কীভাবে বদভ্যাস বাদ দেবেন
সবারই কমবেশি কোনো না কোনো বদভ্যাস আছে, যেগুলো থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে চাই। হতে পারে সেটা নখ কামড়ানো, দেরিতে ঘুমানোর মতো ছোট ছোট বিষয় থেকে শুরু করে ধূমপান বা নেশাজাতীয় আসক্তির মতো খারাপ অভ্যাস। বদভ্যাস ছাড়ানোর আগে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার, এসব অভ্যাস আসলে কীভাবে কাজ করে।
অভ্যাসের প্রক্রিয়াটি সাধারণত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপ হচ্ছে সংকেত। এটি পাওয়ার পর অভ্যাসটি আপনার মধ্যে জাগ্রত হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে রুটিন। এর মধ্য দিয়ে আপনি আপনার অভ্যাসের কাজটি সম্পন্ন করবেন। তৃতীয় ধাপে আছে পুরস্কার। অভ্যাসটি সম্পন্ন করে যা আপনি পেয়ে থাকেন। এভাবে অভ্যাসের চক্রটি পুনরাবৃত্ত হতে থাকে।
সংকেত পেলে আমাদের অভ্যাসগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। আর দ্বিতীয় ধাপে রুটিনের সময় আমরা স্বয়ংক্রিয় মোডে চলে যাই। আমাদের মস্তিষ্ক তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়। এই অভ্যাসগুলো একজনের মধ্যে এতটাই গেঁথে যেতে পারে যে পুরস্কারটা ভালো না মন্দ, সেই বিচার করার ক্ষমতাও সে হারিয়ে ফেলে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের মিয়া বলেন, ‘বদভ্যাস দূর করার কিছু টেকনিক আছে। যেমন, অভ্যাসগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া। সেই সময়ে সু-অভ্যাসের চর্চা করা। বাজে অভ্যাসটি সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াটিকে জটিল করে তুলুন। বাজে অভ্যাসগুলোকে অনাকর্ষণীয় ও অস্পষ্ট করে তুলুন। খারাপ অভ্যাস যেন আপনাকে তৃপ্তি না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। খারাপ অভ্যাসের সংকেতগুলোকে ত্যাগ করুন।’
পাওয়ার অব হ্যাবিট বইয়ের লেখক চার্লস ডুহিগ নিজের একটি গল্পের মাধ্যমে এই অভ্যাসের চক্র থেকে বের হওয়ার একটি উপায় বাতলেছেন। প্রতিদিন বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে এই লেখকের ক্যানটিন থেকে বিস্কুট কেনার অভ্যাস ছিল। এখানে সংকেত হচ্ছে সময়। তবে এ ক্ষেত্রে পুরস্কারটি একটু জটিল। এখানে বিস্কুটের পুরস্কার অনেক ধরনের হতে পারে। হতে পারে এটি ক্ষুধা থেকে পরিত্রাণ, মিষ্টি কিছু খাওয়ার ইচ্ছা মেটানো, শক্তি বৃদ্ধি, কাজ থেকে চমৎকার একটি বিরতি কিংবা হতে পারে এটি সে সময় মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ।
এই অভ্যাস ভেঙে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন ডুহিগ। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি আবিষ্কার করেন, বিস্কুট কিনতে যাওয়ার ছুতায় আসলে তিনি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন। এই অভ্যাস দূর করতে তাই বিস্কুট কেনার পরিবর্তে ৩টা বাজার আগে–পরে ১০ মিনিট কথা বলার জন্য কাউকে খুঁজে বের করতেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সময়ের একই সংকেত ও একই পুরস্কার নিয়েও বিস্কুটের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসেন।
তাই মনস্তাত্ত্বিকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন, প্রথমে আপনার খারাপ অভ্যাসগুলো কখন শুরু হয়, সেটা খেয়াল করুন। ধরুন আপনার নখ কামড়ানোর অভ্যাস আছে, যা আপনাকে একধরনের শারীরিক উদ্দীপনা জোগায়। সেগুলো কখন হয়, লক্ষ রাখুন। তখন কি আপনি নার্ভাস বা বিরক্ত থাকেন? এ ক্ষেত্রে এই সময়গুলোতে সংকেত পাওয়ার আগেই অভ্যাসটা প্রতিরোধ করতে হবে। যেমন আপনার হাত মুখে যাওয়ার আগেই পকেটে ঢুকিয়ে ফেলুন। তারপর বিকল্প একটা কিছু খুঁজুন, যা দ্রুত শারীরিক উদ্দীপনা প্রদান করে। হতে পারে এটা হাত পকেটের ভরে আঙুলগুলো কচলানো বা পায়চারি। এটি একই সংকেত ব্যবহার করে, একই ধরনের পুরস্কার দিয়ে অভ্যাসটিকে বদলে দিতে পারে।
সূত্র: অ্যাসাপ সায়েন্স ও হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং