বুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা হচ্ছে তো?

গত বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন আদনান আহমেদ। বুয়েট ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য কী পরামর্শ দিলেন তিনি?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন আদনান আহমেদ।
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চমাধ্যমিকের সময়ে প্রস্তুতি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাসের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) সিলেবাস বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে উচ্চমাধ্যমিক থেকেই বুয়েটের প্রস্তুতি শুরু করতে হয়। কলেজের ওঠার পর থেকেই কেউ যদি বিষয়টি মাথায় রেখে পড়াশোনা করেন, নিঃসন্দেহে তিনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। কারণ, শুধু বুয়েট নয়, মেডিকেল কিংবা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসির পাঠ্যক্রমের বইগুলোই প্রস্তুতির মূল ভিত্তি। এই বইগুলো যত বেশি আয়ত্তে আনতে পারবেন, একাডেমিক ও ভর্তির প্রস্তুতি তত ভালো হবে।

মূল বইয়ের প্রতিটি বিষয়, ধারণা (কনসেপ্ট) ও অনুশীলনীর প্রশ্ন যেন ভালোভাবে (বেসিকসহ) শেষ করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যাঁরা এইচএসসির পড়ালেখার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান, তাঁরা চাইলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলের প্রশ্নব্যাংক পড়তে পারেন। এতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোচিং বা প্রকাশনীর বই পড়ে মৌলিক বিষয়ের (বেসিক) ভিতটা মজবুত করার সুযোগ তো আছেই৷ এযাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উৎসাহ ধরে রাখা। পরীক্ষায় খারাপ ফল আসতেই পারে, মন খারাপ করা যাবে না; বরং কোন কোন প্রশ্নে ভুল হয়েছে, তা খুঁজে বের করে চর্চা করতে হবে। কেউ চাইলে ভুল করা প্রশ্ন আলাদাভাবে নোট করতে পারেন, এতে দ্বিতীয়বার ভুল করার আশঙ্কা কমে যাবে।

ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রস্তুতি

এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসার আগপর্যন্ত সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং, একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণও। এ সময় বিভিন্ন কোচিংয়ের বই, প্রশ্নব্যাংক, রিসোর্সের ভিড়ে কোনটা পড়ব, কী পড়ব—ঠিক করাই শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। তাঁদের উদ্দেশে বলব, আগে নিজের অগ্রাধিকার ঠিক করুন। আপনি কী চান? অনেক শিক্ষার্থীর লক্ষ্য থাকে, কোনোমতে একটা আসন পেলেই চলবে। আবার অনেকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষস্থানে যেতে চান। দুই ধরনের শিক্ষার্থীর প্রস্তুতির মধ্যে পার্থক্য আছে।

আপনি যদি প্রথম ধরনের মধ্যে পড়েন, আপনার উচিত হবে আগের বছর যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন এসেছে, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া। সঙ্গে মূল বইয়ের গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে। মূলত পাঠ্যবই, প্রশ্নব্যাংক ও ক্লাসের বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলেই প্রস্তুতিটা হয়ে যাবে বলে মনে করি।

অন্যদিকে যাঁদের লক্ষ্য একটা ভালো অবস্থান, তাঁদের উচিত পাঠ্যবই, প্রশ্নব্যাংক, ক্লাসের পড়ার পাশাপাশি কোচিং থেকে যেসব রিসোর্স দেওয়া হয়, সেগুলো ভালোভাবে কাজে লাগানো। ক্লাস ও মূল বইয়ের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখা দরকার। অনেকে মনে করেন, খুব ভালো ফল করার জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (আইআইটি) প্রশ্ন সমাধান করা বাধ্যতামূলক। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। এগুলোর সমাধান না করেও ভালো করার নজির বহু আছে। আবার বাড়তি প্রস্তুতি নিতে গিয়ে মূল পড়ার ক্ষতি হয়েছে, এমন নজিরও কম নয়।

আরও পড়ুন

এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কোচিংয়ে অনলাইন ও অফলাইন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়। এ প্রসঙ্গে বলব, পরীক্ষার সময় যতটা চাপমুক্ত থাকা যায়, ততই ভালো। অনেক সময় প্রত্যাশার তুলনায় কম নম্বর আসবে। এটা স্বাভাবিক, হতাশ হওয়া যাবে না। ছোটখাটো ভুলত্রুটি এড়ানোর জন্য চর্চার কোনো বিকল্প নেই। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

পরীক্ষার সময়ের কৌশল

ভর্তি পরীক্ষার সময়ের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো সময় ব্যবস্থাপনা। এর জন্য যথোপযুক্ত কৌশল জানা থাকা দরকার। আগের বছরের প্রশ্নগুলো দেখলে বোঝা যায়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ধরনের প্রশ্ন হয়। যেমন গত তিন থেকে চার বছর বুয়েটে গাণিতিক অংশ তুলনামূলকভাবে কঠিন (অ্যাডভান্সড) হচ্ছে। আবার রসায়ন সে তুলনায় অনেক সহজ ছিল। এসব ঘাঁটাঘাঁটি করে কৌশল সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ। কোন বিষয় কত গভীরে গিয়ে পড়তে হবে, এভাবেই তা বোঝা যাবে। পরীক্ষার হলে প্রতিটি বিষয়ের জন্য সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে বিষয় সবচেয়ে দ্রুত শেষ করা যাবে, তা আগে উত্তর করা শ্রেয়। যাঁদের ছোটখাটো ভুল বেশি হয়, তাঁরা চাইলে রিভিশনের জন্য আলাদা সময় রাখতে পারেন। অবশ্য রিভিশনের সময় পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। সবশেষে সবার জন্য শুভকামনা। বুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা হচ্ছে তো?