স্বর্গ্যের গান শুনেছেন?
পুরো নাম স্বর্গ্য তৌহিদ। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। বন্ধুরা তাঁকে ‘স্বর্গ্য’ নামেই চেনেন। তবে ক্যাম্পাসে সংগীতশিল্পী হিসেবেও স্বর্গ্যর সুনাম আছে। গানের সুবাদে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার’–এ সেরা ছয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলেও স্বর্গ্যর গান প্রচার হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি মৌলিক গান করেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মিউজিক কো–অর্ডিনেটর স্বর্গ্য। শৈশব, বেড়ে ওঠা, সংগীতে পথচলা, এমন নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।
স্বর্গ্য তৌহিদের জন্ম বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়, দাদাবাড়িতে। শৈশব কেটেছে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায়। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা। বাবা তৌহিদুল ইসলাম পেশায় শিক্ষক। তবে একসময় তিনি সংগীতশিক্ষক ছিলেন। বগুড়ার গাবতলীতে নব্বই দশকের শেষে ‘সপ্তরং’ নামে সংগীতের একটি বিদ্যালয়ও খুলেছিলেন। শিশু-কিশোরদের গান শেখাতেন। মা সুলতানা ইসলামেরও গানের প্রতি অনুরাগ ছিল। গাবতলীর মঞ্চে নানা অনুষ্ঠানে স্বর্গ্যর মা-বাবা দ্বৈতকণ্ঠে গান করতেন।
গাবতলী সরকারি কলেজ মাঠে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আড়াই বছর বয়সে স্বর্গ্যর প্রথম মঞ্চে ওঠা। আধো আধো বোলেই সেবার গেয়েছিলেন, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল...।’
একদম ছোট্টবেলা থেকে গান শেখা শুরু। বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করতেন। ক্লাসেও সব সময় ছিলেন ‘ফার্স্ট গার্ল’।
২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে জাতীয় শিশু কিশোর পুরস্কার প্রতিযোগিতায় নজরুল গীতি ও দেশের গানে রাজশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে। ২০১৬ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে স্বর্গ্যর ঠাঁই হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন পড়ছেন স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষে।
পড়াশোনার পাশাপাশি সংগীতচর্চা সমানতালে চালিয়ে গেছেন। ছায়ানট থেকে নজরুলসংগীতে প্রবেশ (চার বছর) ডিগ্রি নিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদে ২০২০-২১ সালে গানের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। হোক ক্যাম্পাসের বসন্ত উৎসব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা বড় কোনো আয়োজন, স্বর্গ্যকে মঞ্চে পাওয়া যাবে সব সময়।
গত ডিসেম্বরে স্বর্গ্য তৌহিদের একটি গান জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে রিলিজ হয়েছে। ‘তুমি কি লিখতে পারো’ শিরোনামের দেশের গানটি লিখেছেন ফেরদৌস হোসেন ভুঁইয়া, সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন মঈনুল ইসলাম খান।
দীর্ঘদিন ধরে গানের জগতে বিচরণ হলেও স্বর্গ্যর পরিচিতি নিজস্ব গণ্ডি ছড়িয়েছে মূলত আরটিভির রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার’–এ সেরা ছয়ে উঠে আসার পর। একই টিভি চ্যানেলের ‘বাংলার গায়েন’ ছাড়া বেশ কিছু রিয়েলিটি শোয়েও অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। স্বর্গ্য বলছিলেন, ‘শ্রদ্ধেয় শাহনাজ রহমতুল্লাহর দুটি গান গাওয়ার অনুভূতি কখনো ভুলব না। একটি পর্বে গেয়েছিলাম তাঁর কালজয়ী গান “খোলা জানালা, চেয়ে দেখি তুমি আসছ”। সঙ্গে পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন বিচারক ইবরার টিপু। শাহনাজ রহমতুল্লাহ তাঁকে ছেলের মতো স্নেহ করতেন। আমার গান শুনে তিনি আবেগে কেঁদে ফেলেন। বিচারকের আসনে বসা পড়শী আর প্রতীক হাসানও সেদিন কেঁদেছিলেন। আমার গাওয়া এই গানের ভিডিও ইউটিউবে প্রায় এক মিলিয়ন ভিউয়ে পৌঁছেছে। আরেকটি পর্বে “যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়” গানটি গেয়েও প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি।’
গান নিয়ে স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে স্বর্গ্য তৌহিদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি। ভালো চাকরি করার ইচ্ছা আছে। পাশাপাশি সুস্থ ধারার সংগীতচর্চা চালিয়ে যেতে চাই।’
স্বর্গ্য তৌহিদের গান শুনে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন ষাটের দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শওকত হায়াত খান। তিনি বলেন, ‘স্বর্গ্য খুব ভালো কণ্ঠশিল্পী। ওর কণ্ঠে অন্য রকম আবেদন আছে। প্রয়াত শাহনাজ রহমতুল্লাহর “যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়” গানটি ভীষণ দরদ দিয়ে গেয়েছে মেয়েটা। “তুমি কি লিখতে পারো” শিরোনামে ওর একটা মৌলিক গান বারবার শুনেছি। ওর সঙ্গে কথা বলে উৎসাহ দিয়েছি। সংগীতে মেয়েটা ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে বলে আমার বিশ্বাস।’