মাইলির কনসার্টের সব টিকিট কেন বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছিল
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ডিজনির বিখ্যাত হ্যানা মন্টানা সিরিজে অভিনয় করেছিলেন মাইলি সাইরাস। এই চরিত্রের সুবাদে ১১ আগস্ট পেয়েছেন ডিজনি লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড। সবচেয়ে কম বয়সে এই পুরস্কার পাওয়ার রেকর্ড এখন মাইলির। কীভাবে একটি চরিত্র তাঁর জীবন বদলে দিল, পুরস্কার জয়ের পর মঞ্চে সে কথাই বলেছেন তিনি। পড়ুন তাঁর বক্তৃতার নির্বাচিত অংশের অনুবাদ।
শুরুতে ডিজনির কিংবদন্তি চরিত্রগুলো সম্পর্কে একটা গোপন কথা বলতে চাই। ডিজনির কিংবদন্তিরাও কিন্তু ভয় পায়। যেমনটা আমি এখন পাচ্ছি। এই ভয়ের সঙ্গে আমরা কোনোরকমে খাপ খাইয়ে নিই। আপনি যখন চেষ্টা করবেন, তখন পরাজয় বলে কিছু থাকবে না। চেষ্টা না করাটাই পরাজয়।
দুইটা বক্তৃতা লিখে এনেছিলাম। একটা বড়। ভেবেছিলাম সাহসে কুলালে এটা পড়ব। আরেকটা ছোট। ঠিক করেই রেখেছিলাম, ভয় লাগলে পড়ব দ্বিতীয়টা।
আপনাদের ধন্যবাদ। অন্য কিংবদন্তিরা যা বলে গেছেন, আমার বক্তব্যও তা-ই। এই সবই আপনাদের জন্য। ভক্তদের জন্য।
২০০৫ সালে কোম্পানিটাকে নতুন করে সাজানোর মিশনে নেমেছিল ডিজনি। সে জন্যই তাঁরা [ডিজনির সিইও] বব আইগার ও আমাকে নিয়োগ দেন। স্পষ্ট মনে আছে। কারণ, তখন হ্যানা মন্টানার অডিশন চলছিল।
আমি ন্যাশভিলে জন্মেছি, বড় হয়েছি। সেখান থেকেই অডিশনের টেপ পাঠিয়েছিলাম। ফিরতি বার্তায় তাঁরা জানিয়েছিলেন, আমি একটু বেশিই ছোট। চরিত্রটা আমার সঙ্গে ঠিক মানানসই নয়। এরপর প্রায় এক বছর পেরিয়েছে। হ্যানা মন্টানার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এমন সময় আবার কল এল। নির্মাতারা জানালেন, সিরিজের সব চরিত্রই বাছাই করা হয়ে গেছে। পাইলট এপিসোড (নতুন কোনো সিরিজের প্রথম পর্ব) বানানোর কাজও শেষ। তবু তাঁদের ঠিক মনমতো হচ্ছে না। অতএব তাঁরা চান, আমি যেন লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে অডিশন দিই। মা আমাকে খবরটা দিলেন। সঙ্গে এ-ও বললেন, আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলে আমাকে স্কুল ছেড়ে বন্ধুদের ছেড়ে চলে যেতে হবে।
অডিশনের জন্য কেনাকাটা করতে গেলাম। বিস্ময়করভাবে একটা টি-শার্টে চোখ আটকে গেল। যেখানে লেখা, ‘আই শুড হ্যাভ মাই ওউন টিভি শো (আমার নিজস্ব টিভি শো থাকা উচিত)।’ ব্যস, টি-শার্টটা নিয়ে নিলাম। পরলাম। আর ছুটলাম লস অ্যাঞ্জেলেসে। কয়েক দফা অডিশনের পর চরিত্রটা পেয়েও গেলাম।
ক্যালিফোর্নিয়া এসেছিলাম পাইলট এপিসোডের শুটিং করতে। লস অ্যাঞ্জেলেসকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সমুদ্রসৈকত, পামগাছ—সব মিলিয়ে দারুণ। কিন্তু শুটিংয়ের জায়গাটাই ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। চারদিকে উজ্জ্বল বাতি, ড্রেসিংরুম, সারি সারি কাপড় সাজানো, পরচুলা, অভিনয়, নাচ, স্বরের চর্চা…আহ! পাইলট এপিসোডের শুটিং শেষ করেই চলে গেলাম ন্যাশভিলে। কিন্তু তত দিনে অভিনয়জীবনের স্বাদ আমার পাওয়া হয়ে গেছে। ওই জীবনটা ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার ছিল না।
তাই যখন বলা হলো শোটা টিকে গেছে, মঞ্চে পা রাখার জন্য আর তর সইছিল না। কিন্তু হ্যানা মন্টানা তো একজন পপ স্টার। সে কনসার্টে গান গাইছে, এমন কিছু ফুটেজ দরকার ছিল। কিন্তু হ্যানা মন্টানা, তথা মাইলিকে তো কেউই তখন চেনে না।
অতএব গ্লেনডেল মলে একটা কনসার্ট আয়োজন করা হলো। টিকিটগুলো দিয়ে দেওয়া হলো বিনা মূল্যে। প্রথম যে গানটা গাইলাম, নাম ‘দিস ইজ দ্য লাইফ’। কেউ বুঝতে পারেনি, সোনালি পরচুলার আড়ালে একটা ছোট্ট মেয়ে অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মন থেকে নিজেকে হ্যানা মন্টানাই ভাবছিলাম। ভেবে গর্ব হচ্ছিল।
সেদিন থেকে সব বদলে গেল। একই সঙ্গে বলতে গেলে কিছুই বদলায়নি। আজও হ্যানা মন্টানাকে নিয়ে আমি গর্বিত, কারণ সে-ই মাইলিকে অনেকখানি গড়ে দিয়েছে। এই পুরস্কার হ্যানা ও তার ভক্তদের জন্য। তাঁদের জন্য, যাঁরা আমার স্বপ্নটা সত্যি করেছে। যদি সেই কিংবদন্তির ভাষায়ই বলতে চাই, ‘দিস ইজ দ্য লাইফ’।