবসাজগতে দক্ষ একজন পেশাজীবী হতে চেয়েছিলাম। সেই চিন্তা থেকেই ফিন্যান্সকে মূল বিষয় হিসেবে নিই। কারণ বলা হয়, আধুনিক ব্যবসা–দুনিয়ায় ‘ফিন্যান্সই ব্যবসাকে নেতৃত্ব দেয়’। আমাদের কোর্সের কাঠামো, শিক্ষক-অধ্যাপকদের শেখানোর ধরন এবং মূল্যায়নের পদ্ধতি খুব ভালো লেগেছিল।
বিবিএ-এমবিএ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাকে প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিং কোর্স করার পরামর্শ দেন, যা আমার ক্যারিয়ারকে সম্পূর্ণ নতুন পথে নিয়ে গেছে। যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং এবং বাংলাদেশে আইসিএমএবির কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং কোর্সে ভর্তি হয়েছি, যেটা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক কিছু শিখেছি এসব কোর্সের মাধ্যমে।
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের পড়াশোনা, ইন্টার্নশিপ এবং ক্লাসওয়ার্ক আমার ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতা গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ক্লাসরুমে আমরা শুধু বইয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞানই অর্জন করিনি, বরং বিভিন্ন কেস স্টাডি, গ্রুপ প্রেজেন্টেশন ও সিমুলেশন এক্সারসাইজের মাধ্যমে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করেছি। এতে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, যৌক্তিক চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
ইন্টার্নশিপ ছিল আমার শেখার অভিজ্ঞতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অফিসের বাস্তব পরিবেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম, যা আমাকে করপোরেট সংস্কৃতি, সময় ব্যবস্থাপনা এবং টিমওয়ার্ক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে। একজন পেশাজীবী হিসেবে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছি।
ক্লাসওয়ার্ক বিশেষ করে গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনগুলো যোগাযোগদক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। সহপাঠীদের সঙ্গে দলগত কাজের মাধ্যমে সহমর্মিতা, সমস্যা সমাধানের কৌশল ও সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া টেকনিক্যাল স্কিল যেমন এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট ও গবেষণাপত্র নিয়ে কাজের দক্ষতাও বেড়েছে।
সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম আমাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ এবং পেশাদার ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ক্লাসরুমে শেয়ারবাজার, করপোরেট ফিন্যান্স, বাজেটিং, ইনভেস্টমেন্ট ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বাস্তবমুখী শিক্ষা পেয়েছি। বিভিন্ন কেস স্টাডি ও প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্লেষণী দক্ষতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে বৃত্তিও পেয়েছিলাম উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক, সহপাঠী, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ—সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের সহযোগিতায় আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি। আমার পরিবারের সদস্য ও কর্মস্থলের সকল সহকর্মীদেরও ধন্যবাদ।